Tuesday, April 29, 2014

অপহরণ চলছেই- প্রধানমন্ত্রী কি দেশের ‘এসওএস’ বার্তা শুনছেন?

অপহরণ এখন প্রতিদিনের নয়, প্রায় প্রতি ঘণ্টার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অপহূত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যাগণনা চলছে, কিন্তু প্রতিকার মিলছে না। অপহূত ব্যক্তিদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু কারা প্রতিদিন অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েও 'অদৃশ্য' থেকে যাচ্ছে, তার উত্তর মিলছে না। এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে সরকার-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বিকার।
গত রোববার নারায়ণগঞ্জে দিনদুপুরে কাউন্সিলরসহ পাঁচজন অপহরণের সংবাদ বাসি হতে না হতেই গতকাল সোমবার ভোরে কালিয়াকৈরে অপহূত হলেন দুই ভাই। রোববার ভোরে টেকনাফে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন দুই ব্যক্তি। বছরের শুরু থেকে গড়ে প্রতিদিন একটি করে অপহরণের ঘটনা ঘটলেও সরকারের আচরণে উদ্বেগের লক্ষণ নেই।
আলোচিত অপহরণের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণী ও পেশার নাগরিক রয়েছেন। সম্প্রতি পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহূত হলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের তোড়জোড়ের মধ্যে তাঁকে ফেরত পাওয়া যায়। প্রশ্ন ওঠে, অন্যান্য অপহরণের ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা দেখাল না কেন? এ প্রেক্ষাপটেই নারায়ণগঞ্জের পাঁচ অপহূতের পরিবার তাদের স্বজনদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। প্রধানমন্ত্রীকেই যদি এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হতে হয়, তাহলে পুলিশ-প্রশাসনের কাজ কী, তা জানতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৮ জন অপহূত হন। এর মধ্যে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৩ জনের। অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয় ২৪ জনকে। পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় ১৪ জনকে। কিন্তু ১৮৭ জনের কোনো খোঁজই নেই। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অপহরণ ও ক্রসফায়ারের সংখ্যা কমে আসে। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই বছর এই সংখ্যা গত বিএনপি আমলের পর্যায়ে উঠে বেড়ে হয় ২২৯। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অপহরণের মামলা হয়েছে তিন হাজার ৩৯১টি। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮৭০টি, ২০১১ সালে
৭৯২টি, ২০১২ সালে ৮৫০টি ও ২০১৩ সালে ৮৭৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অপহরণের ঘটনা ঘটে ১৯৬টি।
বেশ কিছু অপহরণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় পেশাদার অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে পুলিশ ও র‌্যাবের নাম ও পোশাক ব্যবহার করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে জনগণ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। আইন, বিচার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থা ধরে রাখা, জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার আশ্বাস বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে সরকারকে সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে।
আলাদা আলাদা অপহরণের ঘটনায় নয়, বরং অপহরণের দক্ষযজ্ঞ স্থায়ীভাবে বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর জোরালো উদ্যোগ আশা করি। আজকের মুহূর্তে এটাই দেশের শীর্ষ অভিভাবকের কাছে জাতির এসওএস (আমাদের প্রাণ বাঁচাও) বার্তা।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ- জবাবদিহির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সাধারণত কোনো দুর্ঘটনার দায় সরকার নিতে চায় না। কিন্তু সাগর উপকূলে ফেরিডুবির ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং হং-উন তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি ও ফেরিডুবি রোধে ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। যদিও ইউরোপ-আমেরিকায় এ ধরনের পদত্যাগের উদাহরণ প্রচুর, কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা বিরল। পদত্যাগের সময় তিনি বলেন, 'ফেরিডুবির পর ১০ দিনেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু যাঁরা এখনো তাঁদের হারানো স্বজনদের খুঁজে পাননি, তাঁদের কান্নায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।' কতটা গণতন্ত্রমনা হলে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে পারেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। তাঁর পদত্যাগ জবাবদিহির একটি নতুন সোপান রচনা করল।
ওই ফেরি দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়, আরও শতাধিক নিখোঁজ। এ ঘটনায় ফেরির পাইলট ও আরও ১৪ জন ক্রু গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। আরও বেশি যাত্রী আটানোর জন্য ওই ফেরির মূল কাঠামো পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ফেরির ভারসাম্য সরে গিয়েছিল ও এ কারণে এতে যাতায়াত অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। সে ক্ষেত্রে একে সাদামাটা দুর্ঘটনা বলা চলে না, এটি ছিল মানুষের সৃষ্ট মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়াই হলো মূল কথা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার যদি তাদের নির্বাচকদের চাহিদা পূরণ করতে না পারে, যদি সরকারের ব্যর্থতার জন্য দেশের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নামে, তাহলে তার দায় পড়ে সরকারের ওপরই।
প্রতিবেশী ভারতেও রেল দুর্ঘটনার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। অথচ বাংলাদেশে কোনো মন্ত্রী বা আমলাকে দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে দেখা যায় না। এমনকি তারা ব্যর্থতার দায়ও স্বীকার করতে চান না। গত বছর রানা প্লাজা ধসের পর যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিতেন, তাহলে মন্ত্রীবিশেষ বা সরকারের ভাবমূর্তি খাটো হতো না, বরং জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া যেত। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা থেকে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালকদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।

