Friday, December 10, 2010

সব পক্ষের দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতা কাম্যঃ শেয়ারবাজারে হঠাৎ কালো মেঘ

ত বুধবার শেয়ারবাজারে যে অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছিল, তাতে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, মাত্র এক ঘণ্টার এই অভূতপূর্ব দরপতন বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অতস্ফীিতি বনাম দুর্বল ভিত্তির ফসকা গেরোকেই উন্মোচন করেছে। যা ঘটেছে তা বাজারের স্বয়ংক্রিয় নিয়মে ঘটেনি, এটা বলারও কারণ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা, ব্যক্তির খামখেয়াল এবং বাজারকে প্রভাবিত করায় কারও কারও চেষ্টার মিলিত ফল হলো শেয়ারবাজারে হঠাৎ এই কালো মেঘের উদয়।

দেশের শেয়ারবাজার যেভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে, তাতে ঝুঁকির মাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে। আর ফুলে-ফেঁপে ওঠার অন্যতম কারণ হলো অতিমুনাফার প্রলোভন। বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় বিনিয়োগ ও স্ফীত মুনাফা অন্যদের এমন ধারণাই দিচ্ছে যে শেয়ারবাজারে টাকা খাটালেই তা দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ হয়ে ফেরত আসবে। আর তাই ঝুঁকির মাত্রা যথাযথভাবে বিবেচনা না করে অনেকেই বিনিয়োগ করে ফেলছেন। জড়িয়ে পড়ছেন ফাটকা খেলায়। শেয়ারবাজারের বৈশিষ্ট্যগত কারণেই এখানে ফাটকাবাজি হয়ে থাকে। তবে তারও সীমা টানতে হয়। না হলে তা বাজারকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। বাংলাদেশেও এখন ঝুঁকির জায়গাটা বেড়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ রকম একটি অবস্থায় বাজারবহির্ভূত কোনো শক্তির পক্ষে বাজারকে প্রভাবিত করায় চাল চালা সম্ভব হয়। প্রথম আলোর এ-বিষয়ক গত বৃহস্পতিবারের সংবাদে দেখা যায়, একদিকে যখন বাজার সংশোধনের ধারায় ছিল, সে রকম সময়ে এসইসির একটি প্রজ্ঞাপন বাজারের অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বাজার বাজারের নিয়মে চলবে, কিন্তু সরকারি সংস্থার দায়িত্ব যেকোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে সেটির অভাব দেখা গেছে। কিন্তু সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যা করার তা না করে খুঁটিনাটি নিয়ে আছে।
দেশে উৎপাদনি বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকা, নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ না ঘটা ইত্যাদি কারণে মানুষের সামনে বিনিয়োগের সুযোগ কম। বিপুল অলস পুঁজি পড়ে থাকার এ সময়ে সীমিতসংখ্যক শেয়ারের পেছনে ছুটছেন বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী। এতে শেয়ারবাজারে বিরাজ করছে মুদ্রাস্ফীতির মতো পরিবেশ। বিনিয়োগকারীর সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে শেয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। যত দ্রুত তা হয় ততই মঙ্গল।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজারের বিশাল জোয়ারবিধ্বংসী ভাটা ডেকে এনেছিল। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন অভিজ্ঞতাহীন অগণিত নব্য বিনিয়োগকারী। বলা যায়, মধ্যবিত্ত তার পুরো সঞ্চয়ই হারিয়ে ফেলেছিল এবং ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল একশ্রেণীর ফাটকাবাজ। সে সময়ের তুলনায় অবশ্য এখনকার বাজার আরও সংহত, প্রস্তুত ও গভীর। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমারোহও বিস্তৃত। ফলে দেড় দশক আগের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসবে, এমন আশঙ্কা কম। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণই বড় রক্ষাকবচ।

No comments:

Post a Comment