Sunday, December 05, 2010

পৌর নির্বাচনে প্রয়োজনে সেনা: সাখাওয়াত

পৌরসভা নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু করতে 'পরিস্থিতি দেখে' প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। 'সম্ভাব্য প্রার্থীদের' আগাম প্রচারণামূলক সব ধরনের পোস্টার, ব্যানার না সরালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন দেখা দিলে স্বল্প সময়ের নোটিশে সেনা মোতায়েন করা হবে। "আমরা পরিস্থিতি দেখছি। প্রয়োজন হলে সেনা নামাবো, সীমান্ত এলাকায় থাকবে বিডিআর।"
তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু করার বিষয়ে কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। একবার নয়� প্রয়োজন হলে কমিশন এক পৌরসভায় একাধিকবার নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

কোনো দল বা জোট পৌর নির্বাচনে কাউকে সমর্থন জানাতে আপত্তি না থাকলেও দলীয় পরিচয়ে কেউ নির্বাচনী প্রচারণা চলাতে পারবে না বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।গত বৃহস্পতিবার সিইসি এটিএম শামসুল হুদা সাত বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি চার দিনে এ নির্বাচন হবে।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সূচির আগে নির্বাচনী প্রচারণা না করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। রোববারের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার, দেয়াল লিখন বা ব্যানার অপসারণ না করলে তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন এই নির্বাচন কমিশনার।এম সাখাওয়াত বলেন, "সোমবার থেকে নির্বাচন কর্মকর্তারা দেওয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানারের স্থির চিত্র বা ভিডিওভ চিত্র ধারণ করে রাখবেন। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মৌখিক নির্দেশনা হয়েছে। এক দু'দিনের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হবে। আর এসব তথ্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের সামনে হাজির করা হবে।"

এক-এগারোর চেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে ___সাকা চৌধুরী

কটা দুর্যোগ সামনে আছে। এটা রাজনীতির জন্য সতর্কসংকেত। নাইন-ইলেভেন, ওয়ান-ইলেভেন হবে না। নতুন তারিখে হবে। আমি সমাজের বাইরের কেউ না। ঘূর্ণিঝড় এলে ক্ষতি কেমন হবে তা কেউ বলতে পারে না। এতটুকু বলতে পারি, এই দুর্যোগ আগের চেয়ে ভয়াবহ হবে।’
আজ রোববার দুটি মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করতে এসে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আজকের (রোববার) পত্রিকায় দেখলাম, ডিজিটাল বিচার হবে। বিচারালয় ডিজিটাল হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সরকারের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। এই সরকারের বৈশিষ্ট্য বিরোধীদের ওপর আক্রমণ করা। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এর পরিবর্তন হবে নিশ্চয়তা দিতে পারি না।’
বিএনপির নেতা আরও বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন থেকে মনে হয় না আমরা শিক্ষা নিয়েছি। কেন নেইনি অনেক অজুহাত দেখানো যায়। অজুহাত আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ তৃতীয় শক্তির ক্ষমতায় আসার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘উনি কর্নেল। কত রকম ধ্বনি তিনি শুনতে পান। আমরা সিভিলিয়ান (বেসামরিক লোক)। আমরা কি এসব ধ্বনি শুনতে পারি?’
এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘গণপদত্যাগের কালচার আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। ১৯৯৪ সালে আমাকে তত্কালীন বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমিও পদত্যাগ করেছিলাম। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না।’ এ বিষয়ে সুরঞ্জিত্ সেনগুপ্তের অভিমতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘সংবিধান, সংসদের বিধি বা কার্যপ্রণালিতে গণপদত্যাগের কোনো বিধান নেই। সংসদে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পদত্যাগের বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের সামনে সব সুযোগ খোলা রয়েছে। কী করব, তা সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে।’

দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ সাত লাখ টন: সংসদে খাদ্যমন্ত্রী

খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে বর্তমানে খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমাণ ৭ লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে গম ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮০ টন। আজ রোববার জাতীয় সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
ফরিদা আখতারের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেট অনুসারে সরকারের নিজস্ব অর্থে তিন লাখ টন চাল ও সাড়ে সাত লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান, জাতীয় খাদ্যনীতি অনুযায়ী সরকারি খাদ্য মজুদের সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নয় লাখ টন চাল ও সাড়ে আট লাখ টন গম আমদানির কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তর থেকে নয় লাখ টন চাল ও এক লাখ টন গম সংগ্রহ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে কাবিখায় চার লাখ টন এবং টিআর খাতে চার লাখ টন খাদ্যশস্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশে সিন্ডিকেট নেই: বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান দাবি করেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সিন্ডিকেট বলে কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। সাংসদ নুরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। তিনি জানান, ব্যবসার নামে কেউ যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিমসংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক আছে।
একই প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় যেভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, এ বছর সেভাবে বাড়েনি। বাংলাদেশে উত্পাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, টিসিবির ডিলারদের সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৭৮ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তা ৮৫ টাকা করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারা দেশে টিসিবির ১ হাজার ৯০৭ জন ডিলার আছেন। প্রত্যেক উপজেলায় ইতিমধ্যে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষিত বেকারের হিসাব নেই: সরকারের কাছে দেশের শিক্ষিত বেকারের কোন হিসাব নেই। সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানান।
সাংসদ মোশতাক আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৫-০৬-এর হিসাব অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২ দশমিক ১ মিলিয়ন। তবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে পৃথক কোনো হিসাব নেই।