দখলের জন্য লুটপাট!-রেলওয়ের রজ্জুপথটি বিক্রি করা যাবে না

দখল ও লুটপাটের জন্য কতটা পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া যায়, তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ রেলওয়ের একমাত্র রজ্জুপথ বিক্রির প্রস্তাব থেকে। ১৯৬৪ সালে স্থাপিত এই রজ্জু রেলপথ বাংলাদেশ রেলওয়ের এক ঐতিহ্যের অংশ। দুর্বৃত্ত চক্র এই পথকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে অনেকটা সফলও হয়েছে। এ কারণে রেলওয়ে থেকেই এখন পথটি বিক্রি করে দেওয়ার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রস্তাব উঠেছে।
অন্যান্য পথে পাথর আনা সহজ হওয়ায় এই পথ এখন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। রেলওয়ের ঐতিহ্য হিসেবে এই রজ্জুপথ একটি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবেই রয়ে গেছে। কিন্তু প্রভাবশালী চক্র এই রজ্জুপথের সংরক্ষিত বাংকার থেকে গত দুই বছরে অন্তত ৫০ কোটি টাকার পাথর তুলে নিয়ে গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কেন তা ঠেকাতে পারল না, নাকি তাদের যোগসাজশে কাজটি হয়েছে, সেটা সত্যিই এক বড় প্রশ্ন।
সংরক্ষিত এই বাংকারগুলো থেকে পাথর তুলে নেওয়ার ফলে রজ্জুপথই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পাথর তোলার ফলে বিভিন্ন স্থানে ১০ থেকে ১৫ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রজ্জুপথ বিভিন্ন স্থানে উপড়ে গেছে। লুটপাটের এই প্রাথমিক পর্ব শেষ হওয়ার পর পুরো জায়গাটি বিক্রি করে লুটপাটের দ্বিতীয় পর্ব সারার উদ্যোগ চলছে।
সংরক্ষিত স্থাপনায় লুটপাট ঠেকাতে ব্যর্থ বা লুটপাটের সহযোগী রেলওয়ের কর্তৃপক্ষই এই রজ্জুপথ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিলেটের প্রধান পরিদর্শক সাইদুর রহমানের দাবি, যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেহেতু এটি তিনি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন। রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন, সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার পর এই কর্মকর্তার চাকরি থাকে কীভাবে?
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সরকারি দলের এক নেতার নেতৃত্বে পাথর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। রেলওয়ের কারা এই লুটপাটে সহায়তা করেছেন, তার তদন্ত ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী এই রজ্জুপথকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে রেলওয়ে ও সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

‘আমাকে জেলে দিন, না হলে আত্মহত্যা করবো’

'আমাকে জেলে দিন, তানা হলে আমি আত্মহত্যা করবো। আমি আর পারছি না। আমাকে কেউ দেখতে পারে না। স্ত্রী, সন্তান, ভাই বোন, পাড়া প্রতিবেশী সবাই আমাকে ঘৃণার চোখে দেখে। আমি সবার কাছে ভালো হতে চাই।'

কথাগুলো চারঘাট মডেল থানা পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছিলেন চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মৃত-মুনছুর রহমানের ছেলে হেরোইনসেবী বাবু মিয়া (৩০)। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে চারঘাট মডেল থানায় হাজির হয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের কাছে এ সব কথা বলছিলেন তিনি।

