Monday, January 10, 2011

পাবনায় শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবককে ধরে এনে কুপিয়ে হত্যা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় সুজন হোসেন (২৮) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ গতকাল রবিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার দুবলাপাড়া গ্রামের বিলের মধ্য থেকে সুজনের লাশ উদ্ধার করেছে। সুজন চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের দুবলাপাড়া গ্রামের হজরত আলীর ছেলে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, সুজন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল জনযুদ্ধ) সদস্য। পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে চাটমোহর থানার ওসি সৈয়দ সহিদ আলম জানান, সুজন আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের নগর চাচকিয়া গ্রামে তার শ্বশুর আলফাজ উদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসীদল তাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুবলাপাড়া গ্রামের বিলের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
সহিদ আলম বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক ধারণা পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল লাল পতাকা) সন্ত্রাসীরা পূর্ববিরোধের জের ধরে সুজনকে হত্যা করতে পারে।'
গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চাটমোহর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।

দরপতন ঠেকাতে মার্জিন ঋণের সীমা ১:২

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে মার্জিন ঋণের সীমা ১:১.৫ থেকে বাড়িয়ে ১:২ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আজ সোমবার এক জরুরি বৈঠকে এসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একই সঙ্গে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্পট মার্কেটে থাকা ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ মার্কেটে স্থানান্তর করার।

এ ছাড়া ৩০ জানুয়ারির মধ্যে শিল্পঋণের টাকা সমন্বয় করার বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।
আজ ব্যাপক দরপতনের ফলে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে দেশের দুই শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর জরুরি বৈঠকে বসে এসইসি।
বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে তিনটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, এসব সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে আগামীকাল থেকে কার্যকর হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া লেনদেন কাল মঙ্গলবার যথারীতি চালু হবে বলেও তিনি জানান।
এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে বিনিয়োগকারীরা নন মার্জিনেবল শেয়ারের ক্ষেত্রে নিটিং সুবিধা পাবেন।
এই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী, সিএসইর প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার সৈকত এলাকা থেকে সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ

হাইকোর্ট কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে স্থায়ী-অস্থায়ী সব স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে এ নির্দেশ দিয়ে এই বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে আদালত সমুদ্রসৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। দখল রোধে নজরদারির ব্যবস্থা করতে পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে ও নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিটটি করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে চারজন আইনজীবী রিটটি করেন।
আদালত দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকত এলাকা দখলমুক্ত করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিকল্পনা সচিব, অর্থসচিব, বনসচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে—এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে জনস্বার্থে রিট করা হয়।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মনজিল মোরসেদ। আর সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন।

ওএমএসে চালের দাম বাড়ছে

খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া (ওএমএস) চালের দাম প্রতি কেজিতে এক টাকা করে বাড়াচ্ছে সরকার। খাদ্যে ভর্তুকি কমানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্বল্পমূল্যে খাদ্যশস্য (রেশন) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওএমএসের প্রতি কেজি চালের দাম হবে ২৫ টাকা। বর্তমানে ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সরকারকে আরো বেশি চাল আমদানি করে বাজারে ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। এ কারণে খাদ্য কিনতে ভর্তুকি দিতে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের ওপর চাপ পড়ছে। তাই ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া চালের দাম প্রতিকেজিতে এক টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে যদি চালের দাম কমে যায়, তাহলে পুনর্নির্ধারিত দাম কার্যকর করা হবে না।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে চতুর্থ শ্রেণীর দুই লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৮ জন সরকারি কর্মচারী এবং ৪৫ হাজার ১০ জন গ্রামপুলিশের কাছে প্রতিমাসে স্বল্পমূল্যে ২০ কেজি করে খাদ্যশস্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁরা ২০ কেজি করে চাল বা গম অথবা দুই ধরনের খাদ্যশস্য কিনতে পারবেন। তবে এর মধ্যে প্রতি পরিবার কত কেজি চাল ও কত কেজি গম পাবে তা নির্ভর করবে সরকারের মজুদের ওপর। প্রতিকেজি চালের দাম হবে ওএমএসের চালের দামের সমান। আর গমের দর হবে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। চলতি মাস থেকেই সরকারি কর্মচারী ও গ্রামপুলিশ স্বল্পমূল্যে চাল-গম কিনতে পারবেন।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট না থাকলেও কারসাজি রয়েছে। তাঁদের নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশে খাদ্য সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। বর্তমানে আট লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। বন্দরে রয়েছে আরো দুই লাখ টন। আরো আড়াই লাখ টন চাল কেনার জন্য ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে মজুদ ১৫ লাখ টন হবে।’ সরকার দুস্থদেরও রেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে বলে তিনি জানান। তবে কোন শ্রেণীর কত দুস্থ মানুষকে রেশনের আওতায় আনা হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য কেনার জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ জন্য সরকারের অনেক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিসর ছোট করা হয়েছে। চলতি মাস থেকেই সারা দেশে ১১ লাখ ২০ হাজার দরিদ্র লোককে ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি চাল বা গম দেওয়া হবে। ফেয়ার প্রাইজে প্রতিকেজি চালের দাম ২৪ টাকা ও গমের দাম ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর জন্য ওএমএসের চালের দাম বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম আরো বেড়ে গেলে সরকার ঝামেলায় পড়বে।
ড. মাহবুব আরো বলেন, ‘চালের দাম খোলাবাজারে এক টাকা বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। তারপরও আমাদের দেশে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে দাম বাড়ান।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, এক টাকা বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার কথা নয়।

