Friday, March 02, 2012

উখিয়ায় পানের দর চড়াঃ বেজায় খুশি কৃষক

উখিয়ায় পানের বাজার এখন চড়া।
এখানকার হাট-বাজার ও পাইকারি মোকামগুলোতে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পান।


যে কারণে বেজায় খুশি স্থানীয় পানচাষিরা। আগে যেখানে প্রতি বিড়া পান ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা কয়েকগুণ বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে উখিয়ার পানের কদর ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে এখানকার পান। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ভিত্তিতে পান চাষে ঝুঁকছে।

ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে এ মৌসুমে উখিয়া থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকার পান রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে ধারনা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উখিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার জালিয়া পালং, রত্না পালং, হলদিয়া পালং, রাজা পালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।

প্রায় ৬ হাজার কৃষক পান চাষের সঙ্গে জড়িত। উখিয়া উপজেলার আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটি পান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এক সময় বাজারে পানের ন্যায্যমূল্য না থাকায় অনেক কৃষক পান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। আগে যেখানে প্রতি বিড়া পান ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ১৪০-১৫০ টাকা।

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা জাবেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ১০ শতক জমিতে পান চাষ করতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

জমিতে পরিমাণ মতো জৈব সার ও ইউরিয়া ব্যবহার করে সঠিক পরিচর্যা নিলে প্রতি বছর ১০ শতক জমি থেকে এক থেকে দেড়লাখ টাকার পান বিক্রি করা সম্ভব।

জাবেদ আরও জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ পানচাষিদের যথেষ্ঠ সহযোগিতা দিয়ে থাকে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করায় চাষিরা আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পান চাষ করে যাচ্ছে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ বলেন, সরকারিভাবে পানচাষিদের জন্য ইউরিয়া সার বরাদ্দ থাকে না। যে কারণে ভর মৌসুমে সার না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশার মধ্যে থাকে। সারের বিষয়টি বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। 

রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্বডিগলি পালংয়ের পানচাষি নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, গতবছর তিনি ১০ শতক জমিতে পান চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন।

তিনি জানান, সময় মতো ইউরিয়া সার পেলে তার দেড়গুণ লাভ হতো। এ বছর তিনি ২০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন।

রত্না পালংয়ের পানচাষি মুহাম্মদ সৈয়দ নুর জানান, এখানে সাধারণত মিষ্টি ও ঝাল পানের চাষ হয়ে থাকে। আশ্বিন মাস থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত চাষিরা পানের চারা লাগায়। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস পর্যন্ত পান বিক্রির সময়।

এছাড়া সারা বছরই পান বিক্রি করা যায়। রাজাপালংয়ের আরেক চাষি সব্বির আহমদ জানান, পান চাষের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ ও ছন। কিন্তু সময় মতো বাঁশ ও ছন না পাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।

তবে বাজারে পানের মূল্য থাকায় চাষিরা এখন বেজায় খুশি। রত্না পালংয়ের পান ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, পালংয়ের পানের চাহিদা সারা দেশে রয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে উখিয়া উপজেলার পানের চাহিদা বেশি।

তারা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, দোহাজারী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পানের আড়তে পান পাঠিয়ে থাকেন। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি করেন।

গতবছর উখিয়া, কোটবাজার, সোনার পাড়া ও মরিচ্যা বাজার থেকে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার পান রপ্তানি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিমত সরকারি উদ্যোগে পানচাষিদের সহজ শর্তে ঋণ বিতরণসহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিলে আবাদ আরও বেশি হবে।