Sunday, March 18, 2012

উখিয়ায় মৃত্যুমুখে ৮ খাল

মৃত্যুমুখে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার আটটি খাল।
অবৈধভাবে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে দখল হয়ে যাচ্ছে এসব দখল।

এতে খালগুলো হারিয়ে ফেলছে পানি ধারণক্ষমতা। আবার বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে খালের পানিপ্রবাহ। এসব কারণে এক পশলা বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। গত বর্ষায়ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। এতে নষ্ট হয়ে যায় শত শত একর জমির ফসল। শিগগির এসব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও বন্যাসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে উৎপত্তি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রেজু খালের। একসময় এ খালের পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল আশপাশের শত শত পরিবার। আবার এ পানি দিয়েই বছরজুড়ে শত শত একর জমিতে চলত ফসল উৎপাদন। কিন্তু ক্রমাগত দখলে এটি এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম দরগাহ বিল গ্রামের আবদুল করিম (৬৫), নুর আহমদ (৫০) ও আলী চান মেম্বার জানান, এক সময় রেজু খালের জোয়ারের পানি দিয়ে শাকসবজি উৎপাদন করে শত শত পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছিল। কিন্তু এ খাল থেকে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন এবং খাল দখল করে বসতঘর নির্মাণের কারণে খালের নাব্যতা হারিয়ে গেছে।
দখল থেমে নেই নাফ নদীর মোহনা থেকে উৎপত্তি হওয়া পালংখালী খালেও। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত স্থাপনা। এভাবে নির্বিঘ্নে দখল চলতে থাকায় খালটি এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক সময় জোয়ারের পানিতে খালটি থৈ থৈ করলেও এখন এটি মৃতপ্রায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মনজুর জানান, পালংখাল খাল দখল হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি এখন আর আগের মতো পানি ধারণ করতে পারে না। তাই গত বর্ষায় পালংখালী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে শত শত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ সময় দেয়ালচাপা পড়ে একই পারিবারের দু'জন নিহতও হন। চলতি শুষ্ক মৌসুমে খালটি খনন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা না হলে আগামী বর্ষায়ও বড় ধরনের দুর্যোগের শঙ্কা করেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দখলের চিত্র দেখা গেছে ভালুকিয়া থিমছড়ি খাল, মরিচ্যা খাল, পাতাবাড়ি খাল, গয়ালমারা খাল, দোছরি খাল এবং হিজলিয়া রেজুর খালেও। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। এমনকি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধও!
এদিকে উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় খাল দখলের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদি এসব খাল খননের আওতায় এনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি খালের ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউএনও মোঃ জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'খালের ওপর যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। একই সঙ্গে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।'
একই প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম শাহ জালাল চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি শিগগির উপজেলার আটটি খাল খনন প্রক্রিয়ায় এনে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে মন্তব্য করেন।

পানের বরজ স্থাপনে চলছে পাহাড় কাটা

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত পাহাড় দখল করে
অন্তত আট হাজার পানের বরজ স্থাপন করা হয়েছে।

বনের গাছ ও পাহাড় কেটে এসব বরজ করা হলেও তা উচ্ছেদে বন বিভাগ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে বরজ স্থাপনের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় লোকজন পাহাড় কাটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে পাহাড়ের ঢালু ও চওড়ায় অবৈধভাবে পানের বরজ স্থাপন করে স্থানীয় লোকজন। আর এসব বরজ স্থাপন করতে গিয়ে কাটতে হয়েছে সংরক্ষিত বনের গাছ ও পাহাড়। প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনের ভেতরে গজিয়ে উঠেছে বরজ।
হোয়ানক ইউনিয়নের কালালিয়াকাটার বাসিন্দা আমির হোসেন, কলিম উল্লাহ ও নুর মোহামঞ্চদ জানান, পাহাড় কাটা আইনগতভাবে অপরাধ, সেই কথা এই এলাকার অনেকেই জানেন না। তাই পাহাড় কেটে বরজ তৈরি করছে বলে তাঁরা দাবি করেন। কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আধারঘোনার বাসিন্দা নূর মোহামঞ্চদ জানান, এক সপ্তাহ আগে পানের বরজে মাটি দেওয়ার জন্য পাহাড় কাটতে গিয়ে মোহামঞ্চদ ইদ্রিচ (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন আরও ছয়জন। এর পরও পাহাড় কেটে বরজ স্থাপন বন্ধ হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত পাহাড়ের ভেতর ও চওড়ায় পান চাষ হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ছয়টি পানের বরজ করা যায়। আর পাহাড়ে পানের বরজের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় আট হাজার। পানচাষিদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।
উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহামঞ্চদ বজলুর রহমান বলেন, উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। তার মধ্যে ১০ হাজার একরের সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এসব পাহাড়ি বনভূমির গাছ ও পাহাড় কেটে অবৈধভাবে হাজার হাজার পানের বরজ স্থাপন করে। তবে জনবল না থাকায় এসব বরজ উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।