পুলিশের হেফাজতে কিশোরের মৃত্যু

৬ বছরের কিশোরকে পিটিয়ে মৃত্যুমুখে পাঠানোর অভিযোগ করেছেন তার মা। কিশোরটি পুলিশের হেফাজতে ছিল, তাকে তিন দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল এবং রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর রাতেই তার মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও অসুস্থ হয়ে পড়ার পুরো সময়টিতে কিশোরটি পুলিশের হেফাজতেই ছিল। সুতরাং এ মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই ভুলে যান, কেউ তাঁদের হেফাজতে থাকা মানে আইনের হেফাজতেই থাকা। সুতরাং তাঁদের হাতে কারও মৃত্যু ঘটা বা মৃত্যুর কারণ ঘটা কেবল হত্যাকাণ্ডই নয়, আইনেরও চরম অপব্যবহার। তাই ২৫ থেকে ২৯ নভেম্বর—সাগরের জীবনের শেষ পাঁচ দিনের ঘটনাবলিতে পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক। পুলিশের দাবি, ছিনতাইকারী ‘সন্দেহে’ ওয়েল্ডিং কারখানার কর্মচারী সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৫ তারিখ রাতে কাজ থেকে ফেরার সময়। মায়ের অভিযোগ, পর দিন যাত্রাবাড়ী থানার দুজন এসআই ৫০ হাজার টাকা না দিলে সাগরকে হত্যা মামলার আসামি করার হুমকি দেন। ছিনতাই মামলার আসামি হিসেবে আদালতে সাগরের তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড শেষে ২৯ তারিখে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে দিনই অসুস্থ অবস্থায়তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবংপরদিন সন্ধ্যায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে দুই দিন পরিচয়-অজ্ঞাত হিসেবে সাগরের লাশ পড়ে থাকলেও যাত্রাবাড়ী থানা বিষয়টি তার পরিবারের কাছে গোপন রাখে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিকে নির্যাতন বেআইনি। দ্বিতীয়ত, মৃত্যুর বিষয়টি চেপে যাওয়া হলো কেন? তৃতীয়ত, ছিঁচকে অপরাধজাতীয় সোর্সের ওপর ভরসা করে কাউকে নির্যাতন করা কেমন ধারার তদন্ত? চতুর্থত, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ ‘অপরাধী’ যদি হয়ও, তার প্রতি পুলিশের আচরণ ভিন্ন হওয়া উচিত ছিল কি না? পঞ্চমত, অপ্রাপ্তবয়স্ককে কীভাবে আদালত রিমান্ডে পাঠালেন?
শ্রমজীবীদের জীবনকে পুলিশ কেমন তুচ্ছ ভাবে এ ঘটনা তার প্রমাণ। প্রতিবছর পুলিশি হেফাজতে এ রকম অনেক মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে আসে। এসব অপমৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নির্বিকার। আশা করি, সাগরের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। রিমান্ডে নেওয়ার বেলায়আরও সতর্কতাও জরুরি। আইন প্রয়োগকারীদের ক্ষমতার সীমাও তাই বেঁধে দেওয়া মানবাধিকারের স্বার্থেই প্রয়োজন।

পৌর নির্বাচনের তফসিল

নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার ২৬৯টি পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচন হবে যথাক্রমে ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
পৌর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আচরণবিধিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে ব্যাংক হিসাব খোলা এবং এর মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করা প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই জরুরি। প্রার্থীদের সাত বিষয়ে তথ্য দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু প্রচারণার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যেমন জনসভা না করে ঘরোয়া ও পথসভা করা, দুপুর দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাইকিং করা, পোস্টারে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের নাম ও মুদ্রণের তারিখ রাখা এবং প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো রকম প্রচার না চালানো ইত্যাদি। পৌরসভা নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহারের অসুস্থ প্রবণতা বন্ধে এসব পদক্ষেপ সহায়ক হবে। অনেক সময় প্রার্থীদের উসকানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতিও নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে। আশা করা যায়, এবারে প্রচারকালে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা না করে ভোটারদের কাছে নিজ নিজ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।
পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন রাজনৈতিক পরিচয়ে না হলেও যাঁরা এর প্রার্থী হন, তাঁদের বেশির ভাগ কোনো না কোনো দলের নেতা-কর্মী। সে কারণে শেষ পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক চরিত্র পায়। অতএব, নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকাও কম নয়।
আমরা আশা করব, প্রার্থীসহ সব পক্ষ নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবে। পৌরসভা বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির বিতর্ক টেনে না এনে এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনার প্রতিই মনোযোগী হওয়া উচিত। রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা ও সততাকেই ভোটারেরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সর্বোপরি নির্বাচনের সময় যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে এবং ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই।
দলীয় সরকারের অধীনেও যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে তারা তা দেখিয়ে দিয়েছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই স্বজন