'অদৃশ্য' ট্যাংক

যুদ্ধে কে চায় পরাজিত হতে?-কেউ না। তাই যুদ্ধ জয়ে মানুষের পরিকল্পনার কোনো শেষ নেই। শত্রুকে নাকাল করতে প্রায় প্রতিদিনই উদ্ভাবিত হচ্ছে নানা ধরনের অস্ত্র, আর প্রতিনিয়তই ঘটছে এসবের আধুনিকায়ন। এবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁরা এক ধরনের 'অদৃশ্য' ট্যাংক প্রস্তুত করবেন।
ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোনো কিছুকে অদৃশ্য করতে প্রথাগত যেসব পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়, এতে তেমন কিছু করা হবে না। ট্যাংক অদৃশ্য করতে তাঁরা একেবারেই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন। 'ই-ক্যামোফ্লাজ' নামের এ প্রযুক্তি এক ধরনের বৈদ্যুতিক কালি (ইলেকট্রনিক ইংক) তৈরি করে ট্যাংকটিকে গায়েব করে দেবে। এ জন্য ট্যাংকের গায়ে উচ্চপ্রযুক্তির বৈদ্যুতিক সেন্সর ব্যবহার করা হবে। এগুলো ট্যাংকের চারপাশের পরিবেশ নিরূপণ করে ওই অনুযায়ী ট্যাংকের বহিরাংশের চেহারা বদলে দেবে। অর্থাৎ পাহাড়ি পথ বা মরুভূমি_যেকোনো ধরনের পরিবেশই হোক না কেন, ওই ট্যাংকের চলার পথে আশপাশের দৃশ্যের অবিকল প্রতিরূপ ট্যাংকটির গায়ের ওপর চিত্রের মতো ছেপে যাবে। এতে ট্যাংকটি এতই নিখুঁতভাবে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে যে, সেটি আর আলাদা করে দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না। অর্থাৎ 'অদৃশ্য' করতে প্রথাগত প্রযুক্তির মতো আলোর প্রতিফলনে বাধা তৈরি করে একে দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখার মতো ব্যাপার হবে না। এতে ট্যাংকটিকে মূলত ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হবে। এ প্রযুক্তি মনুষ্য ও রোবটচালিত_দুই ধরনের ট্যাংকেই ব্যবহার করা হবে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ফিউচার প্রটেক্টেড ভেহিকল প্রজেক্টের প্রধান হিশাম আবাদ জানিয়েছেন, মানুষ যা করতে পারবে না, যন্ত্রগুলোকে দিয়ে মূলত তা-ই করানো হবে। কেননা এসব কাজে যন্ত্রগুলোই সেরা। যেখানে জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেখানে যন্ত্রগুলো অসাধারণ নৈপুণ্য মানুষকে সহায়তা করতে পারবে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।

ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ২০০ ভরি সোনা, সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শনিবার রাতে রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে রক্ষিত ২০০ ভরি স্বর্ণসহ নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা লুট হয়েছে। মন্দিরে আপাতত পূজা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চুরির ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মন্দিরের এক নিরাপত্তাকর্মীসহ চারজনকে আটক করেছে।

গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর তিনটি মন্দিরে চুরির ঘটনার প্রতিবাদে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আজ বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে ভক্ত সমাবেশ আহ্বান করেছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ব্যবস্থাপক তপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মন্দিরে আনুমানিক ২০০ ভরি স্বর্ণ, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা এবং পাঁচ-ছয় ভরি রুপা ছিল। সবটাই চুরি হয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে পুরোহিত রতন চক্রবর্তী ও নিত্য গোপাল চক্রবর্তী গেট বন্ধ করে মন্দির ত্যাগ করেন। রবিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তাঁরা মন্দিরে পৌঁছে দেখতে পান গেটের চারটি তালার মধ্যে তিনটি নেই। বাকি একটি তালাও ছিল ভাঙা অবস্থায়। তাঁরা ভেতরে ঢুকে দেখেন পুরো কক্ষটিই তছনছ করা হয়েছে। দেবীর অঙ্গসজ্জায় ব্যবহৃত কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই। ছয়টি প্রণাম বাক্স ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের চুরির সংবাদ পেয়ে গতকাল সকালেই সেখানে উপস্থিত হন মন্দির কর্তৃপক্ষ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দলও সেখানে যায়। পরে এ ব্যাপারে চকবাজার থানায় মামলা করা হয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরের আশপাশে রাতের বেলায়ও প্রচুর মানুষের যাতায়াত রয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় এখন ভক্তদের আনাগোনা কমেছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু এর আগে ঘটেনি। তারপরও মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত ছিল একটি বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের ছয়জন কর্মী। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকে। শনিবার রাতে দায়িত্ব ছিল আনিসুর রহমান নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর। ভোরে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল কাইউম নামে আরেক কর্মীর।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুর দাবি করেছেন, রাত ১২টায় বটতলা মোড়ে খাবার আনতে যাওয়া ছাড়া তিনি মূল গেটে সারা রাত অবস্থান করেছেন। কিন্তু কাউকে মন্দিরে ঢুকতে বা বের হতে দেখেননি।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ঘটনায় মন্দির কর্তৃপক্ষ থানায় একটি মামলা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মন্দিরের একজন নিরাপত্তাকর্মী ও তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (লালবাগ অঞ্চল) খুরশিদ হোসেন বলেন, আপাতত এ ঘটনাকে চুরি বলেই মনে হচ্ছে। যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তাঁরা রাতে মন্দির এলাকার ভেতরই থাকতেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও ২২ ডিসেম্বর জয়কালী মন্দিরে চুরি হয়েছে। জাতীয় মন্দিরসহ এসব চুরির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। বীরেশ চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, মঙ্গলচন্দ্র ঘোষ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।
পূজা কমিটির নেতারা বলেন, জতীয় মন্দিরে চুরির পেছনে ষড়যন্ত্র কাজ করতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোবল ধ্বংস করতে কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাতে পারে।
ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেল ৪টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক ভক্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

জিডিপির ২৪ শতাংশই কালো টাকা __টিআইবি

দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করছে। মুদ্রা সরবরাহ মডেল অনুযায়ী ১৯৭৫ থেকে ২০০৮ সালে দেশে কালো টাকার (অদৃশ্য অর্থনীতি) গড় আকার ছিল জিডিপির ১০.১ শতাংশ।
এ ছাড়া জনপ্রিয় এমআইএমআইসি পদ্ধতি অনুসারে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কালো টাকার গড় আকার ছিল ৩৮.১ শতাংশ। পদ্ধতি দুটির গড় হিসাব অনুযায়ী, অর্থনীতিতে জিডিপির ২৪ শতাংশ কালো টাকা। এ হিসাবে ২০০৮ সালের শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ তথ্য তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশের অদৃশ্য অর্থনীতি : আকার প্রাক্কলন এবং নীতিসংক্রান্ত প্রভাব’ শিরোনামে এক গবেষণামূলক নিবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। নিবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কবির হাসান। তবে আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা টিআইবির এই গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। সভাপতির বক্তব্যে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘দেশে দুর্নীতি আছে। সরকারে ক্ষমতাসীন দলও তা মনে করে। দুর্নীতি কমানোর জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
সভায় কয়েকজন বক্তা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক একটি অংশ রয়েছে অপ্রচলিত খাতে। এ রকম তাত্ত্বিক হিসাবের মাধ্যমে তা তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাঁরা মনে করেন, অপ্রচলিত খাতের হিসাব করা সম্ভব হলে দেশের জিডিপির আকার আরো বড় হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নমুনাভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে একটি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। এ ছাড়া কোনো গবেষণার মাধ্যমেই কালো টাকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়।
সভায় সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশেও দুর্নীতি রয়েছে, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারত ও চীনেও দুর্নীতি রয়েছে। তবে ওই সব দেশের গবেষক বা সাধারণ মানুষ দেশকে এত গালাগাল করে না, যতটা বাংলাদেশে করে। দেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে। রপ্তানি বাড়ছে। তবে সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি আছে। তা কমাতে হবে। এ জন্য সরকার, অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব পর্যায়ে ভালো নেতৃত্ব দরকার।’ টিআইবির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভালো কিছু বলেন। দেশকে এত গালাগাল করবেন না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, টিআইবি সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ করে। এ ছাড়া সংস্থাটির সাক্ষাৎকারভিত্তিক জরিপও ব্যাপকভিত্তিক হয় না। ফলে অনেক সময় জরিপের ফলাফল প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে ভুল বার্তা পাঠায়। তিনি টিআইবিকে আরো সতর্কতার সঙ্গে এসব তথ্য প্রকাশের অনুরোধ করেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতিতে কালো টাকা থাকলে ক্ষতি নেই। কারণ টাকাগুলো কোনো না কোনো উপায়ে দেশে বিনিয়োগ হয়। তবে কালো টাকা যেন সাদা টাকাকে ক্ষতি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কবির হাসান জানান, গবেষণা প্রবন্ধে আয়কর ফাঁকির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা থেকে প্রাপ্ত অপ্রকাশিত আয়কে কালো টাকা বা অদৃশ্য অর্থনীতি হিসেবে বোঝানো হয়েছে। তিনটি সমন্বিত গবেষণা পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ২০২ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য নিয়ে অদৃশ্য অর্থনীতির এ ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। ২০১০ সালে ১০ জুন থেকে ১০ জুলাই সময় ধরে জরিপ চালানো হয়। জরিপে তথ্য দাতাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই অদৃশ্য অর্থনীতিকে দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।
কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ করতে গবেষণা নিবন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে সমন্বয় সাধন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার, কর আইন সহজীকরণ ও কর ফাঁকির জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, নীতিনির্ধারকদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়াসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।

শেয়ারবাজারে ধস বিক্ষোভে উত্তাল বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে স্মরণকালের দরপতন দেখলেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। গতকাল রবিবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জে চোখের সামনে মিনিটে মিনিটে শেয়ারের দাম কমার দৃশ্য দেখে তাঁরা হয়ে পড়েন হতবিহ্বল, ক্ষুব্ধ। ফলে ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতে রাস্তায় নেমে আসেন বহু বিনিয়োগকারী।

