Sunday, June 24, 2012

কুতুবদিয়ায় হুমকির মুখে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প

চলতি বর্ষায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প। বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।

প্রকল্পটি রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) অধীনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার ও পাউবো কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এখনও নির্মিত হয়নি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প রক্ষা বাঁধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, বিউবোর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ার সাগর উপকূল তাবলের চর এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ। এরপর প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে প্রকল্পের গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সরবরাহ করা হয় উপজেলা সদরের সাত শতাধিক গ্রাহকের কাছে। এর ঠিক তিন মাসের মাথায় জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্রকল্পের ৫০টি বায়ুকল পাখার (উইং) বেশিরভাগ ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রকল্পটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর চেয়ে বড় ব্যাপার বরাদ্দের পরও নির্মিত হয়নি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প রক্ষা বাঁধ। যে কারণে প্রকল্পটি এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিউবোর কুতুবদিয়ার আবাসিক প্রকৌশলী অশোক দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কবে নাগাদ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তিনি এসব তথ্য জানতে বিউবোর কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'বর্তমানে পিডিবির ৫শ' কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন কামিন্স জেনারেটর মেশিন দিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।' সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে বিউবোর কক্সবাজার জেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ২০০৮ সালে শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বিউবোর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে প্যান এশিয়া পাওয়ার সাভির্সেস লিমিটেড নামে একটি সংস্থা। প্রকল্পটিতে এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫০টি বায়ুকল (উইং টারবাইন) স্থাপন করা হয়। প্রতিটি বায়ুকল থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রতিটি বায়ুকল গণ্য হবে একটি ইউনিট হিসেবে। প্রতিটি ইউনিটে ৫০ মিটার উঁচু একটি টাওয়ার এবং টাওয়ারের মাথায় দেড় টন ওজনের ডানাবিশিষ্ট একটি ইস্পাতের পাখা স্থাপন করা হয়। একটি উইং টারবাইন থেকে অপরটির দূরত্ব তিনশ' গজ। বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে টাওয়ার জেনারেটর, কন্ট্রোল প্যানেল ও টারবাইন বেল্গড।
পাউবোর কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম জানান, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু করতে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে। বাঁধের কাজ শেষ হলেই কুতুবদিয়া দ্বীপের বিদ্যুৎবঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
অন্যদিকে পাউবো কুতুবদিয়ার কর্মকর্তা এটিএম মাসুদুর রাবি্ব বলেন, 'বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি রক্ষায় পাউবোর কর্তৃপক্ষ এ এলাকায় তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছেন। বর্তমানে দুটি প্রকল্পের বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে আইনি জটিলতায় বাকি একটি প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না।

কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেই

বিপর্যস্ত দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা
কুতুবদিয়ার অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

দ্বীপের প্রধান চলাচলের পথ আজম সড়কসহ গ্রামীণ সড়কগুলোর অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। এবড়োখেবড়ো সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহান বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে।