দেখা, শোনা, বোঝা কিংবা চলায় মানুষের ক্ষমতার হেরফের হতেই পারে। একজন হয়তো বেশি বুদ্ধিমান আরেকজন তেমন নয়। আবার কারো বা খুবই কম হতে পারে। কেউ দেখতে না-পারাটা কি তাঁর অপরাধ? কিংবা দুর্ঘটনায় পড়ে কেউ যদি চলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেন, তাঁকেও করুণার পাত্র ভাবতে হবে? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের অনেকেই জেনে অথবা না জেনে হোক তেমনটি করেন। আবার অতি উৎসাহেও কেউ কেউ ভুল আচরণ করেন প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে। অনেকেই ভুলে যান জন্ম-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটিও আমারই মতো হতে পারতেন। কিংবা আমিও হতে পারতাম তাঁরই মতো প্রতিবন্ধী_জন্মের আগে কিংবা পরে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে পারে; কিন্তু তাঁকে নিয়ে হাস্যরস করাটা নিত্যন্ত অন্যায়। বরং আমরা তাঁদের সহযোগিতা করতে পারি। এটা অজ্ঞতা হোক বা আর যা-ই হোক, এ ধরনের আচরণ আমাদের প্রতিবন্ধী স্বজনদের জন্য ক্ষতিরই কারণ হয়। অস্বাভাবিকতাকে আমলে এনে ব্যক্তির প্রতি অনাচার করার মতো নির্বুদ্ধিতা যে আমাদের অমানবিকতার দোষে দুষ্ট করে, সেদিকটিও খেয়াল করি না কখনো। এটা তো আমাদের সামগ্রিক চিন্তাকেই ফুটিয়ে তোলে।
তার পরও কিছুটা আলো দেখায়_প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রে এমনি করে গোটা দুনিয়ায় একীভূত চিন্তার কার্যকারণ হয়েছে বলে। ১৯৯০-৯১ সালে বাংলাদেশে জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতির প্রথম খসড়া রচিত হয়। কিন্তু সেই নীতি বাস্তবায়নে যাদের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি, সেই সরকার ও আমলাতন্ত্র যেন নিজেরাই প্রতিবন্ধী হয়ে যায় এই ক্ষেত্রে। শম্বুকগতিতে চলে পদক্ষেপ গ্রহণ। ধীর চিন্তায় প্রতিবন্ধীর জীবন সুখময় করে দেবে_এমন চিন্তা করা না গেলেও আজও আমাদের সেই অভিযোগই বহন করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে প্রকাশিত কালের কণ্ঠের একটি সংবাদ আমাদের সেই ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করে। ২৮ বছর ধরে বিছানায় শুয়ে দিন যাচ্ছে মিরসরাইয়ের রহিমার। তাঁর আরো দুই প্রতিবন্ধী বোনও একইভাবে বিছানায় থেকে থেকে একসময় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তাঁদের জন্য সরকারের সহযোগিতা কতটা আছে? মাত্র ৩০০ টাকা অনুদান! তাও সবার ভাগ্যে জুটে না। ওই সংবাদেই জানা গেছে, একমাত্র মিরসরাই উপজেলায়ই অপেক্ষমাণ আরো ১৮০ জন। এমনই অপেক্ষমাণ প্রতিবন্ধী সারা দেশে কত হবে? কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তার পরও আমাদের আশা আছে, প্রতিবন্ধী তিনি যেভাবেই হোন না কেন, তাঁকে আমাদের কাছে টানতে হবে। সরকারকেও প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যয় বাড়াতে বাজেটের তলদেশ থেকে একটু ওপরে নজর দিতে হবে।

পৌর নির্বাচন

বশেষে পৌরসভা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। দেশের ৩১০টি পৌরসভার মধ্যে ২৬৯টিতে নির্বাচন হবে আগামী মাসে। মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হবে। পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকবে না। প্রার্থীরা দলনিরপেক্ষ প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবেন। যদিও এটা ঠিক যে প্রার্থীদের পেছনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদ থাকবেই। নির্বাচন কমিশন পৌরসভা নির্বাচনে চার বিভাগকে চারটি জোনে ভাগ করেছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চার দিনে বিভাগভিত্তিক এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রথমে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭৬টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে ১২ জানুয়ারি। ১৩ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৫৪টি পৌরসভায়। ঢাকা বিভাগের ৭০টি পৌরসভায় ১৭ জানুয়ারি এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৬৯টি পৌরসভায় ১৮ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। বাকি ৪১টি পৌরসভার মধ্যে ২৪টিতে মামলা, সীমানা নির্ধারণ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। আর ১৭টির মেয়াদ এখনো উত্তীর্ণ হয়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালের মে মাসে দেশে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য নতুন কিছু বিধিবিধান রয়েছে। প্রার্থীদের অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং মনোনয়নপত্রে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর জানাতে হবে। এটা না জানালে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে না। নির্বাচনে প্রার্থীর যত আয়-ব্যয় তা ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই করতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সাত ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা জমা দিতে হবে। জামানতের পরিমাণ মেয়র প্রার্থীদের জন্য ভোটার অনুপাতে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। কাউন্সিলরদের পাঁচ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে ব্যাংক ড্রাফট অথবা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে। প্রচারণায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই বিধিবিধান থাকছে। পোস্টার যে প্রেসে ছাপা হবে, সেই প্রেসের নাম-ঠিকানাসহ কত পোস্টার ছাপানো হচ্ছে, তা জানাতে হবে। প্রচার শুরু করা যাবে প্রতীক বরাদ্দের পর, তার আগে নয়। মেয়র প্রার্থীরা ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন না। এ কাজ করবেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না। নির্বাচনকে সহজ করার অনেক কাজই এগিয়ে রাখা হয়েছে। ভোটারদের দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, যদিও ভোটের সঙ্গে এ-জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও নির্বাচন কমিশন সেই তথ্য, ব্যাংক থেকে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া যে সাতটি বিধান আরোপ করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কম। অন্যদিকে ব্যক্তিগত সাত তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় তথ্য গোপন করার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হয়। জনসভা ও নির্বাচনী মিছিল নিষিদ্ধ করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে_এমনটি ধারণা করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের কথাও জানিয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও উত্তেজনা-অস্থিরতার বিষয়েও নির্বাচন কমিশন সজাগ। যে ২৪টি পৌরসভায় মামলা, সীমানা নির্ধারণ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না, সেগুলোর জটিলতা দূর করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করতে হবে। অনেক সময় নিজেদের কার্যকাল দীর্ঘ করার জন্যও অনেকে মামলার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে_এটাই প্রত্যাশা।