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজশাহীতে ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সিলেটে অসংখ্য বিনিয়োগকারী লেনদেন বন্ধ রাখেন। তাঁরা সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন, এমনটি আজ সোমবারও চলতে থাকলে তাঁরা লেনদেন একেবারেই বর্জন করবেন।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক দিনেই শেয়ারের সাধারণ মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৬০০ পয়েন্ট বা পৌনে ৮ শতাংশ। এটি এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এক দিনে সূচকের সর্বোচ্চ পতন। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর এক দিনে ডিএসইর সাধারণ সূচক ৫৫২ পয়েন্ট বা ৭ শতাংশ কমেছিল।
শেয়ারবাজারের গত কয়েক দিনের দরপতনের ঘটনাকে ’৯৬ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সময়কার পতনের চেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করেছেন অনেকে। ওই সময় সাত-আট মাসে ডিএসইর সূচক ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্ট থেকে কমতে কমতে একপর্যায়ে ৪৬২ পয়েন্টে নেমে আসে। অবশ্য ১৯৯৬ সালের তুলনায় এখন বাজার অনেক বেশি বিস্তৃত। তালিকাভুক্ত কম্পানি ও বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও এখন বাজারে ’৯৬-এর তুলনায় অনেক বেশি। সূচকের গণনাও ’৯৬ সালের মতো না।
এদিকে, গত ৩ জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিক দরপতনের শুরু। সেই থেকে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছে ১১৬৯ পয়েন্ট। ৩ জানুয়ারি লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর সূচক ছিল প্রায় ৮৩০৪ পয়েন্টে। গতকাল লেনদেন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭১৩৫ পয়েন্টে।
গতকালের দরপতনের ভয়াবহতা এতটাই ব্যাপক ছিল যে ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে তিনটি বাদে সবকটিরই দাম কমেছে। সকালের পর অনেক শেয়ারের কোনো ক্রেতাই ছিল না। বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতাশূন্যতায় ওই সব কম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ধারাবাহিক দরপতনকে ঘিরে গত সপ্তাহের শেষ দুই দিন রাজধানীর মতিঝিলে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করলেও গতকাল তেমন হয়নি। সকাল থেকেই ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য অবস্থান নেয়। বেশ কয়েকদফা বিনিয়োগকারীরা দরপতনের প্রতিবাদে ডিএসইর ভবনের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে কিছু বিনিয়োগকারী ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে শুয়ে পড়েন। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশ মামুন নামের এক বিনিয়োগকারীকে আটক করে। বিক্ষোভ না হলেও মতিঝিল পাড়ার অবস্থা ছিল কিছুটা থমথমে।
পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্যেই ছিল দরপতনের আশঙ্কা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) মধ্যেও ছিল উদ্বেগ। এ কারণে গতকাল লেনদেন শুরুর আগেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় জরুরি বৈঠকে বসে এসইসি। সেই বৈঠকে পতন ঠেকাতে তিনটি সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার নিজেই সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দেন। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু সেই আহ্বানও বেশ কিছুদিন ধরে আস্থার সংকটে ভুগতে থাকা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। ফলে এর প্রভাব পড়তে থাকে বাজারে। কমতে থাকে শেয়ারের দাম। সেই সঙ্গে মূল্যসূচকও। চার ঘণ্টার লেনদেনকালীন মাঝেমধ্যে সূচকের পতনের ব্যবধান কমানোর দৃশ্য দেখা গেলেও সেটি ছিল সাময়িক। দিনের শেষভাগে সূচকের ভয়াবহ পতন ঘটতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক এই পতন সরকারের মধ্যেও তোলপাড় সৃষ্টি করে। এ কারণে গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই পতন রোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণের টাকা অবাধে যাতে পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে চলে যেতে না পারে সেজন্য ব্যাংক ঋণের খাত নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ অধিক লাভের আশায় তা পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে লোকসানের মুখে পড়ছেন। তাই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই এর খাত নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। বৈঠক সূত্রে এসব খবর জানা গেছে।
মুদ্রাবাজারে সৃষ্ট তারল্য সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দিয়েছে-এমন বক্তব্য খণ্ডনের জন্য গতকাল বিকেলেই তারল্য পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজারচিত্র : গতকাল লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ছিল ৭৭৩৫ পয়েন্টে। ওখান থেকেই শুরু হয় গতকালের লেনদেন। লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ৭৩০৮ পয়েন্টে ওঠে। এরপর শুরু হয় দরপতন। শেয়ারের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিনিটে মিনিটে কমতে থাকে ডিএসইর সাধারণ সূচকও। দিনের একপর্যায়ে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৭৬ পয়েন্ট কমে সর্বনিু ৭৫৯ পয়েন্টে নেমে আসে। তবে দিনশেষে সূচক কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়ে ৭১৩৫ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ২৪৪ কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। তার মধ্যে মাত্র তিনটি বাদে সবটির দাম কমেছে।
