Friday, December 10, 2010

পুঁজিবাজারে অস্থিরতা

বেশ কিছুদিন ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার পর গত তিন দিনে দেশের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটে। সোমবার শুরু হয়ে মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর ৮৫ শতাংশের দরপতন হয়। বুধবারও তা অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা অস্থির হয়ে ওঠেন এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ অবরোধসহ ভাঙচুর-অগি্নসংযোগে নেমে পড়েন। আপাতদৃষ্টিতে এ দরপতনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, গত সোমবার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) দেশের দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত দেয় যে বিও হিসাবে জমা দেওয়া চেকের টাকা নগদ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না এবং মঙ্গলবার প্রচলিত নেটিং বন্ধ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।

এসব সিদ্ধান্তের পরপরই শেয়ারবাজারে ভয়াবহ তারল্য দেখা দেয়। উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ আইনে এ নির্দেশনাগুলো আগেই ছিল, কিন্তু এত দিন তা যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। শেয়ারবাজারে নানা কারণে তারল্য দেখা দিতে পারে, দরপতন ঘটতে পারে। দেশে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে, কোনো আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি হলে, এমনকি কোনো জোর গুজব থেকেও শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় কৃত্রিমভাবে সিন্ডিকেটের দ্বারাও আমরা শেয়ারবাজারে পতন ঘটতে দেখেছি। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর তদন্তের ব্যবস্থা হলো একমাত্র ব্যবস্থা। টোকিও স্টক এঙ্চেঞ্জ, নিউইয়র্ক স্টক এঙ্চেঞ্জের মতো শক্তিশালী বাজারেও ব্যাপক দরপতনের ঘটনা অজস্রবার দেখা গেছে। শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরে হাতাহাতি, মারামারিও দেখা যায়। কিন্তু রাস্তায় নেমে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ভাঙা একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও দেখা যায় না। শেয়ারবাজারকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু জনজীবন বিপর্যস্ত করার শেয়ার-ব্যবসায়ীদের এ মনোভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। আমরা লক্ষ করে আসছি, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। বাজার হয় অতিমূল্যায়িত হচ্ছে, অথবা বাজারে ধস নামছে। বেশ কিছুকাল ধরেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছিলেন বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার ব্যাপারে। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হলে ধসের ভয়ও বেড়ে যায়। তাই এ সাময়িক পতনে কেউ কেউ আতঙ্কিত না হয়ে বরং একে বাজার সংশোধন হিসেবে দেখতে চাইছেন। তবে আমাদের শেয়ারবাজারে বেশ কিছুকাল ধরেই অন্য একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেটা হলো, শেয়ারবাজার সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ তার সর্বশেষ পুঁজিও এ বাজারে বিনিয়োগ করছেন। এতে নানা ধরনের সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। শেয়ারবাজারের ওঠানামা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু শেয়ারবাজারের সঙ্গে এমন সব মানুষও জড়িয়ে পড়ছেন যে দরপতন হলে তাঁরা সামাজিক সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারেন। এ জন্য শেয়ারবাজার সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করার প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা আশা করি, দেশের পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।

No comments:

Post a Comment