১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া দ্বীপের রাস্তাগুলো যৌথভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং এলজিইডির মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এরপর শুধু সরকার বদল হলেও কুতুবদিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাটগুলোর সংস্কারসহ তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ হয়নি। এ ছাড়া গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারে নামে সরকারের সংশিল্গষ্ট দফতর থেকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতারা নামমাত্র কাজ করে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম, সালাম কুতুবী ও নুরুল আলম কুতুবী জানান, বিএনপি নেতারা শুধু সরকারি অর্থ বরাদ্দ এনে লুটপাটে ব্যস্ত থাকায় সড়কগুলোর কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় আজ আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
গতকাল শনিবার সকালে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন এসব রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে। রাস্তাঘাটের এমন বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্বীপের বৃহত্তম বড়ঘোপ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সড়ক সংস্কারের জন্য কাজের বরাদ্দ দেয়। তবে বরাদ্দ দেওয়া টাকায় স্থানীয় কিছু স্বার্থলোভী নেতা ও ঠিকাদারদের ভাগ-ভাটোয়ারার কারণে রাস্তা-ঘাটের লোক দেখানো সংস্কার হলেও তার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস।
উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ জানান, তার এলাকার রাস্তাগুলোর এতই করুণ অবস্থা যা না দেখলে বোঝা যাবে না। তার ইউনিয়নে সংস্কারের অভবে বাইঙ্গাকাটা সড়ক, জুম্মাপাড়া সড়ক, আজিজিয়া সড়ক, সতরুদ্দীন সড়কসহ আরও কয়েকটি রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
কুতুবদিয়ার বিসিক শিল্প নগরীখ্যাত লেমশীখালী ইউনিয়ন। প্রতি বছর এ ইউনিয়নের সড়কগুলো দিয়ে লবণের মৌসুমে লবণ পরিবহন করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। আর এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক কোনো কালেই সংস্কার হয় না।
এ ব্যাপারে লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন জানান, তার ইউনিয়নের মতিবাপেরপাড়া রোড, সেন্টার রোড, মিরাখালী রোড, গাইনা কাটা রোড ও দরবার ঘাট রোডের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
দ্বীপের কৈয়ারবিল ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। এ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় ৯৭৫টি পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে কয়েকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
দক্ষিণ ধুরং ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল-আযাদ জানান, তার ইউনিয়নে বাতিঘর রোড, শাহরুম সিকদারপাড়া রোড, ধুরুং কাঁচা রোড, ধুরুং বাজার রোড চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঊড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাকের উল্লাহ জানান, দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়েও অবহেলিত তার এলাকা। সরকারের কোনো বাজেট না থাকায় রাস্তাগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে তিনি জানান। তার এলাকায় ডিসি রোড, মুরালিয়া রোড, আজম কলোনি রোড, আজম সড়কের অবস্থা করুণ বলে জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মহসিন জানান, চলতি বছরে মিরাখালী রোড, আশ্রয়ণ প্রকল্প রোড সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

সড়ক সংস্কার না করলে মহাসড়ক অবরোধ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজ সংস্কার না করলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে এলাকাবাসী।

শনিবার দুপুরে রামু-মরিচ্যা সড়ক ও ছিকলঘাটা ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কারের দাবিতে রামু উন্নয়ন নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত দীর্ঘ মানববন্ধনে এলাকাবাসী এই হুমকি দেয়।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোস্তার আহমদ। রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল  ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলম চৌধুরী, আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আমান উল্লাহ, রামু উন্নয়ন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি সোলতান আহমদ মনিরী, সাধারণ সম্পাদক ওসমান সরওয়ার মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ উল্লাহ, তথ্য সম্পাদক খালেদ হোসেন টাপু ও রামু লাইনের পরিচালক মুজিবুর রহমান মুজিব।

রামুর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বলা শতাধিক এলাকাবাসী ছাড়াও অন্তত পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বলা হয়, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রামুর প্রধান সড়কসহ এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজ সংস্কার না করায় চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে পর্যটকসহ এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

কক্সবাজারে গত কয়েকদিনের জোয়ারের পানিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের প্রায় এক কিলোমিটা বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে জালিয়াপাড়া, কোনারপাড়া, মিস্ত্রি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে।

ডুবে গেছে ওই এলাকার রাস্তা ঘাট। জোয়ারের তোড়ে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, বন্দরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, উত্তর নুনিয়াছড়া এবং মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই/তিন ফুট বেড়েছে। এছাড়া সাগর উত্তাল রয়েছে এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৩নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

রামুতে সেতু ও সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ

কক্সবাজারের রামুতে বাঁকখালী নদীর ঝুঁকিপূর্ণ শিকলঘাট সেতু ও রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক সংস্কারের দাবিতে গতকাল শনিবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

রামু নাগরিক উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে গতকাল বেলা ১১টায় শিকলঘাট সেতুর পাশে ওই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রামু ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশতাক আহমদ বলেন, রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক কয়েক বছর ধরে সংস্কার না করায় তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়াকারী শিক্ষার্থীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া সড়কের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত অনেক পুরোনো শিকলঘাট সেতুটি সংস্কারের অভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সমাবেশে নাগরিক কমিটি ও রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম, ওমর ফারুক, জাফর আলম চৌধুরী, আমানুল হক, এম সুলতান আহমদ, হাবিবুল হক, আবু বকর ছিদ্দিক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

উদ্ধারের পর ফের বনভূমি দখল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ৩০ একর বনভূমি উদ্ধারের পর পুনরায় তা দখল হয়ে গেছে। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে বন বিভাগের কর্মীরা জমি উদ্ধার করলেও সন্ধ্যায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তা ফের দখল করে নেন।