ইতিহাসের এই ভয়াবহ দরপতনের দিনে কিছুটা শুভ ইঙ্গিত ছিল লেনদেনে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৯৭০ কোটি টাকা। এটি ছিল গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিু লেনদেন। গতকাল সেটি বেশ খানিকটা বেড়েছে। রবিবার দিনশেষে ঢাকার বাজারে এক হাজার ৩৩১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের দিনের চেয়ে যা ৩৬১ কোটি টাকা বেশি। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। একদল ভয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন আর একদল কিনেছেন। লেনদেন বাড়াকে বাজারসংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এসইসির তিন সিদ্ধান্ত : সকাল সাড়ে ৯টায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসইসি। বৈঠক থেকে নেতাদের কয়েকটি সুপারিশ গ্রহণ করে এসইসি। এই সুপারিশ অনুযায়ী ১০ কোটি টাকার ওপরের বিও হিসাবধারীদের বিনিয়োগে মার্জিন ঋণসুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে ১০ কোটি টাকার ওপরের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে ঋণসুুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে নতুন বিও হিসাবধারীদের জন্য হিসাব খোলার প্রথম ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত ঋণসুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ১৫ দিন করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে নতুন বিনিয়োগকারীরা ১৫ দিনের মধ্যে ঋণসুবিধা পাবেন। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের শেয়ার ক্রয়ে আর্থিক সমন্বয় সুবিধা (নেটিং সুবিধা) দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে যেকোনো শেয়ার বিক্রি করে গ্রামীণফোনের শেয়ার কিনতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। আগে গ্রামীণফোনের শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কেনার সুযোগ ছিল। কিন্তু অন্য কম্পানির শেয়ার বিক্রি করে গ্রামীণফোনের শেয়ার কেনার সুযোগ ছিল না।
সাংবাদিক আটক : বেলা সোয়া ২টার দিকে দায়িত্ব পালনরত র‌্যাবের একটি টিম ডিএসই ভবনের দ্বিতীয়তলায় সাবেক সভাপতি আবদুল হকের রুম থেকে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক মঞ্জুর আহমেদকে আটক করে। এ ঘটনায় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা রাস্তায় বসে পড়েন। এর আধা ঘণ্টা পর র‌্যাব তাঁকে ছেড়ে দেয়। মঞ্জুর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই সময় বাথরুম থেকে বেরিয়ে শোরগোল দেখার জন্য নিচে উঁকি মারেন। এর অল্প সময় পর নিচ থেকে র‌্যাব এসে তাঁকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গাড়িতে আটকে রাখে।
চট্টগ্রাম : গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরকে ধরা হতো ’৯৬ পরবর্তী শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়কর দিন। কিন্তু গতকালের চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে লেনদেন সে বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এক দিনেই সার্বিক সূচকের পতন ঘটেছে ১৩৯৫ পয়েন্ট। আর দরপতনের তালিকায় ছিল লেনদেন হওয়া শেয়ারের প্রায় ৯৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যেও বেড়েছে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ। আতঙ্কের কারণে বিক্রির চাপ বাড়ায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবিশেষজ্ঞরা।
সিএসইতে গতকাল ১৯০টি কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র তিনটি কম্পানির। চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে গতকাল প্রায় ১৫৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের লেনদেনের চেয়ে ৬০ কোটি টাকা বেশি। এদিন শেয়ার লেনদেন হয়েছে এক কোটি সাড়ে ২৬ লাখ। বৃহস্পতিবারের চেয়েও প্রায় ৪৪ লাখ বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে গতকাল। শেয়ারবিপর্যয়ের দিনে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াকে অশনি সংকেত হিসেবে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
গত ১৯ ডিসেম্বর সিএসইতে সার্বিক সূচক ১৩৮৩ পয়েন্ট কমেছিল। গতকাল সেটাকে ছাড়িয়ে সূচক পড়েছে ১৩৯৫ পয়েন্ট। বিশ্লেষকদের মতে ১৯৯৬ সালের মহাবিপর্যয়েও এক দিনে সূচকের এত পতন হয়নি।
আর পতনের তালিকায় ছিল বাকি ১৮৭টি শেয়ার। সাধারণ সূচক ১৪৫৪ পয়েন্ট কমে গতকাল ১৩২৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজার মূলধনও এক দিনে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমে গতকাল দুই লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সিএসইতে গতকাল দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ভাগ্যবান শেয়ার তিনটি হলো-বার্জার পেইন্ট, গ্রামীণফোন ও এসিআই জিরো কুপন বন্ড।
রাজশাহী : দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা নগরীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। নগরীর সাহেববাজার আইসিবির (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) কার্যালয়ের সামনে থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অব্যাহত দরপতনের জন্য এসইসি চেয়ারম্যানকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ চাওয়া হয় বিক্ষোভ-সমাবেশে। পরে বিনিয়োগকারীরা আইসিবিসহ শহরের ১০টি ব্রোকারেজ হাউসে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেট : দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে সিলেটের অসংখ্য বিনিয়োগকারী রাজপথে নেমে আসেন। করেন প্রতিবাদ সভা। সভায় ঘোষণা দেওয়া হয় বাজার স্থিতিশীল না হলে আজ সোমবার থেকে সিলেটের ব্রোকার হাউসগুলোতে কেউ লেনদেন করবেন না। এর আগে বিভিন্ন ব্রোকার হাউসগুলোতে গিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী লেনদেন বন্ধ করার আহ্বান জানালে অন্যরা সম্মত হন। এরপর দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সব ব্রোকার হাউসে লেনদেন বন্ধ থাকে।
বগুড়া : শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে বগুড়ার বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবেরোধ করেন। বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং এসইসি ও ডিএসই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
খুলনা : দরপতনে বিক্ষুব্ধ হয়ে বিনিয়োগকারীরা নগরীর শিল্প ব্যাংকের সামনে জমায়েত হয়ে সব রকম যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।