অটোরিকশা ট্যাঙ্কিক্যাব বিড়ম্বনা

মহানগরবাসীকে নিত্য নানা রকম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এসব বিষয় জনস্বার্থ ও জনজীবনে মারাত্মকভাবে আঘাত করলেও এর বিপরীতে দায়িত্বশীলদের নির্বিকারত্ব সংগত কারণেই ব্যাপক প্রশ্নবোধক। রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক ও ট্যাঙ্কি্যাব চালকদের যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপকৌশল দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা কোনো রকম নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে যাত্রীদের ওপর চড়াও হয়। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা এখন সংকটে রূপ নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে_তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা নিয়মনীতির মধ্যে চলার, দেখভালের দায়দায়িত্ব যাদের, তারা উদাসীন কিংবা মৌন কেন? অটোরিকশা ও মিশুক চালকদের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী হয়রানি করে ট্যাঙ্কি্যাব চালকরা। রাজধানীতে চলাচলকারী বেশির ভাগ ট্যাঙ্কি্যাব চলাচলের অনুপযোগী কিংবা ত্রুটিপূর্ণ হলেও থেমে নেই চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা অথবা দৌরাত্ম্য।
৪ ডিসেম্বর সহযোগী একটি দৈনিকে 'ট্যাঙ্কি্যাবের স্বেচ্ছাচারিতায় অসহায় নগরবাসী' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যাত্রী হয়রানি ও চালকদের দৌরা@ে@@@্যর চিত্র পুনর্বার ফুটে উঠেছে। মিটারের কার্যকারিতা তো কবেই হারিয়ে গেছে, পাশাপাশি যাত্রীদের নয়_চালকদের মর্জিই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহানগরীতে যাত্রী ভোগান্তি অবসানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে অটোরিকশা, মিশুক ও ট্যাঙ্কি্যাব চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে গৃহীত এ ব্যবস্থার আসল লক্ষ্য ভেস্তে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, চালকদের একটা অংশ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েছে। সমাজবিরোধী কিংবা জননিরাপত্তা হরণকারী অপশক্তির সঙ্গে এই একাংশের সখ্যের কারণে যাত্রীসাধারণ ভুগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে, যেগুলোর কোনো প্রতিকার হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিটি বিভাগ এ ব্যাপারে নির্বিকার। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? ইলেকট্র্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ হয়রানির চিত্র তুলে ধরে বারবার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও বিষয়টি থেকে যাচ্ছে প্রতিকারহীন। বাড়তি ভাড়া কেন চালকরা আদায় করছে, এর কোনো কৈফিয়তও তারা দিতে নারাজ। এ অবস্থায় নিকট অতীতে সরকার প্রথম কিলোমিটার ২৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়ে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' বসিয়েছে। তখনই মালিকরা এসব পরিবহনের জমাও বাড়িয়ে দেন। এমতাবস্থায় যাত্রী হয়রানি আরো বেড়ে যায়। যাত্রীরা জিম্মি। যাত্রীস্বার্থ দেখার কি কেউ নেই? যাওয়া না যাওয়া কিংবা ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের হরহামেশাই ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট এত বড় একটি বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতা, নির্বিকারত্ব অবশ্যই প্রশ্নবোধক। এ অবস্থা চলতে পারে না। এর আশু সুরাহা দরকার। মিটার ব্যবহার, যাত্রীদের চাহিদামাফিক স্থানে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করাসহ এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান জরুরি। যাত্রী হয়রানির বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে আর কালক্ষেপণ না করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে। পাবলিক বাস সার্ভিসগুলোর ক্ষেত্রেও স্বেচ্ছাচারিতার চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। নগর পরিবহনের ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য বিরাজ করছে, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না।

