Sunday, December 05, 2010

স্পিকারের বিশেষ বার্তা, তবু সংসদে যাচ্ছে না বিএনপি

নবম জাতীয় সংসদের শীতকালীন (সপ্তম) অধিবেশন আজ রবিবার শুরু হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না। অধিবেশন শুরুর আগেই বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও স্পিকার আবদুল হামিদ বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে নিতে নতুন করে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে ডেকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নবম জাতীয় সংসদের এ অধিবেশন হবে সংক্ষিপ্ত।
এক অধিবেশনের সমাপ্তির পর থেকে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকেই এ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই অষ্টম অধিবেশন ডাকা হবে। আজ বিকেল ৪টায় অধিবেশন শুরুর এক ঘণ্টা আগে জাতীয় সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকেই অধিবেশন কদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট।
বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরে সংসদ অধিবেশন বর্জন করে আসছে বিভিন্ন দাবিতে। এসব দাবির সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে সেনানিবাসের বাড়ির ইস্যু। গত ২২ নভেম্বর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদ অধিবেশন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে অগ্রিম পদত্যাগপত্র নেওয়ারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলেও সংসদ অধিবেশন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি।
এ অবস্থায় স্পিকার আবদুল হামিদ গতকাল তাঁর অফিসে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। দুপুর ২টা ৩৫ থেকে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তাঁরা একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্পিকার বিরোধী দলকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে একটি বার্তা পাঠান জয়নুল আবদিন ফারুকের মাধ্যমে। শর্ত দেন, খালেদা জিয়ার কাছে এ বার্তা পেঁৗছানোর আগে কোনোভাবেই প্রচারমাধ্যমসহ কারো কাছে ফাঁস করা যাবে না। জয়নুল আবদিন ফারুকও স্পিকারের কাছে সে ওয়াদা করে এসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পিকার বিশেষ বার্তায় বলেছেন, বিরোধী দল সংসদে এলে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এমনকি সেনানিবাসের বাড়ি এবং বিরোধীদলীয় নেতার ছেলেদের ইস্যু নিয়েও আলোচনা করতে পারবে।
জানা গেছে, একান্ত বৈঠকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ ফারুক সংসদ অধিবেশনে যোগদানের শর্ত হিসেবে আগের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে সর্বশেষ সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টিও যোগ করেন। স্পিকার তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকের পর স্পিকার আবদুল হামিদ কালের কণ্ঠকে জানান, বিরোধী দলকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সংসদে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার কাছে 'ইন্টারনাল কিছু মেসেজ' দিয়েছেন তিনি। স্পিকার বিরোধী দলের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বলেন, এটি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের 'টাগ অব ওয়ার'। স্পিকার হিসেবে তাঁর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি সে ক্ষেত্রে অসহায়। স্পিকার জানান, দুই পক্ষকে একসঙ্গে বসানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি সে কাজটি করতে পারেন। তা না হলে মীমাংসার সুযোগ থাকবে না।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট বৈঠক হয়েছে। তবে তাঁরা একমত হয়েছেন যে বিষয়টি বিরোধীদলীয় নেতাকে জানানোর আগে কেউ জানবে না।
বৈঠকের পর জয়নুল আবদিন ফারুক সংসদে না ফেরার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে নাটকের অবসানসহ তাঁদের উত্থাপিত দাবিগুলো মানা না হলে এ অধিবেশনেও তাঁরা ফিরবেন না।
ফারুক বলেন, 'স্পিকারের কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। স্পিকারও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো বিরোধীদলীয় নেতাকে জানাব।' তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিএনপির সংসদে না ফেরার সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর পরও এ ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে আজ প্রেস ব্রিফিং করা হবে। তিনি বলেন, মিরাকল কিছু না ঘটলে সংসদে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
অধিবেশনে না গিয়েও জাতীয় সংসদ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, সুযোগ-সুবিধা নেওয়া তাঁদের অধিকার। এটা আইন করেও বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের এ সম্পর্কিত সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে আমাদের নৈতিকতা শিখতে হবে না। তাঁরা নিজেরাই তো কথা দিয়ে কথা রাখেন না।'
জানা গেছে, গত ২২ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিরোধী দলের চিফ হুইপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৯ নভেম্বর তিনি প্রেস ব্রিফিং করে স্পিকারের সংসদে ফেরার এক আহ্বান নাকচ করে দেন। সেই সঙ্গে স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদের ছয়টি অধিবেশন এর আগে শেষ হয়েছে, যার কার্যদিবস ছিল ১৬৯ দিন। বিএনপি এই ১৬৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৪৬ দিন অংশ নিয়েছে। টানা অংশ নিয়েছে ৪৪ কার্যদিবস। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া অংশ নিয়েছেন পাঁচ কার্যদিবস। তবে বিএনপিদলীয় সদস্যরা নিয়মিত সংসদীয় কমিটিগুলোর বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে পুরনো সাতটি বিল জমা রয়েছে। নতুন জমা পড়েছে আরো চারটি। তবে বিভিন্ন বিধিতে নোটিশ জমার পরিমাণ খুবই কম। বিরোধী দলের অংশ না নেওয়া এবং অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হওয়ায় নোটিশ ও প্রশ্ন কম জমা পড়েছে।
ডিএমপির বিশেষ আদেশ : এদিকে নবম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে শেরে বাংলানগর ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রা নিষিদ্ধ করে বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের নিজ ক্ষমতাবলে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, অধিবেশন চলাকালে ওই এলাকা দিয়ে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকদ্রব্য এবং ক্ষতিকর ও দূষণীয় কিছু বহন করা যাবে না। এলাকাগুলো হচ্ছে : মহাখালী ক্রসিং থেকে বাংলামোটর, সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ার থেকে গ্রীনরোডের সংযোগস্থল হয়ে ফার্মগেট, ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর রোড থেকে শ্যামলী মোড়, রোকেয়া সরণির সংযোগস্থল থেকে বিজয় সরণি এবং ইন্দিরা রোড থেকে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম প্রান্ত। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার গলিপথ।

No comments:

Post a Comment