বিনিয়োগকারীদেরকে অর্থমন্ত্রীঃ ধৈর্য ধরুন সরকার সঙ্গে আছে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা ঠকবেন না। সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে।’

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মিন্টো রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল শেয়ারবাজারের ভয়াবহ দরপতনকে কেন্দ্র করে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মূলত বাজারকে ঘিরে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ব্যাংকিং বিভাগের সচিব শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। এ ছাড়া সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, ইউনি পেসহ কয়েকটি হায় হায় কম্পানি শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তারা চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে ঢুকে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। ইউনি পেসহ এসব কম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব কম্পানিকে দেশছাড়া করতে আইন করার চিন্তা করছে সরকার। যুবকের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে ইউনি পে-কে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, যাঁরা শেয়ারবাজারে আসছেন, তাঁদের হিসাব করতে হবে কত বছরে তাঁরা বিনিয়োগ ফিরে পেতে চান। শেয়ারের মূল্য আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও) হিসাব করতে হবে।
শেয়ারবাজারকে বিস্তৃত করার সরকারের পরিকল্পনার কথাও বলেন মন্ত্রী। তিনি জানান, বাজারে আরো শেয়ার আসবে। সরকারি কম্পানির শেয়ার বাজারে আসতে একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোকে (সরকারি কম্পানি) বাজারে আসতেই হবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজার ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়-এমন এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের কথা ভাবে। কেউ কেউ হয়তো সেই সুযোগ নেয়।
বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, উঠতি শেয়ারবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নানা সময় নানা কারণে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যত দিন ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন (পরিচালনা পর্ষদ থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার প্রক্রিয়া) না হবে তত দিন বাজারে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন আছে।
মশিউর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। বহু লোক এখন বাজারের সঙ্গে যুক্ত। বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। যাঁরা শেয়ারবাজারে যান তাঁরা ভাবেন, হঠাৎ করে অনেক লাভ হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়।’

চালকলে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বন্ধ করুন টিসিবি কার্যকর করুন __প্রধানমন্ত্রী

দেশে খাদ্যদ্রব্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া টিসিবি কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তা কার্যকর করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা যায়, ঋণ পরিশোধের তাড়া না থাকায় মিল মালিকদের চাল মজুদ রাখার কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য চালকল মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চালকল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ না দেওয়ার এবং ঋণের পরিমাণ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাংকগুলোকে।
সূত্র মতে, বৈঠকে শেখ হাসিনা খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে বলে চুপ থাকলে চলবে না, মানুষকে বাঁচাতে হবে। তিনি মন্ত্রীকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বিস্তৃত করার নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির বিষয়েও আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া চালসহ খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ : সূত্রে জানা যায়, বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও টিসিবি যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজমন্ত্রী টিসিবিকে কার্যকর করতে তাঁর মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘কী করা হয়েছে, তা জানতে চাই না, আমি শক্তিশালী টিসিবি দেখতে চাই।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা : জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। ওবায়দুল কাদের গত শনিবার বলেছিলেন, ‘মধুচন্দ্রিমাকাল শেষ, সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ।’ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সরকারের বিরুদ্ধে এসব বক্তব্য সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভবঘুরে ও গৃহহীন (পুনর্বাসন) আইনের খসড়া অনুমোদন : ভবঘুরে ও বাস্তুহারা লোকদের আশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ভবঘুরে ও গৃহহীন (পুনর্বাসন) আইন-২০১০-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আবুল কালাম আজাদ জানান, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা দ্বৈতকর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধবিষয়ক চুক্তি অনুমোদন করেছে।
এ ছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব এবং বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের জন্য ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। সোমবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন এবং দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পরের দিন এ চুক্তিটি সই হবে।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দক্ষিণ কোরিয়া সফর, এশীয় সহযোগিতা সংলাপের (এসিডি) ৯ম মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য সংলাপের তৃতীয় বৈঠক এবং দিল্লিতে আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্মেলন বিষয়ে চারটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা বৈঠকে পেশ করা হয়।

