Sunday, December 05, 2010

পুলিশের হেফাজতে কিশোরের মৃত্যু

৬ বছরের কিশোরকে পিটিয়ে মৃত্যুমুখে পাঠানোর অভিযোগ করেছেন তার মা। কিশোরটি পুলিশের হেফাজতে ছিল, তাকে তিন দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল এবং রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর রাতেই তার মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও অসুস্থ হয়ে পড়ার পুরো সময়টিতে কিশোরটি পুলিশের হেফাজতেই ছিল। সুতরাং এ মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই ভুলে যান, কেউ তাঁদের হেফাজতে থাকা মানে আইনের হেফাজতেই থাকা। সুতরাং তাঁদের হাতে কারও মৃত্যু ঘটা বা মৃত্যুর কারণ ঘটা কেবল হত্যাকাণ্ডই নয়, আইনেরও চরম অপব্যবহার। তাই ২৫ থেকে ২৯ নভেম্বর—সাগরের জীবনের শেষ পাঁচ দিনের ঘটনাবলিতে পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক। পুলিশের দাবি, ছিনতাইকারী ‘সন্দেহে’ ওয়েল্ডিং কারখানার কর্মচারী সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৫ তারিখ রাতে কাজ থেকে ফেরার সময়। মায়ের অভিযোগ, পর দিন যাত্রাবাড়ী থানার দুজন এসআই ৫০ হাজার টাকা না দিলে সাগরকে হত্যা মামলার আসামি করার হুমকি দেন। ছিনতাই মামলার আসামি হিসেবে আদালতে সাগরের তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড শেষে ২৯ তারিখে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে দিনই অসুস্থ অবস্থায়তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবংপরদিন সন্ধ্যায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে দুই দিন পরিচয়-অজ্ঞাত হিসেবে সাগরের লাশ পড়ে থাকলেও যাত্রাবাড়ী থানা বিষয়টি তার পরিবারের কাছে গোপন রাখে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিকে নির্যাতন বেআইনি। দ্বিতীয়ত, মৃত্যুর বিষয়টি চেপে যাওয়া হলো কেন? তৃতীয়ত, ছিঁচকে অপরাধজাতীয় সোর্সের ওপর ভরসা করে কাউকে নির্যাতন করা কেমন ধারার তদন্ত? চতুর্থত, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ ‘অপরাধী’ যদি হয়ও, তার প্রতি পুলিশের আচরণ ভিন্ন হওয়া উচিত ছিল কি না? পঞ্চমত, অপ্রাপ্তবয়স্ককে কীভাবে আদালত রিমান্ডে পাঠালেন?
শ্রমজীবীদের জীবনকে পুলিশ কেমন তুচ্ছ ভাবে এ ঘটনা তার প্রমাণ। প্রতিবছর পুলিশি হেফাজতে এ রকম অনেক মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে আসে। এসব অপমৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নির্বিকার। আশা করি, সাগরের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। রিমান্ডে নেওয়ার বেলায়আরও সতর্কতাও জরুরি। আইন প্রয়োগকারীদের ক্ষমতার সীমাও তাই বেঁধে দেওয়া মানবাধিকারের স্বার্থেই প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment