Sunday, December 05, 2010

পৌর নির্বাচনের তফসিল

নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার ২৬৯টি পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচন হবে যথাক্রমে ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
পৌর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আচরণবিধিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে ব্যাংক হিসাব খোলা এবং এর মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করা প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই জরুরি। প্রার্থীদের সাত বিষয়ে তথ্য দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু প্রচারণার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যেমন জনসভা না করে ঘরোয়া ও পথসভা করা, দুপুর দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাইকিং করা, পোস্টারে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের নাম ও মুদ্রণের তারিখ রাখা এবং প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো রকম প্রচার না চালানো ইত্যাদি। পৌরসভা নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহারের অসুস্থ প্রবণতা বন্ধে এসব পদক্ষেপ সহায়ক হবে। অনেক সময় প্রার্থীদের উসকানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতিও নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে। আশা করা যায়, এবারে প্রচারকালে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা না করে ভোটারদের কাছে নিজ নিজ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।
পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন রাজনৈতিক পরিচয়ে না হলেও যাঁরা এর প্রার্থী হন, তাঁদের বেশির ভাগ কোনো না কোনো দলের নেতা-কর্মী। সে কারণে শেষ পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক চরিত্র পায়। অতএব, নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকাও কম নয়।
আমরা আশা করব, প্রার্থীসহ সব পক্ষ নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবে। পৌরসভা বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির বিতর্ক টেনে না এনে এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনার প্রতিই মনোযোগী হওয়া উচিত। রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা ও সততাকেই ভোটারেরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সর্বোপরি নির্বাচনের সময় যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে এবং ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই।
দলীয় সরকারের অধীনেও যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে তারা তা দেখিয়ে দিয়েছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments:

Post a Comment