সরকারি কর্মচারীদের রেশন

সাধারণ মানুষের মধ্যে রেশন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও এ রেশন প্রথা আর চালু হয়নি। হালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মাঝেমধ্যেই গরিব মানুষের জীবনমান ঠিক রাখার প্রয়োজনে তাঁদের একটি অংশের জন্য রেশন প্রদানের আলোচনা-পর্যালোচনা চলে আসছিল। সেই সুবাদেই বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় আসার আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষকে রেশনে খাদ্য সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছিল। নির্বাচনী ইশতেহারের ১৬.২ ধারায় স্পষ্টত উল্লেখ ছিল, 'গার্মেন্ট শ্রমিকসহ সব শ্রমিক, হতদরিদ্র ও গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় রেশনিং প্রথা চালু করা হবে।' তাদের এ ইশতেহার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, মোটামুটি অসচ্ছল কিংবা নিম্ন আয়ের সব মানুষই রেশন পাওয়ার যোগ্যতা লাভ করবে।
তাই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থর্মন্ত্রী অর্থসংস্থানের ব্যাপারে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা ধোপে টিকবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরবর্র্তী সময়ে মোটামুটি দ্রব্যমূল্য ক্রমহ্রাসমান ছিল। সেই সময় হয়তো রেশন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রশ্নটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু বছর ঘুরতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হতদরিদ্র মানুষের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও সরকার গরিব মানুষের জন্য খোলা বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার মাধ্যমে তাঁদের সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু এতে সব শ্রেণীর গরিব মানুষের উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। সে যুক্তিতে রেশন প্রথা চালু করার যুক্তি আছে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, রেশন নিয়ে কালোবাজারি শ্রেণীর উদ্ভব, সরকারের অর্থ অপচয় ইত্যাদি বিষয় পীড়াদায়ক হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এ রেশন প্রথা পুনরায় চালু করলেই কি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে? সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারকে খাদ্যের মতো আরো অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়। সে জন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়ানো এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিতে না পারলে শুধু খাদ্য খাতে ভর্তুকি দিয়ে গরিব মানুষের ভাগ্য ফেরানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারটি অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। দুনিয়ার সব দেশেই দ্রব্যমূল্য পরিবর্তিত হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ যাতে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সমর্থ হয় সে জন্য তাদের আয় বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এর অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বার্ষিক বেতন পুনর্বিন্যাস করা। বেতনের পুনর্বিন্যাস যথাযথ করতে পারলে কর্মচারীদের বর্তমান দুরবস্থা অনেকাংশে কমে আসবে। আর এটা করা গেলে বিশেষ বিবেচনা কিংবা নজরদারির প্রয়োজন হবে না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের ভিন্ন অবস্থান যে কারণে তা-ও বিবেচ্য অবশ্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারীরা যদি রেশন পান তাহলে তাঁদের বাইরে থাকা বেসরকারি কর্মচারী ও সমাজের অপরাপর গরিব মানুষের কী হবে? এখনো কেউ কেউ রেশন সুবিধা পেলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কিন্তু রেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে সরকারকে মনে রাখতে হবে, সুবিধা-অসুবিধা যেন নাগরিকের মধ্যে সমবণ্টন হয়। সরকারি কর্মচারীরা এমনিতেও কম বেতনে চাকরি কমরন, তাঁদের দিকে যেমন নজর দেওয়া দরকার তেমনি নিম্ন আয়ের অন্য পেশাজীবীদের দিকেও সরকারকেই তাকাতে হবে।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র

নেক কিছু বলার থাকলেও প্রথম পরিচয় তিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র। বৃহৎ বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। ভারত ভাগের আগে হিন্দু নেতাদের সহযোগে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অখণ্ড স্বাধীন বাংলা নামে একটি ডমিনিয়ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যরা ভারতের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের প্রথা হিসেবে উর্দুতে কথা বলতেন। কিন্তু প্রথা ভেঙেছিলেন সোহরাওয়ার্দী। নিজের উদ্যোগে বাংলা ভাষা শিখে বাংলার চর্চা করেছিলেন। বাকস্বাধীনতা আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এই নেতা তাঁরই সরকারের সময় পত্রিকাকে সরকারের কঠোর সমালোচনার সুযোগ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সরকারের ত্রুটি না থাকলে সংবাদপত্র বলার সুযোগ পায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। এরপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যুক্তরাজ্যে অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানেই আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে ১৯২১ সালে কলকাতায় এসে আইন পেশায় যোগ দেন। অন্য সব রাজনীতিবিদের মতো তিনিও এড়াতে পারেননি কঠোর সমালোচনা। তবুও সব সমালোচনার ঊধর্ে্ব মানুষ ও দলের জন্য তাঁর অবদান অসামান্য। রাজনীতি শুরু করেন ১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যোগ দিয়ে। পরের বছরই কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম অনুষ্ঠানে ছিল তাঁর অগ্রণী ভূমিকা। তবে প্রথম দিকের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। যেমন মুসলমানদের ওপর বেশ ভালো রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও ১৯৩৬ সালের আগ পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের সঙ্গে জড়াননি। এ বছরের প্রথম দিকে ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন, শেষের দিকে দলটি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সঙ্গে এক হয়ে গেলে তিনি বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আবার ১৯৪৭ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় এজেন্ট আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন। দেশ ভাগ হওয়ার পর তিনি বহু দিন পাকিস্তানে যাননি, বাস করেছেন ভারতেই। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর আবুল হাশেমের নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মওলানা ভাসানী এবং এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। এরপর হন আইনমন্ত্রী এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর সময় উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রবিরোধিতার অজুহাতে পাকিস্তানি সরকার গ্রেপ্তার করে তাঁকে। এ বছরই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরের বছর ১৯৬৩ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন গণতন্ত্রের পুরুষ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

