Thursday, May 24, 2012

কক্সবাজারে সংঘর্ষে ছাত্র-পুলিশসহ আহত ৫০, সড়ক অবরোধ

কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সড়ক অবরোধ করে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। তারা অন্তত ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংক রোড এলাকায় শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ করে। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। দুপুর ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।
সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা হ্রাসের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয়।

তারা মূর্হুতের মধ্যে সড়কের মাঝখানে টায়ারে আগুন দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা দুটি ট্রাক ও ৫টি চেয়ার কোচ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় কক্সবাজার সরকারি কলেজের পাশ থেকে একদল শিবির কর্মী পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে উভয়পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ
বাঁধে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা কমানো হয়েছে। এতে শিক্ষার মান দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি নেমে গেছে।

এর প্রতিবাদে তারা লিংক রোড এলাকায় মানববন্ধন করলে পুলিশ-র‌্যাব সদস্যরা তাদের লাঠিচার্জ করে। এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ  ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেছেন, সকাল ১০ টায় সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আজাদসহ ২০ জন পথচারী আহত হয়েছে। দুপুর ১২ টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে আটক করেছে।

কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেছেন, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা কমানোর বিষয়ে কোন নির্দেশনা তারা পাননি।

বিষয়টি পত্রিকার সূত্রে শিক্ষার্থীরা জেনে এ আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের সরকারের নিদের্শনা না পাওয়ার আগে আন্দোলন করতে নিষেধ করা হয়েছিল।

কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল

তাপদাহ চলছে বাংলাদেশ জুড়ে। মাঝে-মধ্যে দু’-এক ফোটা বৃষ্টি হলেও খরতাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। একই সঙ্গে চলছে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং।
তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারেও। কক্সবাজারে পর্যটকের দেখা মিলছে না তেমন।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল চলছে। আবাসিক হোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অবশ্য প্রতিবছরই এসময়টায় পর্যটকের আকাল চলে। কারণ, সমুদ্রের লোনা বাতাসে তাপদাহের হলকাটা বেশি থাকে। ফলে পর্যটকরা এসময়টায় এখানে এসে স্বস্তি পান না।

তবে কিছুটা হলেও এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যেত- যদি লোডশেডিং না থাকতো। পর্যটকরা সমুদ্রে গোসল বা সমুদ্র তীরে শুয়ে বসে সময় কাটান। এরপর রুমে ফিরে আহার করেন বা বিশ্রাম নেন। সেসময় যদি পাখা না চলে, তাহলে গরমের হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাবেন।

তাই ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতাও পর্যটনের কিছুটা হলেও ক্ষতি করেছে। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল না করলে পর্যটকরা এখানে কীভাবে আসবেন। কীভাবেই বা তারা নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবেন।

এসব কারণে এখানে পর্যটকের দেখা মিলছে না। পর্যটক না আসায় বিলাসবহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস--সবারই একই অবস্থা বিরাজ করছে। 

এছাড়া কক্সবাজারে এখন যে তাপমাত্রা তা পর্যটকদের জন্য অসহনীয়। একারণে কেউ আর কক্সবাজারমুখি হতে চাইছেন না। তবে লোডশেডিং না থাকলে পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত। সবাই চান অবসর সময় বসে থাকলেও যাতে গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কক্সবাজারে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তাপদাহের তীব্রতা বেড়েছে। গত ১৯ মে থেকে তাপদাহ শুরু হয়েছে। এখন গড়ে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বনিম্ন ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র চলছে।

আর এ তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও বেড়েছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতিও বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ আরও এক মেগাওয়াট বাড়লেও জাতীয় গ্রিড থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎও বেশি পাওয়া যায়নি। তাই বিদ্যুৎ সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে।

পিক আওয়ারে জেলাব্যাপী ৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকে। ৫৯ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া যায় ২২ মেগাওয়াট ও সর্বনিম্ন অফপিক আওয়ারে মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎকে পিক আওয়ারে ১০ মেগাওয়াট ও অফপিক আওয়ারে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

কক্সবাজারের বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ডায়মন্ড প্যালেস গেস্ট হাউসের মালিক ও হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য বছর কক্সবাজারে পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে সিজন বা অফ সিজন বলে তেমন কোনো ফারাক ছিল না। স্বাভাবিকভাবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন বেশি হলেও পুরো বছর জুড়েই পর্যটক থাকতো কমবেশি।

২০১১ সালের মে মাসের পরিসংখ্যান মতে এখন ৮৫ শতাংশ পর্যটক কম আসছেন। এর পেছনে চারটি কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আবুল কাসেম সিকদার জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি অপর ২টি কারণও পর্যটক বিমুখ হওয়ার অন্যতম কারণ। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। কখনও হরতাল, কখনও অবরোধ নিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের ভেতর যাত্রীবাহী চেয়ারকোচ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় পর্যটকদের ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে।

তিনি জানান, বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের লোকজন যাত্রীদের নিয়ে টানাটানি শুরু করে। পর্যটকদের প্রলোভন দেখিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে তারা। যানবাহন কেন্দ্রিক ভোগান্তির কারণেও পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।

হোটেল মালিক সমিতির নেতা আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, পর্যটকের খরা চলার কারণে এখন দেড় হাজার টাকার একটি কক্ষ ৩০০ টাকায় প্রতিরাত হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল সী কুইনের জিএম স্বপন ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটক এখন নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যটক ৯০ শতাংশ কম। ১০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার এলেও তারা স্বস্তি পাচ্ছে না। তিনি জানান, এখন কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের কক্ষ ভাড়াও ৫০ শতাংশ কম।

অপর একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার করিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শূন্যের কোঠায় নেমেছে বললেই চলে। এ পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দুর্দিনে আছেন।

কক্সবাজারে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ রাখাইন তরুণীদের ব্যবস্থাপনায় শহরের টেকপাড়ার বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসায়ী রাখাইন তরুণী মিন মং বাংলানিউজকে জানান, বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসা হলো পর্যটককেন্দ্রিক। পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে।

পর্যটক না আসার কারণে বিলাস বহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস সমূহের কক্সবাজারে যাতায়াত কমেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন শ্যামলী পরিবহনের ইনচার্জ খোরশেদ আলম শামীম। তিনি জানান, অন্য সময় প্রতিদিন এখানে ৫টি করে বাস আসতো। এখন তা নেমেছে ২টিতে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকার রোদেলা রেস্তোরাঁর মালিক আবদুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসার কারণে তাদের খাবার বেচা-বিক্রি একেবারেই কম।

কক্সবাজারে প্রতিদিন ১২টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনানীর নির্বাহী সম্পাদক সাঈদ মু. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসায় পত্রিকা ব্যবসায়ও ধ্বস নেমেছে। পর্যটক আগমন বাড়লে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বাড়াতে ও পণ্যের বিক্রি বাড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। একই সঙ্গে পর্যটকরা কক্সবাজারে এসে জাতীয় পত্রিকার সঙ্গে স্থানীয় পত্রিকাও পড়েন।