বাবু বলেন, বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ৪ বছর আগে শখের বসে হেরোইন সেবন শুরু করি। ধীরে ধীরে হেরোইন আমাকে গ্রাস করে ফেলে। আমি অতি গরীব ঘরের সন্তান। প্রতিদিন হেরোইনের টাকা যোগাড় করা আমার পক্ষে ছিল খুবই কঠিন। তাই হেরোইনের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পরিবারের থালা বাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে হেরোইন সেবন করতে থাকি। এতে করে আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। কেউ আমাকে ভালো চোখে দেখে না। আমার দুটি সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে একটি সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে লেখা পড়া করছে, অন্যটি ছোট। আমার দু'টি সন্তানের জন্য আমাকে ভালো হতে সুযোগ দিন। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন হেরোইনসেবী বাবু।

পরে বিকেলে চারঘাট মডেল থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম হেরোইনসেবী বাবুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের কাছে হাজির করলে হেরোইন সেবনের অপরাধে বাবুকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি।

এছাড়া হেরোইনের হাত থেকে বাঁচাতে একই দিন আপন ছোট ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেন বড় ভাই। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চারঘাট মডেল থানা পুলিশের হাতে হেরোইনসেবী ছোট ভাই মাসরেফুলকে তুলে দেন বড় ভাই সোজা উল্লাহ। উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামের মাওলা বক্সের ছোট ছেলে মাসরেফুল ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে হেরোইন সেবন করে আসছিল। পরিবারের লোকজন তাকে কোনভাবেই এ পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারছিলো না। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে মাসরেফুল ইসলামকে ধরে এনে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এসময় থানা পুলিশ হেরোইনসেবী মাসরেফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালাতে হাজির করলে ভ্রাম্যমাণ আদালাতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন হেরোইন সেবনের অপরাধে মাসুরেফুলকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।

ছাত্রলীগ-কর্মীর পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন, নেতার রগ কর্তন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুপিয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীর গোড়ালি থেকে দুই পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অপর একজনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ দাবি করেছে, শিবিরের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন।

হামলার শিকার সালেহ মো. টগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ফোকলোর বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহেল মাসুদ ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ সকাল আটটার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে মাদার বখশ হল থেকে বের হন টগর ও মাসুদ। তাঁদের বহনকারী রিকশাটি শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঝামাঝি পৌঁছলে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁদের রিকশা লক্ষ্য করে দুটি ককটেল ফাটায়। এ সময় টগর ও মাসুদ পালানোর চেষ্টা করলে হামলাকারীরা মাসুদকে ধরে সেখানে থাকা একটি দোকানের পেছনে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হামলাকারীরা মাসুদের ডান পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই সময়ে টগরকে রাস্তার একপাশে ফেলে কুপিয়ে জখম করে। তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। আশপাশের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় টগর ও মাসুদকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিত্সাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর হামলার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। পুলিশ জায়গা দুটি ঘিরে রেখেছে।

শিবিরকে দায়ী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরবিরোধী কর্মকাণ্ডে এ দুজন সব সময়ই সামনে থেকেছে। কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি তাঁদের (আহত) দুজনের নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছিল। তারাই এ হামলা চালিয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত।'

নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, 'শিবির ছাড়া হাত-পায়ের রগ আর কে কাটতে পারে? জামায়াত-শিবিরই এ হামলা চালিয়েছে।' ওসি জানান, হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান বি কে দাম প্রথম আলোকে বলেন, 'মাসুদের ডান পা গোড়ালি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে ছিল। ডান হাতের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত মারাত্মকভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ডান হাতেও জখম রয়েছে। দুই হাতেরই রগ কেটে গেছে। টগরের দুই হাত ও দুই পায়ে কুপিয়ে রগ কেটে দেওয়া হয়েছে।' বি কে দাম আরও বলেন, মাসুদের অবস্থা খুবই সংকটজনক। তাঁকে চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। টগরের অবস্থা মাসুদের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
দলীয় নেতা-কর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন। সমাবেশ থেকে হামলাকারী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক।