স্পিকারের বিশেষ বার্তা, তবু সংসদে যাচ্ছে না বিএনপি

নবম জাতীয় সংসদের শীতকালীন (সপ্তম) অধিবেশন আজ রবিবার শুরু হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না। অধিবেশন শুরুর আগেই বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও স্পিকার আবদুল হামিদ বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে নিতে নতুন করে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে ডেকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নবম জাতীয় সংসদের এ অধিবেশন হবে সংক্ষিপ্ত।
এক অধিবেশনের সমাপ্তির পর থেকে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকেই এ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই অষ্টম অধিবেশন ডাকা হবে। আজ বিকেল ৪টায় অধিবেশন শুরুর এক ঘণ্টা আগে জাতীয় সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকেই অধিবেশন কদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট।
বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরে সংসদ অধিবেশন বর্জন করে আসছে বিভিন্ন দাবিতে। এসব দাবির সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে সেনানিবাসের বাড়ির ইস্যু। গত ২২ নভেম্বর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদ অধিবেশন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে অগ্রিম পদত্যাগপত্র নেওয়ারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলেও সংসদ অধিবেশন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি।
এ অবস্থায় স্পিকার আবদুল হামিদ গতকাল তাঁর অফিসে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। দুপুর ২টা ৩৫ থেকে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তাঁরা একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্পিকার বিরোধী দলকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে একটি বার্তা পাঠান জয়নুল আবদিন ফারুকের মাধ্যমে। শর্ত দেন, খালেদা জিয়ার কাছে এ বার্তা পেঁৗছানোর আগে কোনোভাবেই প্রচারমাধ্যমসহ কারো কাছে ফাঁস করা যাবে না। জয়নুল আবদিন ফারুকও স্পিকারের কাছে সে ওয়াদা করে এসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পিকার বিশেষ বার্তায় বলেছেন, বিরোধী দল সংসদে এলে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এমনকি সেনানিবাসের বাড়ি এবং বিরোধীদলীয় নেতার ছেলেদের ইস্যু নিয়েও আলোচনা করতে পারবে।
জানা গেছে, একান্ত বৈঠকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ ফারুক সংসদ অধিবেশনে যোগদানের শর্ত হিসেবে আগের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে সর্বশেষ সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টিও যোগ করেন। স্পিকার তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকের পর স্পিকার আবদুল হামিদ কালের কণ্ঠকে জানান, বিরোধী দলকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সংসদে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার কাছে 'ইন্টারনাল কিছু মেসেজ' দিয়েছেন তিনি। স্পিকার বিরোধী দলের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বলেন, এটি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের 'টাগ অব ওয়ার'। স্পিকার হিসেবে তাঁর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি সে ক্ষেত্রে অসহায়। স্পিকার জানান, দুই পক্ষকে একসঙ্গে বসানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি সে কাজটি করতে পারেন। তা না হলে মীমাংসার সুযোগ থাকবে না।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট বৈঠক হয়েছে। তবে তাঁরা একমত হয়েছেন যে বিষয়টি বিরোধীদলীয় নেতাকে জানানোর আগে কেউ জানবে না।
বৈঠকের পর জয়নুল আবদিন ফারুক সংসদে না ফেরার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে নাটকের অবসানসহ তাঁদের উত্থাপিত দাবিগুলো মানা না হলে এ অধিবেশনেও তাঁরা ফিরবেন না।
ফারুক বলেন, 'স্পিকারের কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। স্পিকারও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো বিরোধীদলীয় নেতাকে জানাব।' তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিএনপির সংসদে না ফেরার সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর পরও এ ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে আজ প্রেস ব্রিফিং করা হবে। তিনি বলেন, মিরাকল কিছু না ঘটলে সংসদে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
অধিবেশনে না গিয়েও জাতীয় সংসদ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, সুযোগ-সুবিধা নেওয়া তাঁদের অধিকার। এটা আইন করেও বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের এ সম্পর্কিত সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে আমাদের নৈতিকতা শিখতে হবে না। তাঁরা নিজেরাই তো কথা দিয়ে কথা রাখেন না।'
জানা গেছে, গত ২২ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিরোধী দলের চিফ হুইপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৯ নভেম্বর তিনি প্রেস ব্রিফিং করে স্পিকারের সংসদে ফেরার এক আহ্বান নাকচ করে দেন। সেই সঙ্গে স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদের ছয়টি অধিবেশন এর আগে শেষ হয়েছে, যার কার্যদিবস ছিল ১৬৯ দিন। বিএনপি এই ১৬৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৪৬ দিন অংশ নিয়েছে। টানা অংশ নিয়েছে ৪৪ কার্যদিবস। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অংশ নিয়েছেন পাঁচ কার্যদিবস। তবে বিএনপিদলীয় সদস্যরা নিয়মিত সংসদীয় কমিটিগুলোর বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে পুরনো সাতটি বিল জমা রয়েছে। নতুন জমা পড়েছে আরো চারটি। তবে বিভিন্ন বিধিতে নোটিশ জমার পরিমাণ খুবই কম। বিরোধী দলের অংশ না নেওয়া এবং অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হওয়ায় নোটিশ ও প্রশ্ন কম জমা পড়েছে।
ডিএমপির বিশেষ আদেশ : এদিকে নবম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে শেরে বাংলানগর ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রা নিষিদ্ধ করে বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের নিজ ক্ষমতাবলে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, অধিবেশন চলাকালে ওই এলাকা দিয়ে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকদ্রব্য এবং ক্ষতিকর ও দূষণীয় কিছু বহন করা যাবে না। এলাকাগুলো হচ্ছে : মহাখালী ক্রসিং থেকে বাংলামোটর, সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ার থেকে গ্রীনরোডের সংযোগস্থল হয়ে ফার্মগেট, ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর রোড থেকে শ্যামলী মোড়, রোকেয়া সরণির সংযোগস্থল থেকে বিজয় সরণি এবং ইন্দিরা রোড থেকে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম প্রান্ত। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার গলিপথ।

বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতেই সংসদ অধিবেশন শুরু

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে আজ রোববার বিকেল সোয়া চারটায় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদের এটি সপ্তম অধিবেশন। সংসদের চলতি অধিবেশন আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। নবম জাতীয় সংসদের এটি হবে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন। আজ বিকেলে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন ও শোকপ্রস্তাব পাঠ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি দলের অধিকাংশ সাংসদ এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদে না থাকায় অধিবেশন কক্ষের বাঁ-পাশ ছিল ফাঁকা।
স্পিকার আবদুল হামিদ অধিবেশনের শুরুতেই সবাইকে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে ফেরার আহ্বান জানান তিনি। স্পিকার বলেন, ‘রাজনীতিতে নীতিগত ভিন্নতা আছে বলেই আমরা ভিন্ন দল করে থাকি। কিন্তু সব রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনকল্যাণ। দেশবাসী আশা করে, সব রাজনৈতিক দল জনস্বার্থে কাজ করবে।’
প্রসঙ্গত, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সর্বশেষ গত ২ জুন সংসদে যোগ দিয়েছিল।
সভাপতিমণ্ডলী মনোয়নয়ন: অধিবেশনের শুরুতে চলতি অধিবেশনের সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করা হয়। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন, ইমরান আহমেদ, আতিউর রহমান আতিক, মুজিবুর রহমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও মাহাবুব আরা গিনি। স্পিকার আবদুল হামিদ সভাপতিমণ্ডলীর নাম প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দলকে সংসদে ফেরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে সংসদে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে তাঁর সাম্প্রতিক রাশিয়া-বেলজিয়াম ও জাপান সফর সম্পর্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বড় করে না দেখতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে জনগণকে কষ্ট দেবেন না। দেশের সম্পদ নষ্ট করবেন না।’
শেখ হাসিনা বিরোধী দল বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে সব বিষয়ে আপনারা সংসদে এসে যা খুশি বলুন, আপনাদের কেউ বাধা দেবে না।’ ইউএনবি/বাসস।

উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ে ২১৮২ নথি by মেহেদী হাসান

য়েবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের যে আড়াই লাখ নথি ফাঁস করার মিশনে নেমেছে, তার মধ্যে দুই হাজার ১৮২টি বাংলাদেশবিষয়ক। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত উইকিলিকস তার ওয়েবসাইটে ৬৮৩টি নথি প্রকাশ করেছে। বাকিগুলো গুরুত্ব বুঝে পর্যায়ক্রমে আগামী কয়েক মাসে প্রকাশ করা হবে বলে উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ১৯৬৬ সাল থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেশটির ২৭৪টি দূতাবাসের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া নথি ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
তবে উল্লেখযোগ্য নথিগুলোর উৎস দেখানোর জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখচিত্রে (গ্রাফ) ৪৫টি দূতাবাস স্থান পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৩৭ নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
উইকিলিকস সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য নথির মধ্যে আট হাজার ৩২০টি চীনবিষয়ক, সাত হাজার ৯৫টি আফগানিস্তানবিষয়ক, পাঁচ হাজার ৮৭টি ভারতবিষয়ক এবং চার হাজার ৭৭৫টি পাকিস্তানবিষয়ক। গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রকাশিত নথির চারটিতে বাংলাদেশের নাম এসেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি প্যারিসের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে এবং বাকি দুটি ইসলামাবাদের দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো। ইসলামাবাদের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাঠানো নথিতে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার আস্তানা থাকতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। প্যারিসের দূতাবাস থেকে পাঠানো নথিতে ২০০৬ সালের সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবেদনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মরক্কো থেকে আসা কমপক্ষে ২০ জন ইমামকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা এতে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ২০০৬ সালে ফ্রান্স থেকে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নথিতে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশে ডিএনএ পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো নথিতে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের ব্যাপারে জাতিসংঘ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত ফাঁস হওয়া এমন সাতটি নথি রয়েছে যেগুলোর অনুলিপি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এসেছে। এগুলো হলো শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বিষয়ে 'শ্রীলঙ্কা ওয়ার ক্রাইম অ্যাকাউন্টিবিলিটি : দ্য তামিল', সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ইস্যুতে পাকিস্তান সরকারকে চাপে রাখার বিষয়ে 'টেরর ফিন্যান্স : এমবাসি প্রেসেস গভর্নমেন্ট অব পাকিস্তান অন ইউএন
১২৬৭', ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার না করতে আমেরিকান সিনেটর জন ম্যাককেইনের কাছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের অনুরোধ বিষয়ে 'মোশাররফ টেলস ম্যাককেইন : ডোন্ট পুল আউট ফ্রম ইরাক', সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল স্কুমেকার এবং দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বৈঠক বিষয়ে 'প্রেসিডেন্ট মোশাররফ ব্রিফস জেনারেল স্কুমেকার অ্যান্ড', আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি রিচার্ড বাউচারের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বৈঠক প্রসঙ্গে 'মোশাররফ টেলস বাউচার অ্যাবাউট পাকিস্তানস প্ল্যান ফর', যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি সভার স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বৈঠক বিষয়ে 'প্রেসিডেন্ট মোশাররফ মিটস স্পিকার পেলোসি' এবং ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার আস্তানা থাকতে পারে বলে ধারণা পোষণ বিষয়ে 'প্রিজার্ভিং ইনফরমেশন শেয়ারিং'।

