Saturday, December 25, 2010

সমস্যার শেষ নেই বস্তির নারীদের by ইয়াসমিন পিউ

রাজধানীর রেললাইনের পাশ ধরে দীর্ঘ লাইনে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু বস্তি। নানা সমস্যা নিয়ে এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে নিম্ন আয়ের মানুষ। নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ২০টি বস্তিতে বসবাস তাদের। খড় আর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ঘরের বাইরে একচিলতে মাটিতে চুলায় রান্না করছেন মালতি বেগম। অন্ধকার ঘরে কেরোসিনের কুপির আলোয় ঝিলিক দিচ্ছে মালতির নাকফুল।
বস্তির পাশেই একটি মেসে কাজ করে সে। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেছে আরো বছর পাঁচেক আগে। স্বামীর শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ধরে রেখেছেন পাঁচ রতি স্বর্ণের নাকফুলটি। সারাদিন এ বাসা থেকে ও বাসায় কাজ করলেও কোন বাসায় তাকে খাবার খেতে দেয় না। সন্ধ্যায় ঝুপড়ি ঘরে ফিরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে রান্না করে খান মালতি। পরনে তার ছেঁড়া ময়লা শাড়ি, ঘরে নেই শীত নিবারণের কাঁথা। তবুও বেঁচে থাকা; স্বপ্ন একটাই-'হয়তো ফুরাবে দুর্দিন।'
বস্তির নারীদের সমস্যার শেষ নেই। ২৪ বছরের নূরজাহান বলেন, বস্তিতে কোনদিন গাও ধুইতে (গোসল) পারি না। মাইনষের বাড়ি কামত গেইলে সেইখান থাকি গাও ধুইয়া আসি। এই বয়সে নূরজাহানের তিনটি সন্তান; শরীর শুকিয়ে গড়ন হয়েছে কঙ্কালের মতো। সন্তানগুলোও ভালো নেই; ভুগছে অপুষ্টিতে। মুখে ঘা, সর্দি আর কৃমিভর্তি মোটা পেট দেখে সহজেই বোঝা যায় কতটা অসহায় এই শিশুরা। চিকিৎসা নেই, ওষুধ নেই, তারপরেও বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টা।
বস্তিতে উঠতি বয়সের মেয়েরা ভোগেন চরম অনিরাপত্তায়। সন্ধ্যা হতেই বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনতে আসা সন্ত্রাসীদের হাতে অহরহ হতে হয় লাঞ্চিত। ১৭ বছরের শিউলী বলে, সাদাসেবি ব্যাটারা সন্ধ্যায় যখন বস্তিতে আসে, আমরা মাইয়্যারা তখন ঘরে বাতি নিভাইয়া চুপ মাইরা থাকি। সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে আইতে না পইলে একলা আর আসন যায় না। তখন বস্তির কাকা-মামারা রাস্তা থাইক্যা ঘরে আইনা রাইখ্যা যায়।
জাতিসংঘের জরুরি শিশু সহায়তা তহবিল (ইউনিসেফ) ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি ১০ লাখ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে। এর মধ্যে বস্তিতে থাকে প্রায় ৭০ লাখ। এসব বস্তিবাসীর অবস্থা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে খারাপ। বস্তি এলাকায় পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃতু্যর হার গ্রামের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। বস্তিতে শিশুশ্রমিকের হার জাতীয় হারের তিনগুণ বেশি। গ্রামে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সুবিধা পায় ৫৪ শতাংশ মানুষ। অথচ বস্তিতে এই সুবিধা পায় মাত্র নয় ভাগ মানুষ।
বস্তির নারীদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বেহাল অবস্থা। জীর্ণ-শীর্ণ শরীরের একেকজন নারীর কমের পক্ষে তিন-চারটি সন্তান। মেয়ে শিশুদের মধ্যে বাল্য বিয়ের প্রবণতা যেমন বেশি, তেমনি অপুষ্টিতে জন্ম নেয়া শিশুমৃতু্যর হারও বেশি। জন্মনিয়ন্ত্রণের মাঠকর্মী এখানে আসে কিনা জানতে চাইলে ২০ বছর বয়সী স্বপ্না বেগম বলেন, কেউ আসে না, আর জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি কই পাওয়া যায় তাও আমরা জানি না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বস্তির জনগণকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম এবং দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তারা বলেন, শুধু নির্বাচনের সময় বস্তির লোকদের মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু অন্য সময় তাদের খোঁজ নেয়া হয় না। এভাবে হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চেষ্টা করা হলে তা হবে বৃথা।

