Sunday, December 05, 2010

সরকারি কর্মচারীদের রেশন

সাধারণ মানুষের মধ্যে রেশন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও এ রেশন প্রথা আর চালু হয়নি। হালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মাঝেমধ্যেই গরিব মানুষের জীবনমান ঠিক রাখার প্রয়োজনে তাঁদের একটি অংশের জন্য রেশন প্রদানের আলোচনা-পর্যালোচনা চলে আসছিল। সেই সুবাদেই বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় আসার আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষকে রেশনে খাদ্য সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছিল। নির্বাচনী ইশতেহারের ১৬.২ ধারায় স্পষ্টত উল্লেখ ছিল, 'গার্মেন্ট শ্রমিকসহ সব শ্রমিক, হতদরিদ্র ও গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় রেশনিং প্রথা চালু করা হবে।' তাদের এ ইশতেহার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, মোটামুটি অসচ্ছল কিংবা নিম্ন আয়ের সব মানুষই রেশন পাওয়ার যোগ্যতা লাভ করবে।
তাই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থর্মন্ত্রী অর্থসংস্থানের ব্যাপারে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা ধোপে টিকবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরবর্র্তী সময়ে মোটামুটি দ্রব্যমূল্য ক্রমহ্রাসমান ছিল। সেই সময় হয়তো রেশন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রশ্নটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু বছর ঘুরতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হতদরিদ্র মানুষের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও সরকার গরিব মানুষের জন্য খোলা বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার মাধ্যমে তাঁদের সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু এতে সব শ্রেণীর গরিব মানুষের উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। সে যুক্তিতে রেশন প্রথা চালু করার যুক্তি আছে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, রেশন নিয়ে কালোবাজারি শ্রেণীর উদ্ভব, সরকারের অর্থ অপচয় ইত্যাদি বিষয় পীড়াদায়ক হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এ রেশন প্রথা পুনরায় চালু করলেই কি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে? সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারকে খাদ্যের মতো আরো অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়। সে জন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়ানো এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিতে না পারলে শুধু খাদ্য খাতে ভর্তুকি দিয়ে গরিব মানুষের ভাগ্য ফেরানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারটি অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। দুনিয়ার সব দেশেই দ্রব্যমূল্য পরিবর্তিত হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ যাতে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সমর্থ হয় সে জন্য তাদের আয় বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এর অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বার্ষিক বেতন পুনর্বিন্যাস করা। বেতনের পুনর্বিন্যাস যথাযথ করতে পারলে কর্মচারীদের বর্তমান দুরবস্থা অনেকাংশে কমে আসবে। আর এটা করা গেলে বিশেষ বিবেচনা কিংবা নজরদারির প্রয়োজন হবে না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের ভিন্ন অবস্থান যে কারণে তা-ও বিবেচ্য অবশ্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারীরা যদি রেশন পান তাহলে তাঁদের বাইরে থাকা বেসরকারি কর্মচারী ও সমাজের অপরাপর গরিব মানুষের কী হবে? এখনো কেউ কেউ রেশন সুবিধা পেলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কিন্তু রেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে সরকারকে মনে রাখতে হবে, সুবিধা-অসুবিধা যেন নাগরিকের মধ্যে সমবণ্টন হয়। সরকারি কর্মচারীরা এমনিতেও কম বেতনে চাকরি কমরন, তাঁদের দিকে যেমন নজর দেওয়া দরকার তেমনি নিম্ন আয়ের অন্য পেশাজীবীদের দিকেও সরকারকেই তাকাতে হবে।

No comments:

Post a Comment