Sunday, March 04, 2012

মৎস্যভান্ডার সম্পর্কে ধারণা নেই খোদ মৎস্য বিভাগের-সমুদ্র জরিপ হচ্ছে না ২১ বছর by আব্দুল কুদ্দুস

‘১০ বছর আগেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে এলিফ্যান্ট পয়েন্টে সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ত ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। উপকূল থেকে সকালে গিয়ে রাতে মাছ ধরে পরের দিন সকালে ঘাটে ফিরতেন জেলেরা। মাছ বিক্রির টাকায় চলত জেলেদের সংসার। আর এখন সাগরের ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটারেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ থেকে ২০ দিন সাগরে কাটিয়ে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে সামান্য কিছু মাছ নিয়ে।’


গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলেন স্থানীয় জেলে আবদুল মজিদ (৫৬)। তিনি ২৬ বছর ধরে সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছেন। মজিদের কথার সমর্থন করেন জেলে মনির উল্লাহ (৪৫) ও গিয়াস উদ্দিন (৪৯)।
নুনিয়াছটা এলাকার ট্রলার মালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেলে খরচ হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সাগরে থাকতে হয় ১০ থেকে ১৫ দিন। ঘুরে ফিরে প্রায় সময় মাছ ছাড়াই ফিরছে ট্রলারগুলো। তখন খরচের তালিকা দীর্ঘ হয়।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, জেলার আটটি উপজেলায় ছোটবড় সাত হাজার ট্রলার প্রায় ১২০ কিলোমিটারের এই বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ট্রলার মাছ ছাড়াই ঘাটে ফিরে আসছে। মাছ না থাকায় হাজার হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। এতে ৮০ হাজারের বেশি জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। বঙ্গোপসাগর ক্রমান্বয়ে মাছ শূন্য হচ্ছে কেন? মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ঠিক আছে কিনা-এসব অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে।
জরিপ কার্যক্রম বন্ধ ২১ বছর ধরে: বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানায় মৎস্যসম্পদ বা ভান্ডারের মজুদ কত? এই হিসাব খোদ মৎস্য বিভাগেই নেই। কারণ গত ২১ বছর ধরে সাগরের মৎস্যভান্ডারের জরিপ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সাগরে বিচরণরত মাছের প্রজাতি, মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র এবং মজুদের পরিমাণ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে না।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমার বঙ্গোপসাগরের মৎস্যভান্ডারের মজুদ নির্ণয়, মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করাসহ নানা সম্ভাবনার দুয়ার উদ্ঘাটনের জন্য সরকার অত্যাধুনিক একটি সমুদ্র জরিপ জাহাজ কিনছে। সমুদ্র জরিপসহ মাছের বংশবৃদ্ধি-উন্নয়ন, পরিকল্পনা, মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমপ্রতি প্রায় ১০০ কোটি টাকার ‘মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকায় জরিপ জাহাজ কেনা হচ্ছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এবং মালয়েশিয়া সরকার যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দিতে গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকার সাভারে মৎস্য কর্মকর্তাদের তিন দিনের বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কর্মশালায় যোগ দেন কক্সবাজার সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মইনুদ্দিন আহমদ।
মইনুদ্দিন আহমদ জানান, ওই কর্মশালায় বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ মজুদ নির্ণয়সহ সামুদ্রিক নানা বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চলতি সালেই এই সমুদ্র জরিপ পরিচালিত হবে।
তিনি আরও জানান, ২১ বছর ধরে বঙ্গোপসাগর জরিপের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই সাগরের কোন লেভেলে কোন কোন মাছ বিচরণ করে, তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাছ আহরণও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৭২ সালে জাপানের সহায়তায় প্রথম বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদ জরিপ পরিচালিত হয়। এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিশ্বখাদ্য সংস্থার (এফএও) সহায়তায় অনুদানে পাওয়া দুটি জাহাজ ‘আরভি অনুসন্ধানী’ ও ‘আরভি মাছরাঙা’ দিয়ে সমুদ্র জরিপের কাজ পরিচালনা করা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে জাহাজ দুটি বিকল হলে জরিপের কার্যক্রমও দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বন্ধ থাকে।