জাতীয় রাজনীতি অসুস্থ, ছাত্ররাজনীতিও অসুস্থ: ওবায়দুল কাদের

ওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় রাজনীতি অসুস্থ, ছাত্ররাজনীতিও অসুস্থ।’ আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে আড়াই কোটি যুবক বেকার। এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে তাদের টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির কথা নিয়ে সমালোচনা করলে চলবে না। সংশোধনের ব্যবস্থা না করে দমনমূলক ব্যবস্থা নিলে, তা এসব বেকার যুবককে বিপথে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করুন, প্রতিবছর ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিন এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন। আর এভাবে চলতে থাকলে ছাত্ররাজনীতির অসুস্থতা কমে যাবে।
ওবায়েদুল কাদের বলেন, ‘সন্ত্রাসকে আমরা দূর করব, কিন্তু সন্ত্রাসীদের মাথায় যিনি ছাতা ধরে আছেন, তাঁকে নিস্তার দিলে কখনোই সন্ত্রাস দূর হবে না।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, দিন-ক্ষণ ঠিক করে বিশ্বের কোথাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় না। এ বিচারের ইস্যুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যাগুলোকে গুরুত্বহীন মনে করলে চলবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের মতো রক্তক্ষয়ী ঘটনা দুই নেত্রীর সহাবস্থানের পক্ষে অনুকূল নয়। যাঁরা মনে করেন দুই নেত্রী একসঙ্গে বসলে, বৈঠক করলে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে, তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, দারিদ্র্য থেকে মুক্তিসহ বেশ কিছু সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। তাই একটা ধাক্কা দিলেই শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটনো সম্ভব নয়।
বিরোধী দলের সংসদ বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল সংসদে যাওয়ার জন্য শর্তের পর শর্ত দিচ্ছে। কার কাছে তারা শর্ত দিচ্ছে? সরকার কি সংসদের মালিক? জনগণ আপনাদের সংসদে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। হরতাল আহ্বান, সংসদ বর্জন কি জনগণের প্রতি আপনাদের দায়িত্ববোধ?’
বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি এম এ এইচ হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. ফরহাদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিনাত হুদা প্রমুখ।

