Sunday, December 05, 2010

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র

নেক কিছু বলার থাকলেও প্রথম পরিচয় তিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র। বৃহৎ বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। ভারত ভাগের আগে হিন্দু নেতাদের সহযোগে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অখণ্ড স্বাধীন বাংলা নামে একটি ডমিনিয়ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যরা ভারতের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের প্রথা হিসেবে উর্দুতে কথা বলতেন। কিন্তু প্রথা ভেঙেছিলেন সোহরাওয়ার্দী। নিজের উদ্যোগে বাংলা ভাষা শিখে বাংলার চর্চা করেছিলেন। বাকস্বাধীনতা আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এই নেতা তাঁরই সরকারের সময় পত্রিকাকে সরকারের কঠোর সমালোচনার সুযোগ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সরকারের ত্রুটি না থাকলে সংবাদপত্র বলার সুযোগ পায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। এরপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যুক্তরাজ্যে অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানেই আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে ১৯২১ সালে কলকাতায় এসে আইন পেশায় যোগ দেন। অন্য সব রাজনীতিবিদের মতো তিনিও এড়াতে পারেননি কঠোর সমালোচনা। তবুও সব সমালোচনার ঊধর্ে্ব মানুষ ও দলের জন্য তাঁর অবদান অসামান্য। রাজনীতি শুরু করেন ১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যোগ দিয়ে। পরের বছরই কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম অনুষ্ঠানে ছিল তাঁর অগ্রণী ভূমিকা। তবে প্রথম দিকের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। যেমন মুসলমানদের ওপর বেশ ভালো রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও ১৯৩৬ সালের আগ পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের সঙ্গে জড়াননি। এ বছরের প্রথম দিকে ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন, শেষের দিকে দলটি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সঙ্গে এক হয়ে গেলে তিনি বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আবার ১৯৪৭ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় এজেন্ট আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন। দেশ ভাগ হওয়ার পর তিনি বহু দিন পাকিস্তানে যাননি, বাস করেছেন ভারতেই। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর আবুল হাশেমের নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মওলানা ভাসানী এবং এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। এরপর হন আইনমন্ত্রী এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর সময় উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রবিরোধিতার অজুহাতে পাকিস্তানি সরকার গ্রেপ্তার করে তাঁকে। এ বছরই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরের বছর ১৯৬৩ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন গণতন্ত্রের পুরুষ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

No comments:

Post a Comment