কক্সবাজারে দুই দিনের অকালবর্ষণঃ লবণ শুঁটকি রবিশস্য উৎপাদন ব্যাহত, বোরোর জন্য আশীর্বাদ

কক্সবাজারে দুই দিন ধরে অকাল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি।
বর্ষণে কক্সবাজার উপকূলের ৭০ হাজার একর জমির লবণের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

শুক্রবার বৃষ্টি শুরুর পর পরই বন্ধ হয়ে যায় লবণের উৎপাদন। বৃষ্টির কারণে শুঁটকিমহাল ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে বর্ষণ এ এলাকার বোরো ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কক্সবাজারে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলাসহ প্রায় ৭০ হাজার একর উপকূলীয় জমিতে প্রতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যান্য মৌসুমের মতো এবারও গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে লবণের উৎপাদন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ প্রকল্পের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার চলতি মৌসুমে দেশে লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এবার মৌসুমের শুরুতে লবণের দাম মাঠপর্যায়ে কম ছিল। এ কারণে উৎপাদন শুরু হয় বিলম্বে। এবার ভারত ও মিয়ানামার থেকে চোরাই পথে লবণ পাচার বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে লবণের দাম বেড়ে যায়। শেষ সময়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে উৎপাদনকারীরা মাঠে নামে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিসিকের হিসাব মতে, উৎপাদন হয়েছে প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। গত বছরও উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ মেট্রিক টন। দেশে প্রতিবছর লবণের চাহিদা রয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
বিসিকের এক কর্মকর্তা জানান, লবণ সূর্যতাপে প্রাকৃতিকভাবে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি থেকে উৎপাদন করা হয়। এত দিন শীত মৌসুম থাকায় সূর্যতাপের প্রখরতা ছিল না। তাই উৎপাদনের পরিমাণ ছিল কম। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলের প্রখর সূর্যতাপেই বেশি লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। আগামী মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত হচ্ছে লবণ উৎপাদনের সময়। বর্ষণে উৎপাদন সাময়িক ব্যাহত হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন আশা করছেন বিসিক কর্মকর্তারা।
এদিকে অব্যাহত বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো চাষে এক প্রকার বিপর্যয় নেমে এসেছিল। আর এমন সময়ে গত দুই দিনের বৃষ্টিপাত বোরো চাষের জন্য 'বড় নিয়ামক' হয়ে এসেছে। কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং গ্রামের বোরোচাষি আবুল মনসুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, এবারের রমজান মাস থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল না। মনে করেছিলাম বিদ্যুতের লোডশেডিং নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এ কারণে এবার আশায় বুক বেঁধে নেমেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলছিলেন দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি জমিতে চাষ দিয়েছিলাম। কিন্তু চাষের মাঝপথে এসে দেখি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। ফসলের ত্রাহি অবস্থার মুখে অবশেষে গতকালের বর্ষণ পেয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিতে কক্সবাজার উপকূলের শুঁটকি মহাল এবং রবিশস্য আলু, টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়সসহ অন্যান্য সবজিও ক্ষতির শিকার হয়েছে।

মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানে দেবে গেছেঃ দুর্ঘটনা ঘটছে চকরিয়ায়

ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সেতুর মাঝখানে বেশকিছু অংশ দেবে যাওয়া এবং কয়েক স্থানে রেলিং ভেঙে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ক্ষতস্থানে জোড়াতালি এবং পাটাতন দিয়ে কোনোভাবে যানবাহন চলাচল উপযোগী করলেও সেই উদ্যোগ বেশিদিন টিকছে না। এটিকে স্থানীয় অনেকে 'সওজের কবর' বলে আখ্যায়িত করছেন। এর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে পথচারীরা। এমনকি দেবে যাওয়া স্থানের উভয়পাশে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং দেওয়া হয়নি সাইনবোর্ডও।
মাতামুহুরী সেতুর এ সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চকরিয়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় তেমন একটা সমস্যা না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার পর্যটকবাহী বাসগুলো এই ব্রিজ পার হওয়ার সময় এই সওজর কবরের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে এবং অনেক সময় দুর্ঘটনায়ও পতিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'ওই ব্রিজের মাত্র দুইশ' গজ দূরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়। যদি সময়মতো এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ব্রিজের বিশাল অংশ ধসে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ব্রিজের নিকটবর্তী সংলগ্ন বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যান চলাচল। আর এ ধরনের কিছু ঘটলে হয়তো-বা তখনই কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে এবং তোড়জোড় চালানো হবে।
কাকারা ইউনিয়নের লাগোয়া হাজিয়ান এলাকার বাসিন্দা বাবু লাল সেন বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের মাঝখানের সওজ'র ওই কবরের কারণে সমপ্রতি আমার বাবা রবীন্দ্র লাল সেনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমার জানামতে এ পর্যন্ত সওজর এই কবরের কারণে অসংখ্য পথচারী হতাহত হয়েছে।'
যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব বলেন, 'ওটা তো রাস্তা নয় যে, আমরা চাইলে সমস্যা সমাধান করতে পারবো। এরপরেও আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার তা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমাদের উচ্চ পর্যায়ে অনেকবার লেখালেখি করা হয়েছে। কিন্তু, তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।'
প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোতালেব বলেন, 'বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি নতুন ব্রিজ করার জন্য প্রোফর্মা তৈরি করে সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সংশ্লিষ্টরা এসে মাটি পরীক্ষা, সার্ভেসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পার হলেও এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।' তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'এই সরকারের আমলে হয়তো ওই ব্রিজের কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনটি আমার মনে হচ্ছে না।'
সওজর চকরিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি.ই) আমির হোসেন বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যানবাহন চলাচলে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। গত বছরের প্রথমদিকে ব্রিজের মাঝখানে দেবে যাওয়া স্থানে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যান চলাচল উপযোগী করা হয় এবং এ পর্যন্ত অন্তত চারবার সংস্কার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'লবণ বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এমনিতেই মহাসড়কের নাজুক অবস্থা। এ কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও ব্রিজের এই সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না।'
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় কক্সবাজারস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার) জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের এই সমস্যার কথা আমি আপনার কাছ থেকে জেনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দেবে যাওয়া স্থানের উভয় পাশে চালকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহন করা হবে।' বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে আরেকটি নতুন ব্রিজ স্থাপনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'নতুন করে ওই ব্রিজের ডিজাইন কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।' তবে মাটি পরীক্ষা এবং সার্ভে করার কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন আরাকান সড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয় দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে। এই ব্রিজটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় 'দি ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড' নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বছর ধরে এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এই ব্রিজের দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে সেই থেকে তেমন কোনো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে এই ব্রিজের রেলিংও। এতে এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে।
তবে এ সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং সওজর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমান ব্রিজটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে এবং নতুন ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো বেগ পেতে হবে না। তাদের মতে, এখনো বর্তমান ব্রিজটির সেই ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। শুধু অভাব প্রয়োজনীয় উদ্যোগের।

দুই দিনের ভারী বৃষ্টিঃ মহেশখালীতে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার লবণ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গত শুক্র ও গতকাল শনিবারের ভারী বৃষ্টিতে লবণচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে অন্তত ছয় কোটি টাকার লবণ। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা লবণ চাষ শুরু করেন।

তাঁরা মাঠ থেকে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করছিলেন মণপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে। লবণচাষিরা জানান, গত ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মণ সাদা লবণ ১৮০ টাকা ও কালো লবণ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে তাঁদের মুখে হাসি ফোটে এবং লবণের বাম্পার ফলনের জন্য পুরোদমে কাজ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত মাস থেকে মাঠপর্যায়ে লবণের দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার পরও মাঠে লবণ উৎপাদন করতে মরিয়া হয়ে চাষিরা কাজ করেন। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে চাষিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা লবণ ভেসে যায়।
উপজেলা লবণ চাষি ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও বড়মহেশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশাহ প্রথম আলোকে বলেন, এতে এই উপজেলার লবণচাষিরা অন্তত ছয় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মাতারবাড়ি ইউনিয়নের মগডেইল এলাকার লবণচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ বছর লবণের ন্যায্যমূল্যের আশায় পাঁচ একর জমিতে লবণ চাষ করেছি। আশা করেছিলাম, এবারের লবণ বিক্রির টাকা দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেব। কিন্তু অসময়ে প্রবল বৃষ্টির পানিতে মাঠ থেকে প্রায় ৮০০ মণ লবণ ভেসে গেছে।’
কালারমার ছড়া ঝাপুয়া এলাকার লবণচাষি মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও তাঁরা হাল ছাড়েননি। এই মুহূর্তে বৃষ্টি আর না হলে মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের সময় লাগবে আরও ১৫ দিন। এ সময় অনেক চাষি তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের গবেষণা কর্মকর্তা এ টি এম ওয়ালি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের লবণ মৌসুমে মহেশখালীতে ১৭ হাজার ৮০০ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। কিন্তু গত দুই দিনে জেলার অন্তত ২৫-৩০ হাজার টন উৎপাদিত লবণ ভেসে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে মাঠপর্যায়ে পুনরায় লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের আরও সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

কক্সবাজারের উন্নয়নে ২৭ দফা দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি

কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নিরসনে
২৭ দফা দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কক্সবাজার জেলা শাখা।

গতকাল শনিবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। ২৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০ মার্চ শহরের পাবলিক হল মাঠে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির জেলা আহ্বায়ক ইদ্রিস আহমদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নানা সম্পদে সমৃদ্ধ কক্সবাজার নানা ক্ষেত্রে অবহেলিত। শহরের দৃষ্টিনন্দন পাহাড়গুলো ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের নামে ৩০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর দুই পাড় দখলের মহোৎসব চলছে। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সভাপতি দিলীপ দাশ, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বশিরুল আলম প্রমুখ।
২৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন দ্রুত সম্প্রসারণ, কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করে নগর পরিকল্পনা বোর্ড গঠন, নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ, সরকার-নির্ধারিত মূল্যে এলপি গ্যাস সরবরাহ, কক্সবাজার পর্যন্ত গ্যাসলাইন সম্প্রসারণ ইত্যাদি।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ বলেন, কক্সবাজার শহরের আয়তন, কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০ মার্চ পাবলিক হলের শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। দাবি আদায়ে ওই সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রামুর ঐতিহ্যবাহী প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার ধসে পড়ার আশঙ্কা

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি এলাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
যে কোনো মুহূর্তে এটি ধসে পড়ার আশঙ্কায় নতুন করে বনবিহার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।

সরেজমিন জানা যায়, ১৭৬৭ সালে তত্কালীন রাখাইন সম্প্রদায় প্রায় ১২ একর জমিতে এ বনবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে কাঠ দিয়ে তৈরি বনবিহারের সঙ্গে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বুদ্ধধাতু জাদি, সীমাবিহার ও চৈত্যমন্দির। কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন অতি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এ মন্দিরে শতাধিক বুদ্ধমূর্তি ছিল। যথাযথ তদারকি ও রক্ষণা্বেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ মূর্তি উধাও হয়ে গেছে। অনেক মূর্তি বিনষ্ট ও স্থান সঙ্কুুলান না হওয়ায় জেলার বিভিন্ন মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে। প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ, শ্রীমত্ সারমিত্র মহাথের জানান, এটি বহু পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দির। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে রাখাইন সম্প্রদায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে। পরে মিয়ানমারে চলে যান। সেই থেকে গ্রামবাসী এ মন্দিরটি দেখাশোনা করে আসছেন। বর্তমানে মন্দিরটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এ বিহারের পাশে নতুন একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় পুরনো এ মন্দিরটি এখন ভেঙে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া জানান, প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মন্দির এলাকাবাসী রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা, স্বর্গপুরী উত্সব, কঠিন চীবর দানসহ নানা ধর্মীয় আয়োজনে দূর-দূরান্তের পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে এ মন্দির সারাবছর মুখরিত থাকে। তিনি এ মন্দিরের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কামনা করেছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক জানান, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার একটি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধমন্দির। এ মন্দিরের উন্নয়নে সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হবে। মন্দিরের জমি দখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।