এ নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগ গোরকঘাটা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঘটিভাঙ্গা এলাকার মোসখালী খালের পাশে নতুন করে প্যারাবন উজাড় করে এক মাস ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে চিংড়িঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছেন। প্রায় ১০০ একর জমিতে এ ঘের করতে ইতিমধ্যে তিন হাজার বাইনগাছ কাটা হয়েছে।
গোরকঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহামঞ্চদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, নতুন করে প্যারাবন উজাড় করে এক মাস ধরে অবৈধভাবে চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল। শুক্রবার সকালে বনকর্মীরা সেখানে অভিযান চালান এবং চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দিয়ে ৩০ একর বনভূমি উদ্ধার করেন। কিন্তু সন্ধ্যায় কেটে দেওয়া বাঁধ নির্মাণ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পুনরায় ওই জমি দখল করে নেন। এ নিয়ে স্থানীয় আবদুল মালেকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই বনভূমি নিয়ে ইজারাদারের পক্ষে আবদুল মালেকের মেয়ে আনজুমান আরা থানায় অভিযোগ দেন এবং বন কর্মকর্তা চারজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়, ওই জমি চিংড়িচাষের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে। ঘের করার সময় বন বিভাগের লোকজন তাঁদের কাছে উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু উৎকোচ না পেয়ে বনকর্মীরা বহিরাগত লোকজন নিয়ে শুক্রবার সকালে গিয়ে চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দেন।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ডিও নিয়ে ব্যবসা

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিমের বিরুদ্ধে চার উপজেলার দায়িত্বে থেকে টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় গ্রাম-গঞ্জের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তারাও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এতে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার ধর্মপুর থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন কাজী মোহাম্মদ হাশিম। চাকরির আরো ২ বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারে যোগদানের পর থেকেই শহরের মোটেল রোডের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের রেস্ট হাউস দখল করে বসবাস শুরু করেন তিনি। সরকারি নিয়ম অনুসারে রেস্ট হাউসের ভাড়া পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে তাগাদা দিলেও তিনি এসবের কোনো পরোয়া করছেন না। সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক ১০০ টাকা হারে গত ছয় মাসে রেস্ট হাউসের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রেস্ট হাউসের ভাড়া তিনি পরিশোধ করবেন না।
কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একই সাথে টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরসহ ৪ টি উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুপস্থিতির সুযোগে পুরো খাদ্য বিভাগকে তিনি জিম্মি করে ফেলেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সব কাজ অলিখিতভাবে তার উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চার উপজেলার টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) থেকে তিনি ৫০০ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পছন্দের মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ডিও বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের বাধ্য করেন তিনি। অন্যথায় ডিও ইস্যু করতে গড়িমসি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের হয়রানি করা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি ১০ টনের বেশি চাল বা গম কিনেন তাহলে তার কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়। বিশেষ করে, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বরাদ্দকৃত চাল ও গমের প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। ফলে সরকারের টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে জানান একাধিক ডিও'র মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া কিছু গম/চাল প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিক্রি করতে হয়। যেসব ব্যবসায়ী এসব খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য দেন তাদের কাছেই আমরা চাল/গম বিক্রি করে থাকি। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরে সিন্ডিকেট করে তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে আমাদের বাধ্য করেন। তার কথা মতো কাজ না করলে ডিও ইস্যুতে গড়িমসি করা হয়। খাদ্য গুদামেও আমাদের হয়রানি করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগ করেন।'
তারা অভিযোগ করে বলেন, হয়রানির ভয়ে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান ওএমএস কার্যক্রমেও ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন চালের ডিও'তে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকজন ওএমএস ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা খাদ্য বিভাগের হাতে জিম্মি।
এছাড়া নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি সপ্তাহের বুধবার তিনি চট্রগ্রাম চলে যান এবং সেখান থেকে কর্মস্থলে ফিরেন পরবর্তী সপ্তাহের সোমবার। চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদে বাস করেন তিনি। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেস্ট হাউসে থাকার কথা তিনি নিশ্চিত করে ভাড়া দেওয়ার নিয়ম রয়েছে বলে কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'অফিসের কারা এসব অভিযোগ আপনাকে জানাচ্ছে তা আমি ভালো করে জানি। আপনি আমাকে ফোন করায় খুব ভালো হয়েছে। আমি আগামী সোমবার অফিসে আসব, আমার সাথে একটু দেখা করবেন।'
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারেন না-তাই আমিই তার কাজ কর্ম পরিচালনা করে থাকি।' এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানান।