Sunday, December 05, 2010

বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য by যতীন সরকার

৯৮৭ সালের আগস্টে আমার 'বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' বইটি বেরোয় ইউপিএল থেকে। এর আগে বছর চারেক ধরে বইটি আমি রচনা করি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার। এশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াজুড়ে সমাজতন্ত্রের প্রসার। কিন্তু আমাদের দেশের সে সময়কার কর্তৃত্বশীল শক্তি সমাজতন্ত্রকে 'বিদেশি মতবাদ' আখ্যা দিয়ে সমাজতান্ত্রিক ভাবনার বিরুদ্ধাচরণ করে চলেছে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদি সংবিধানটি রচিত হয়েছিল সমাজতন্ত্রকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ঘোষণা করে।
আমি দীর্ঘকাল ধরেই সমাজতন্ত্রের অনুরাগী। মার্কস এঙ্গেলস্ যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উদ্গাতা, তারও আগে সমাজতন্ত্রবিষয়ক ধারণার উদ্ভব ঘটেছিল। প্রাক-মার্কসীয় সেই সমাজতন্ত্রকে ইউটোপিয়ান বা কল্পসর্গ সমাজতন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সমাজতন্ত্রবিষয়ক বিভিন্ন লেখা পড়তে পড়তে আমার ধারণা হয়েছিল, আমাদের দেশেও সমাজতন্ত্রের ঐতিহ্য বিদ্যমান। এ সময়ই আমার হাতে আসে 'চিন্মোহন সেহানবীশ' রচিত 'রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী' বইটি। এ বইয়ের 'পৃষ্ঠপট' নামীয় উপক্রমণিকামূলক প্রবন্ধটি আমার ভাবনাকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। মাত্র ১৯ পৃষ্ঠার পরিসরে রচিত এই কৌতূহলোদ্দীপক প্রবন্ধে শ্রী সেহানবীশ উনিশ শতকীয় বাঙালি মনীষীদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সে শতকের অনেক আপাত তুচ্ছ অথচ গুরুত্বপূর্ণ খবরও পরিবেশন করেন। এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি পড়েই আমি 'বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য' বইটি লিখতে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হই।
'রাজা রামমোহন রায় ও ব্রাহ্মসমাজ', 'বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শেখ আবদুল লতিফ', 'স্বামী বিবেকানন্দ', 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর', 'কাজী নজরুল ইসলাম', 'ভাষাচার্য শহীদুল্লাহ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ', 'পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ'_এই সাতটি প্রবন্ধে আমি উনিশ ও বিশ শতকের বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যের স্বরূপ সন্ধান করি। এই প্রবন্ধগুলো লিখতে লিখতেই আমার মনে অন্যতর ভাবনার উদ্রেক ঘটে। সেই ভাবনারই প্রকাশ ঘটাই 'বাঙালীর লৌকিক ঐতিহ্যে সমাজতান্ত্রিক উপাদান' শীর্ষক প্রবন্ধে। আমার ধারণা, এর আগে এ বিষয়টি নিয়ে কেউই আলোচনা করেননি।

No comments:

Post a Comment