Sunday, March 04, 2012

মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানে দেবে গেছেঃ দুর্ঘটনা ঘটছে চকরিয়ায়

ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সেতুর মাঝখানে বেশকিছু অংশ দেবে যাওয়া এবং কয়েক স্থানে রেলিং ভেঙে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ক্ষতস্থানে জোড়াতালি এবং পাটাতন দিয়ে কোনোভাবে যানবাহন চলাচল উপযোগী করলেও সেই উদ্যোগ বেশিদিন টিকছে না। এটিকে স্থানীয় অনেকে 'সওজের কবর' বলে আখ্যায়িত করছেন। এর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে পথচারীরা। এমনকি দেবে যাওয়া স্থানের উভয়পাশে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং দেওয়া হয়নি সাইনবোর্ডও।
মাতামুহুরী সেতুর এ সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চকরিয়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় তেমন একটা সমস্যা না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার পর্যটকবাহী বাসগুলো এই ব্রিজ পার হওয়ার সময় এই সওজর কবরের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে এবং অনেক সময় দুর্ঘটনায়ও পতিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'ওই ব্রিজের মাত্র দুইশ' গজ দূরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়। যদি সময়মতো এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ব্রিজের বিশাল অংশ ধসে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ব্রিজের নিকটবর্তী সংলগ্ন বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যান চলাচল। আর এ ধরনের কিছু ঘটলে হয়তো-বা তখনই কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে এবং তোড়জোড় চালানো হবে।
কাকারা ইউনিয়নের লাগোয়া হাজিয়ান এলাকার বাসিন্দা বাবু লাল সেন বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের মাঝখানের সওজ'র ওই কবরের কারণে সমপ্রতি আমার বাবা রবীন্দ্র লাল সেনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমার জানামতে এ পর্যন্ত সওজর এই কবরের কারণে অসংখ্য পথচারী হতাহত হয়েছে।'
যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব বলেন, 'ওটা তো রাস্তা নয় যে, আমরা চাইলে সমস্যা সমাধান করতে পারবো। এরপরেও আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার তা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমাদের উচ্চ পর্যায়ে অনেকবার লেখালেখি করা হয়েছে। কিন্তু, তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।'
প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোতালেব বলেন, 'বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি নতুন ব্রিজ করার জন্য প্রোফর্মা তৈরি করে সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সংশ্লিষ্টরা এসে মাটি পরীক্ষা, সার্ভেসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পার হলেও এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।' তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'এই সরকারের আমলে হয়তো ওই ব্রিজের কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনটি আমার মনে হচ্ছে না।'
সওজর চকরিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি.ই) আমির হোসেন বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যানবাহন চলাচলে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। গত বছরের প্রথমদিকে ব্রিজের মাঝখানে দেবে যাওয়া স্থানে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যান চলাচল উপযোগী করা হয় এবং এ পর্যন্ত অন্তত চারবার সংস্কার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'লবণ বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এমনিতেই মহাসড়কের নাজুক অবস্থা। এ কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও ব্রিজের এই সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না।'
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় কক্সবাজারস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার) জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের এই সমস্যার কথা আমি আপনার কাছ থেকে জেনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দেবে যাওয়া স্থানের উভয় পাশে চালকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহন করা হবে।' বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে আরেকটি নতুন ব্রিজ স্থাপনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'নতুন করে ওই ব্রিজের ডিজাইন কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।' তবে মাটি পরীক্ষা এবং সার্ভে করার কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন আরাকান সড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয় দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে। এই ব্রিজটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় 'দি ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড' নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বছর ধরে এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এই ব্রিজের দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে সেই থেকে তেমন কোনো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে এই ব্রিজের রেলিংও। এতে এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে।
তবে এ সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং সওজর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমান ব্রিজটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে এবং নতুন ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো বেগ পেতে হবে না। তাদের মতে, এখনো বর্তমান ব্রিজটির সেই ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। শুধু অভাব প্রয়োজনীয় উদ্যোগের।

No comments:

Post a Comment