প্রেমিককে বাঁচাতে প্রেমিকার জীবনদান

প্রেমের জন্য কত কিছুই না করে মানুষ। ২৩ বছর বয়সী স্থপতি সোফিয়া রজার প্রেমের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আগুন থেকে প্রেমিক অস্কার সিলভার (২৮) জীবন বাঁচাতে আত্মদান করেছেন তিনি।  আজ রোববার ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরের আগস্টে পূর্ব লন্ডনে দুঃখজনক এ ঘটনাটি ঘটে। আদালতের শুনানি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অস্কারও একজন স্থপতি। তিনি ও সোফিয়া দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। বিয়ে করে সংসার করার স্বপ্ন ছিল তাঁদের।
আদালতের বিবরণ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালবেলা ফ্ল্যাটের ভেতরে ঘুমাচ্ছিলেন অস্কার। আর চেলসা থেকে একটি জন্মদিনের পার্টি সেরে বাসায় ফেরেন সোফিয়া। ক্যাব থেকে নেমেই তিনি দেখেন, তাঁরা যে ব্লকে থাকেন, সেখান থেকে আগুন ও ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি জলদি তাঁর প্রেমিককে ফোন করে ফ্ল্যাট থেকে বাইরে বের হয়ে আসতে বলেন। এরপর নিজেই ভবনের ভেতরে ছুটে যান প্রেমিককে উদ্ধার করতে। অপরদিকে আগুন ও ধোঁয়ার কারণে ফ্ল্যাট থেকে বের হতে পারছিলেন না অস্কার ও অন্য প্রতিবেশীরা। বাধ্য হয়ে তাঁরা ফ্ল্যাটের পেছনের দিকে বারান্দায় আশ্রয় নেন।
পরে ঘটনাস্থলে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। তাঁরা ভবনের পঞ্চম তলায় সোফিয়ার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁকে উদ্ধার করে ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত চিকিত্সকেরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। বারান্দা থেকে এ দৃশ্য দেখেন অস্কার।  সোফিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান উদ্ধারকর্মীরা। তাঁকে বাঁচানোর সব চেষ্টাই চলে। ভবন থেকে বেরিয়ে প্রিয় মানুষের খোঁজে অস্কার ছোটেন হাসপাতালে। কিন্তু সোফিয়া আর জাগেননি।

আরও জার্মান বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশের উন্নয়নে অতীতের মতো জার্মান সরকার, জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মান সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সাক্ষাত্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরও বেশি জার্মান বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে জার্মান সাংসদ ডাগমার জি ভোর্লের নেতৃত্বে দেশটির পাঁচ সদস্যের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাত্ করে। শেখ হাসিনা সাক্ষাত্কালে বলেন, তাঁর সরকার দেশের নাগরিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের চলমান যাত্রায় অতীতের মতো জার্মান সরকার, জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহায়তা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমার লক্ষ্য দারিদ্র, ক্ষুধা ও নিরক্ষতামুক্ত বাংলাদেশ। যেখানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের স্থান থাকবে না। সে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।' ২০০৮ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বিশ্বমন্দা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করে তাঁর সরকারের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত্কালে বলেছেন, তার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যাপক বিস্তারের ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে আসার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।

সাক্ষাত্কালে ডাগমার জি ভোর্ল বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির দীর্ঘদিনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, সে লক্ষ্য পূরণে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ পূরণে জার্মানি সহায়তা করবে। সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের উল্লেখ করার মতো সাফল্যের প্রশংসাও করেন জার্মান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। জার্মান সংসদীয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের জনগণের অগ্রগতির প্রশংসাও করে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে জার্মান সরকারের সহায়তার কথাও স্মরণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানির কার্লসরুই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর সঙ্গে জার্মানের একটি আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। এ সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গরমের তৃষ্ণায়-সৌন্দর্যে চাই ডাবের পানি

ডাবের উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। ডাবের পানি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকের জন্যেও। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ডাবের পানি হচ্ছে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক—এটা সর্ব সাধারণেরও ধারণা। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে, পানিশূন্যতা পূরণে এবং শক্তির উত্স হিসেবে কচি ডাবের পানি ভীষণ জনপ্রিয়। বলা হয়, একটি ডাবের পানিতে চারটি কলার সমান পটাশিয়াম আছে।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাবের পানি খাবার স্যালাইনের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ডায়রিয়া বা বমির পর পানিশূন্যতা দূর করতে ডাবের পানির ব্যবহার প্রচলিত। একটি সাধারণ কচি ডাবে আকার ভেদে ২০০ থেকে এক হাজার মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। এর ৯৫ শতাংশই পানি। আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য লবণের পরিমাপ স্থানভেদে একেক রকম। তবে সাধারণভাবে এক লিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ৩৫ থেকে ৮২ মিলিমোল, সোডিয়াম শূন্য দশমিক ৭ থেকে শূন্য দশমিক ৯ মিলিমোল ও শর্করা ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৮ মিলিমোল। আর এক লিটার স্যালাইনে পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০, সোডিয়াম ৭৫ ও শর্করা ৭৫ মিলিমোল।

গবেষকেরা দাবি করেন, যাঁরা শরীরচর্চা করেন এবং প্রচুর ঘাম ঝরান, তাঁরা এক চিমটি লবণ মিশিয়ে ডাবের পানি খেলে স্পোর্টস ড্রিংকের তুলনায় অনেক বেশি উপকার পান। সাধারণ কর্মজীবী মানুষের জন্যও ডাবের পানি প্রয়োজনীয়। মাংসপেশির খিঁচুনিও দূর করতে পারে এটি। অনেক সময় সুন্দর ত্বকের জন্য ফল ও ফলের জুসকে ভালো বলে মনে করা হয়। তেলজাতীয় ও অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়। গবেষকেরা দাবি করেন, ভালো ত্বকের জন্য কমলার জুসকে সেরা উপাদান বলা হলেও সুন্দর ত্বক পেতে ডাবের পানির উপকারিতাও কম নয়।

অতিরিক্ত গরম, রোদের তাপ ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। এ অবস্থায় ডাবের পানি আপনাকে দেবে সতেজতা। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার সময় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। ডাবের পানিতে মুখ ধোয়ার পর মুখে হালকা আঠালো ভাব থাকে। এ জন্য ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যাঁদের ত্বক খুব তৈলাক্ত, তাঁরা শুধু ডাবের পানিতে মুখ ধুলে হবে না, ভালো ফেস-ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে তারপর ডাবের পানি দিতে হবে। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকের লোমকূপগুলোতে ময়লা জমে বেশি।

উপকূলীয় জেলায় ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে- ফায়েল খায়ের অর্থায়নে ২৪টি কেন্দ্র নির্মাণের পর হস্তান্তর করা হয়েছে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বের জনহিতৈষী ব্যক্তির (ফায়েল খায়ের) দেওয়া আর্থিক সহায়তায় আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ১৮০টি বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবি। এর মধ্যে ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুল নির্মাণের কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করাও হয়েছে। বাকি ১৫৬টি আগামী বছরের মধ্যে নির্মিত হবে। বাংলাদেশ সফররত আইডিবি গ্রুপের সভাপতি (প্রেসিডেন্ট) আহমেদ মোহাম্মদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আইডিবি জানিয়েছে, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনহিতৈষী ব্যক্তি বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের সাহায্যের জন্য ১৩ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেন। সেই অর্থে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেয় আইডিবি। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয় 'জনহিতৈষী ব্যক্তির বা ফায়েল খায়ের কর্মসূচি'। এই কর্মসূচির আওতায় ১১ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১৮০টি বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও দুই কোটি ডলার সিডরে আক্রান্তদের পুনর্বাসন কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইডিবির সভাপতি জানান, প্রতিটি বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাভাবিক সময়ে ২৪০ জন শিক্ষার্থী পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। আর দুর্যোগকালীন মুহূর্তে সেখানে পাঁচ শতাধিক গবাদি পশু ও দুই হাজারের বেশি দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইডিবির সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নের সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির সভাপতি বলেন, 'আইডিবি নৈতিক ব্যাংকিং করে। জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ মোটেই সত্য নয়।' এ সময় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের সফরের আলোচ্যসূচিতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কর্মসূচি সমন্বয়ক মোহাম্মদ সালেম ও কর্মসূচি পরিচালক সুফি মোশতাক আহমেদ।
হস্তান্তর: প্রথম আলোর শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত রোববার দুপুরে আইডিবির সভাপতি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা প্রথমে খুলনার কয়রা উপজেলার চাল্লির চক এলসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছান ও সেখানে ফিতা কেটে ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর হেলিকপ্টারযোগে বাগেরহাটের শরণখোলায় রায়েন্দা মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন ও সেখানে নির্মিত ফায়েল খায়ের ভবন ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। সেখানে দুই কোটি ডলারের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় পাঁচজন গ্রহীতাকে এক লাখ ৪৭ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করেন।
প্রকল্পের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আইডিবির সভাপতির সফরসঙ্গী হন। বাগেরহাটের শরণখোলায় তিনটি, মংলায় দুটি, খুলনার দাকোপায় ছয়টি, কয়রায় আটটি ও সাতক্ষীরার শামনগরে পাঁচটি নিয়ে মোট ২৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।