Sunday, June 24, 2012

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ডিও নিয়ে ব্যবসা

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিমের বিরুদ্ধে চার উপজেলার দায়িত্বে থেকে টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় গ্রাম-গঞ্জের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তারাও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এতে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার ধর্মপুর থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন কাজী মোহাম্মদ হাশিম। চাকরির আরো ২ বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারে যোগদানের পর থেকেই শহরের মোটেল রোডের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের রেস্ট হাউস দখল করে বসবাস শুরু করেন তিনি। সরকারি নিয়ম অনুসারে রেস্ট হাউসের ভাড়া পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে তাগাদা দিলেও তিনি এসবের কোনো পরোয়া করছেন না। সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক ১০০ টাকা হারে গত ছয় মাসে রেস্ট হাউসের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রেস্ট হাউসের ভাড়া তিনি পরিশোধ করবেন না।
কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একই সাথে টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরসহ ৪ টি উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুপস্থিতির সুযোগে পুরো খাদ্য বিভাগকে তিনি জিম্মি করে ফেলেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সব কাজ অলিখিতভাবে তার উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চার উপজেলার টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) থেকে তিনি ৫০০ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পছন্দের মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ডিও বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের বাধ্য করেন তিনি। অন্যথায় ডিও ইস্যু করতে গড়িমসি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের হয়রানি করা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি ১০ টনের বেশি চাল বা গম কিনেন তাহলে তার কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়। বিশেষ করে, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বরাদ্দকৃত চাল ও গমের প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। ফলে সরকারের টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে জানান একাধিক ডিও'র মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া কিছু গম/চাল প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিক্রি করতে হয়। যেসব ব্যবসায়ী এসব খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য দেন তাদের কাছেই আমরা চাল/গম বিক্রি করে থাকি। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরে সিন্ডিকেট করে তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে আমাদের বাধ্য করেন। তার কথা মতো কাজ না করলে ডিও ইস্যুতে গড়িমসি করা হয়। খাদ্য গুদামেও আমাদের হয়রানি করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগ করেন।'
তারা অভিযোগ করে বলেন, হয়রানির ভয়ে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান ওএমএস কার্যক্রমেও ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন চালের ডিও'তে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকজন ওএমএস ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা খাদ্য বিভাগের হাতে জিম্মি।
এছাড়া নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি সপ্তাহের বুধবার তিনি চট্রগ্রাম চলে যান এবং সেখান থেকে কর্মস্থলে ফিরেন পরবর্তী সপ্তাহের সোমবার। চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদে বাস করেন তিনি। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেস্ট হাউসে থাকার কথা তিনি নিশ্চিত করে ভাড়া দেওয়ার নিয়ম রয়েছে বলে কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'অফিসের কারা এসব অভিযোগ আপনাকে জানাচ্ছে তা আমি ভালো করে জানি। আপনি আমাকে ফোন করায় খুব ভালো হয়েছে। আমি আগামী সোমবার অফিসে আসব, আমার সাথে একটু দেখা করবেন।'
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারেন না-তাই আমিই তার কাজ কর্ম পরিচালনা করে থাকি।' এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানান।

No comments:

Post a Comment