শাসকের কানে পৌঁছায় না ফেলানীর বাবার বিলাপ! by রাহীদ এজাজ

‘হামরা গরিব মানুষ, প্যাটের ভোকোত ভারত গেছিলাম, আর কোনো দিন যাবার নই। বাবা গো, তোমরা হামার বেটির লাশ আনি দেও, নিজ হাত মাটি দেমো।’ গত শনিবার এ কথাগুলো বলে বিলাপ করছিলেন নুরুল ইসলাম। মৃত্যুর দুই দিন পর সন্তানের লাশের মতো ভারী বোঝা কাঁধে নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের বানারভিটা গ্রামের এই হতদরিদ্র দিনমজুর।
নুরুলের বিলাপ শাসনযন্ত্রের কানে পৌঁছায় না। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলন্ত মৃতদেহের ছবিও হূদয় স্পর্শ করে না! ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পরও সরকার কোনো প্রতিবাদ করে না। কেন? গরিব বলে? আর কী বলেই বা বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী? তারা কি বলবে, ১৫ বছরের ফেলানী দুষ্কৃতকারী, হামলা করেছিল বিএসএফের ওপর?
বছরের পর বছর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্বিচারে চলছে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড। যদিও একতরফা হত্যাগুলোর পক্ষে সাফাই গেয়ে থাকে বিএসএফ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিডিআর-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শেষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান রমণ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, সীমান্তে প্রাণহানির যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা ‘হত্যা’ বলা ঠিক হবে না। বলা উচিত ‘নিহত’ হচ্ছে। কারণ ‘হত্যা’ ও ‘নিহত’ দুটি শব্দের দ্যোতনা আলাদা। সীমান্তে প্রাণহানির যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তার অধিকাংশই রাতের বেলা। ওই সময়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করছে। ওই সময়ে যারা সীমান্ত পাড়ি দেয়, তাদের নিশ্চয়ই নিরপরাধ বলা যায় না। এ সময় সীমান্ত পেরিয়ে যারা ভারতে যায়, তারা অধিকাংশ সময় বিএসএফ সদস্যদের হামলা করে। আর আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফকে গুলি ছুড়তে হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, নিরপরাধ বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে ভারত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
পত্রিকার খবরে জেনেছি, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে একটি ইটভাটায় তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে কাজ করত নুরুল ইসলামের পরিবার। গত শনিবার কুলাঘাট এলাকার একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় ফেলানীর। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত হাজার ত্রিশেক টাকা আর কিছু গয়না নিয়ে গত বুধবার দিল্লি থেকে দেশের পথ ধরেন বাবা আর মেয়ে। ওই দিন দালালের সহায়তায় বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পাড়ি দিতে ব্যর্থ হন বাবা-মেয়ে। শুক্রবার ভোরে মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরোন নুরুল। কিন্তু কাঁটাতারে কাপড় আটকে যায় মেয়ে ফেলানীর। ভয়ে চিৎকার করে ওঠে সে। শেষ পৌষের কনকনে শীতের ভোরে কিশোরীর আর্তচিৎকার থামিয়ে দেয় বিএসএফের নির্দয় বুলেট। হত্যার কয়েক ঘণ্টা পরও বিএসএফ লাশটি ঝুলিয়ে রাখে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত লাশ পড়লে বন্ধ হবে বিএসএফের হত্যাযজ্ঞ? প্রতিবছর বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানালে ভারত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অব্যাহতভাবে চলছে এ হত্যাকাণ্ড।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএসএফ ২০১০ সালে ৭৪ জন নিরপরাধ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। ২০০৯, ২০০৮ ও ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯৬, ৬২ ও ১২০।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও বাংলাদেশি হত্যা বন্ধে ভারতের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। আর নিরপরাধ লোকজনের হত্যা রোধে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে ফেলানীর মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা পরও পররাষ্ট্র কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় আমরা আর কত ফেলানীর স্বপ্ন চুরমার হওয়ার দর্শক হয়ে থাকব?

এমএলএম ব্যবসা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা

ব্যবসায় কিছু প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে বলে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারণকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় বিদেশে স্বর্ণের বাজার কিংবা মুদ্রা বাজারে বিনিয়োগের নামে কিছু প্রতিষ্ঠান মাসে ১০ শতাংশেরও বেশি মুনাফার আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। অবাস্তব ও উচ্চ মুনাফার লোভে এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি বলেও জানানো হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে জানিয়ে বলা হয়, বেশ কয়েকটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক স্থগিত করেছে। এরপরও তারা অন্য নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১০ সালে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭০টি এমএলএম কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে অর্থ স্থানান্তর ও বিনিয়োগ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ ও মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইন ২০০৯ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সে বছরেরই ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় এমএলএম কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার জন্য একটি নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৩ সেপ্টম্বর ওই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।