যা পড়ছি যা লিখছি by হায়াৎ মামুদ

ড়াশোনা ছাড়া আর তো কিছু করতে শিখিনি। বন্ধুদের আমন্ত্রণে পানের দাওয়াতে মাঝেমধ্যে যাই। তবে বয়স বাড়লে যোগাযোগটা কমেই যায়। ঢাকা শহরে যখন-তখন বেরোনো যায় না। হাসান আজিজুল হকের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা বই বেরোচ্ছে। উন্মোচিত হাসান। এই বইটি আমি সম্পাদনা করছি। আমাদের দেশে তো প্রকৃত সম্পাদনা হয় না বললেই চলে। আমাদের দেশে সম্পাদনার যথার্থ কৌশল অবলম্বন না করেই বেশির ভাগ সম্পাদনাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি সম্পাদনার ক্ষেত্রে আমি যথাযথ নিয়মের দিকটি লক্ষ রেখেছি।
সম্প্রতি যে বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখেছি, সেগুলো হলো রফিক আজাদের 'অন্তরঙ্গ দীর্ঘশ্বাস', ওয়াসি আহমেদের 'ত্রিসীমানা', জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের 'সময় ভোলে না কিছু', মোহাম্মদ সাদিকের গবেষণাগ্রন্থ 'সিলেটের নাগরী হরফ : ফকিরি ধারার ফসল এবং জাকির তালুকদারের 'মুসলমানমঙ্গল'।
আমার লেখার ব্যাপারটা হলো যে আমি নিজেকে লেখক মনে করি না, মানি না। অল্প বয়সে লিখতাম, উদ্দীপনা থাকত; এখন এই বয়সে তা নেই। সমরেশ বসুর মতো বড় লেখকের এখন কোনো বই প্রকাশিত হয় না। পড়তে গিয়ে, কাজ করতে গিয়ে কিছু কিছু লিখছি। বিভিন্ন সম্পাদনাগ্রন্থের ভূমিকা লিখছি। সোজা কথা, আমার কিছু এখন লিখতে ইচ্ছে করে না। আমার পড়তেই ভালো লাগে। সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। তলস্তয়ের জীবনীগ্রন্থ 'লিয়েফ তলস্তয়' নামে ১৯৯১ সালে আমার একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল একাডেমী প্রেস থেকে । এবার তা পুনর্মুদ্রণের আশা করি। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের জীবনী নিয়ে কাজ করছি।

বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য by যতীন সরকার

৯৮৭ সালের আগস্টে আমার 'বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' বইটি বেরোয় ইউপিএল থেকে। এর আগে বছর চারেক ধরে বইটি আমি রচনা করি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার। এশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াজুড়ে সমাজতন্ত্রের প্রসার। কিন্তু আমাদের দেশের সে সময়কার কর্তৃত্বশীল শক্তি সমাজতন্ত্রকে 'বিদেশি মতবাদ' আখ্যা দিয়ে সমাজতান্ত্রিক ভাবনার বিরুদ্ধাচরণ করে চলেছে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদি সংবিধানটি রচিত হয়েছিল সমাজতন্ত্রকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ঘোষণা করে।
আমি দীর্ঘকাল ধরেই সমাজতন্ত্রের অনুরাগী। মার্কস এঙ্গেলস্ যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উদ্গাতা, তারও আগে সমাজতন্ত্রবিষয়ক ধারণার উদ্ভব ঘটেছিল। প্রাক-মার্কসীয় সেই সমাজতন্ত্রকে ইউটোপিয়ান বা কল্পসর্গ সমাজতন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সমাজতন্ত্রবিষয়ক বিভিন্ন লেখা পড়তে পড়তে আমার ধারণা হয়েছিল, আমাদের দেশেও সমাজতন্ত্রের ঐতিহ্য বিদ্যমান। এ সময়ই আমার হাতে আসে 'চিন্মোহন সেহানবীশ' রচিত 'রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী' বইটি। এ বইয়ের 'পৃষ্ঠপট' নামীয় উপক্রমণিকামূলক প্রবন্ধটি আমার ভাবনাকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। মাত্র ১৯ পৃষ্ঠার পরিসরে রচিত এই কৌতূহলোদ্দীপক প্রবন্ধে শ্রী সেহানবীশ উনিশ শতকীয় বাঙালি মনীষীদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সে শতকের অনেক আপাত তুচ্ছ অথচ গুরুত্বপূর্ণ খবরও পরিবেশন করেন। এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি পড়েই আমি 'বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' বইটি লিখতে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হই।
'রাজা রামমোহন রায় ও ব্রাহ্মসমাজ', 'বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শেখ আবদুল লতিফ', 'স্বামী বিবেকানন্দ', 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর', 'কাজী নজরুল ইসলাম', 'ভাষাচার্য শহীদুল্লাহ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ', 'পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ'_এই সাতটি প্রবন্ধে আমি উনিশ ও বিশ শতকের বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যের স্বরূপ সন্ধান করি। এই প্রবন্ধগুলো লিখতে লিখতেই আমার মনে অন্যতর ভাবনার উদ্রেক ঘটে। সেই ভাবনারই প্রকাশ ঘটাই 'বাঙালীর লৌকিক ঐতিহ্যে সমাজতান্ত্রিক উপাদান' শীর্ষক প্রবন্ধে। আমার ধারণা, এর আগে এ বিষয়টি নিয়ে কেউই আলোচনা করেননি।