কারখানায় আগুনে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু

রাজধানীর খিলক্ষেতে একটি কারখানায় আগুনে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মারাত্মক দগ্ধ আরো ছয় শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে গুডনাইট কয়েল কারখানায় এ আগুনের ঘটনা ঘটে। কারখানার ভেতরে মশা তাড়ানোর স্প্রের কনটেইনারের স্তূপ থেকে বিস্ফোরণের পর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, কারখানার ভেতর থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ আরো ছয়জনকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতদের মধ্যে চারজনের শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে তাঁদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করার উপায় নেই। আমীরুল (২৮) নামের একজনের লাশ শনাক্ত করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ফায়ার সার্ভিসের কুর্মিটোলা, টঙ্গী, বারিধারা ও সদর দপ্তর স্টেশন থেকে ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পেঁৗছে রাত পৌনে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চললেও আর কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।
রাত ১২টায় দুর্ঘটনাস্থলে যান ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কারখানাটি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঁচজনের লাশ হাসপাতালের মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর সেখানে বাড়ির মালিক অথবা কারখানার কর্মকর্তাদের কাউকে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও দগ্ধ শ্রমিকরা জানান, রাতে কারখানাটিতে ১২ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছেন। তবে একজন ছাড়া কারো পরিচয় জানা যায়নি।
আগুনে দগ্ধ ছাইদুর রহমান (২৮), এনামুল হক (২৫), হামিদুল হক (২২), আনোয়ারুল ইসলাম (২৩), জুয়েল (২৫) ও ইকবালকে (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের শরীরের প্রায় পুরো অংশ দগ্ধ বলে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন।
দগ্ধ শ্রমিক ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, রাতে কারখানাটিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ মশা তাড়ানোর স্প্রের বোতল নষ্ট করার কাজ চলছিল। এ সময় একটি বোতলে বিস্ফোরণ ঘটলে আগুনের সূত্রপাত হয়। আর কিছু তাঁর মনে নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নামাপাড়ায় লেক সিটি কনকর্ড টাওয়ারের পাশের গুডনাইট কয়েল কারখানায় আগুন লাগার আগ মুহূর্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ হয়। পাশেই করুণা গার্মেন্টসের অবস্থান হওয়ায় অনেকে ধারণা করেছিল, সেখানেই আগুন ধরেছে। পরে এলাকাবাসী গিয়ে দেখে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে খ/১০০/২/ডি পূর্ব নামাপাড়া হোল্ডিংয়ের টিনশেড কারখানাটিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও জোবায়ের হোসেন জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে যান তাঁরা। তখন টিনশেড কারখানা থেকে আগুনের শিখা ২০-২৫ ফুট ওপরে দেখা যায়। এরপর শোনা যায় বেশ কিছু ছোট বিস্ফোরণের শব্দ। বিস্ফোরণে টিনের চালা পুরোটাই উড়ে গেছে। আনুমানিক ছয় মাস আগে টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কারখানাটি চালু করা হয়েছিল।
খিলক্ষেত থানার এএসআই শহীদ জানান, কারখানাটিতে মশা তাড়ানোর ম্যাট তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ রাখা ছিল। আগুন লাগার পর তাতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা গেছে।
খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। প্রতি রাতে সেখানে অল্প বয়সের শ্রমিকরা স্প্রের বোতল বদলের কাজ করে বলে শোনা গেছে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
দুর্ঘটনাস্থলে স্বজনের খোঁজে আহাজারি করছিল অনেকে। তাদেরই একজন হাজেরা বেগম জানান, তাঁর ছেলে রাসেল ও ভাই ইউসুফ কারখানাটিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁরা হতাহত হয়েছেন বলেই তাঁর ধারণা। তবে রাত ১২টা পর্যন্ত তিনি খোঁজ পাননি তাঁদের। রহিমা বেগম নামের আরেক মহিলাও খুঁজছিলেন এনামুল ও হামিদ নামের দুই আত্মীয়কে।

আজ শুভ বড়দিন

তিনি এসেছিলেন মুক্তির বারতা নিয়ে। এসে ছড়ালেন আলো। সত্য ও সুন্দরের পবিত্র-প্রভায় দীক্ষিত হলো অগুনতি আলোপিয়াসী। অনেক বছর আগে ছড়ানো আলোর পথ ধরে এখনো চলছে মুক্তি প্রার্থীদের পথচলা। তাদের বুকে পরম ভালোবাসায় বসবাস করছেন আলো ছড়ানো ঈশ্বরের প্রতিনিধি যিশু।

আজ বড়দিন। মুক্তির বারতা নিয়ে মানুষের কাছে আসা খ্রিস্ট ধর্মের প্রাণপুরুষ যিশুখ্রিস্টের শুভ জন্মতিথি সামনে রেখে এই দিনটি পালিত হবে। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব ঘিরে রাজধানীতে এখন অন্য রকম এক আমেজ। যিশুকে স্মরণ করতে ঘরে ও বাইরে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রস্তুতিপর্ব। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের ঘরে ও মনে বইছে আনন্দধারা। আজ তাদের প্রতিটি ঘর-মন স্নাত হবে আনন্দের ঝরনাধারায়।
বড়দিন সামনে রেখে দেশের সব গির্জা ও রাজধানীর বড় বড় হোটেল সাজানো হয়েছে রঙিন বাতি আর ফুল দিয়ে। বেথেলহেমের গরিব কাঠুরের গোয়াল ঘরেই জন্ম হয়েছিল যিশুর। এই আবহ সৃষ্টি করতে এই ধর্মে বিশ্বাসী অনেকের ঘরে বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালাও।
শুক্রবার রাতে প্রার্থনা সভার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন শুরু হবে। প্রার্থনার বিশেষ মাহাত্ম্য হচ্ছে, পৃথিবীতে যিশুর আগমন উপলব্ধি করা।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি_মুসলমানদের কাছে যিনি পরিচিত বিবি মরিয়ম হিসেবেই। ধর্মবিশ্বাস বলে, 'ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়' মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত গ্যাব্রিয়েলের (জিব্রাইল) কথা মতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস (যিশু)। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত এ শিশুটিই বড় হয়ে প্রচার করেন খ্রিস্ট ধর্ম। ইসলাম ধর্মবিশ্বাসে তাঁকে বলা হয় হজরত ঈসা (আ.)।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলের আর্চবিশপ হাউসে প্রধান আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তা কেক কেটে বড়দিন উৎসবের সূচনা করেন। সংবাদকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত এ মিলনমেলায় পৌলিনুস কস্তা বলেন, 'বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাব_এটাই হোক আমাদের দীপ্ত শপথ।'
হোটেলে বিশেষ আয়োজন : বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দি ওয়েস্টিন ঢাকা, র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন, হোটেল শেরাটনসহ অন্যান্য হোটেল বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বড়দিনে এসব হোটেলে শিশুদের জন্য থাকবে ক্রিসমাস কিডস পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সান্তাক্লজ আসবেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে।
বাণী ও শুভেচ্ছা : বড়দিন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সব খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বাণীতে তিনি বলেছেন, 'সত্য, ন্যায় ও করুণার পথপ্রদর্শক মহান যিশুখ্রিস্ট এ দিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বের সব খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর কাছে তাই এ দিনটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। সব ধর্মের মর্মবাণী শান্তি ও মানবকল্যাণ। যুগে যুগে মহামানবগণ মানুষের সৎ পথে চলার দিশারী হয়েছিলেন। মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ন্যায় ও কল্যাণের পথে চলতে। মহান যিশুখ্রিস্টও একইভাবে অনুসারীদের সৎকর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে গেছেন।
এ ছাড়া পৃথকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম, মি সিরিল সিকদার ও ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ এবং বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী।

খিলক্ষেতে কয়েল কারখানায় আগুন, নিহত ৫

রাজধানীর খিলক্ষেতে মশা নিধনের কয়েল তৈরির একটি কারখানায় আগুনে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। দমকল বাহিনীর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মোহাম্মদ শাহীদুল্লাহ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এ পর্যন্ত পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর লাশ আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।"
এর আগে দমকল কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে একজন হলেন ওই কারখানার শ্রমিক আমীরুল (২৮)। তার লাশ কারখানার ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকিদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। শুক্রবার রাত সাড়ে ন'টার দিকে খিলক্ষেতের নামাপাড়ার বোর্ডগার্ড এলাকায় গুডনাইট কয়েল ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। একঘণ্টা পর দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জানান, গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরো ১০ জনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইকবাল হোসেন (৩০) সাংবাদিকদের জানান, রাতে পুরনো ও বাতিল অ্যারোসলের বোতল নষ্ট করার কাজ চলছিল। এ সময় একটি বোতলে বিস্ফোরণ হলে আগুনের সূত্রপাত হয়। গুলশান অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত সাতজন। আরো মৃতদেহ আছে কিনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। দমকল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, দমকলের আটটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।

অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কাঃ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠালে কারাগারে হত্যা করা হতে পারে তাঁকে

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হলে, সে দেশের কারাগারে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। এ ব্যাপারে বড় বেশি ঝুঁকি রয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ নিজেই এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্রিটেনের হস্তান্তর করার বিষয়টি ‘রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব’।

গোপন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করায় অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ব্রিটেন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে পারে। তা ঘটলে পরিণতি কী হতে পারে, এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক বিষয়। আমরা জানি, আমাকে অন্য দেশে নিতে ব্রিটেনের রাজনীতিকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা চলতে পারে।’ তিনি বলেন, ব্রিটেনের আইনে রাজনৈতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত কাউকে অন্য দেশের হাতে হস্তান্তর না করার বিধান রয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তিও এক ধরনের রাজনৈতিক অপরাধ।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, তাঁর প্রতি মানুষের জোরালো সমর্থন রয়েছে। তাই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা ব্রিটেনের পক্ষে খুব কঠিন কাজ হবে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ব্রিটেন বা সুইডেন থেকে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র পাঠানো হলে তাঁর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে সে দেশের কারগারে তাঁকে ‘জ্যাক রুবি ধাঁচে’ হত্যা করা হতে পারে।
একটি মার্কিন নৈশক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি ডালাসের একটি পুলিশ স্টেশনে লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে গুলি ছুড়ে হত্যা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অসওয়াল্ডকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগেই রুবি তাঁকে হত্যা করেন।
গত মাসের শেষ দিকে আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে উইকিলিকস। এর পরই অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকসের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এএফপি, বিবিসি।