Friday, December 10, 2010

বিদেশের যে মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল

বিদেশের মাটিতে ভারতের কলকাতার পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশন অফিসে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ডেপুটি হাইকমিশনার এম হোসেন আলী দড়ি টেনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তিনিই প্রথম পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ফলে স্বাধীনতাযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। কয়েকটি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে সমর্থন জানায়। কিন্তু কলকাতার দূতাবাসে ঐতিহাসিক ওই ঘটনার কোনো তথ্য ও স্মারক নেই।

কলকাতার মুজিব সরণির ডেপুটি হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তা হোসেন আলী প্রথম পতাকা তুলেছিলেন_এ কথা জানালেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, হোসেন আলী দূতাবাস কর্মীদের নিয়ে নিজে দড়ি টেনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় হলঘর থেকে পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি সরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙিয়ে দেন। হাইকমিশন অফিসের সামনে লেখা 'পাক হাইকমিশন' মুছে লেখেন 'বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন'। তিনি বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য জানিয়ে তাঁর অফিসকে বাংলাদেশ দূতাবাস করে স্বাধীনতার পক্ষে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৮ এপ্রিল পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সাবেক সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হাসান ইমাম বলেন, 'ওই সময় আমি বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের আহ্বায়ক। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আমাদের মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ের বাড়িতে পাকিস্তানি আর্মি হামলা চালায়। তখন আমি ঢাকা থেকে মাগুরা-ঝিনাইদহ হয়ে মেহেরপুরে আসি। এরপর মুজিবনগর হয়ে কলকাতায় যাই। ৫ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ দিলি্ল থেকে কলকাতা আসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলি। এরপর আমি হোসেন আলীর সঙ্গে কথা বলি। ১৮ এপ্রিল তিনি হাইকমিশন অফিসের লনে পতাকা উত্তোলন করেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে ১৬ ডিসেম্বর আমরা সেখানে সমাবেশ করি।' পতাকা উত্তোলনের সেই ঐতিহাসিক স্থানের পাশে একটি চাঁপা ফুলগাছে ফুল ফুটেছে। কিন্তু সেখানে কোনো স্মারক নেই। এ ব্যাপারে হাইকমিশন অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবুল হাসান মৃধা বলেন, 'হোসেন আলী সাহেব বিদেশের মাটিতে প্রথম কলকাতার হাইকমিশনে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ওই ঘটনাটির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।' মুক্তিযুদ্ধের ওই পতাকা উত্তোলনের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। এ কারণে এখানে একটি স্মারক নির্মাণ করা হলে নতুন প্রজন্ম বিদেশের মাটিতে প্রথম পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস জানতে পারবে।

No comments:

Post a Comment