Sunday, June 24, 2012

কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেই

বিপর্যস্ত দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা
কুতুবদিয়ার অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

দ্বীপের প্রধান চলাচলের পথ আজম সড়কসহ গ্রামীণ সড়কগুলোর অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। এবড়োখেবড়ো সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহান বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে।

১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া দ্বীপের রাস্তাগুলো যৌথভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং এলজিইডির মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এরপর শুধু সরকার বদল হলেও কুতুবদিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাটগুলোর সংস্কারসহ তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ হয়নি। এ ছাড়া গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারে নামে সরকারের সংশিল্গষ্ট দফতর থেকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতারা নামমাত্র কাজ করে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম, সালাম কুতুবী ও নুরুল আলম কুতুবী জানান, বিএনপি নেতারা শুধু সরকারি অর্থ বরাদ্দ এনে লুটপাটে ব্যস্ত থাকায় সড়কগুলোর কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় আজ আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
গতকাল শনিবার সকালে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন এসব রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে। রাস্তাঘাটের এমন বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্বীপের বৃহত্তম বড়ঘোপ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সড়ক সংস্কারের জন্য কাজের বরাদ্দ দেয়। তবে বরাদ্দ দেওয়া টাকায় স্থানীয় কিছু স্বার্থলোভী নেতা ও ঠিকাদারদের ভাগ-ভাটোয়ারার কারণে রাস্তা-ঘাটের লোক দেখানো সংস্কার হলেও তার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস।
উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ জানান, তার এলাকার রাস্তাগুলোর এতই করুণ অবস্থা যা না দেখলে বোঝা যাবে না। তার ইউনিয়নে সংস্কারের অভবে বাইঙ্গাকাটা সড়ক, জুম্মাপাড়া সড়ক, আজিজিয়া সড়ক, সতরুদ্দীন সড়কসহ আরও কয়েকটি রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
কুতুবদিয়ার বিসিক শিল্প নগরীখ্যাত লেমশীখালী ইউনিয়ন। প্রতি বছর এ ইউনিয়নের সড়কগুলো দিয়ে লবণের মৌসুমে লবণ পরিবহন করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। আর এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক কোনো কালেই সংস্কার হয় না।
এ ব্যাপারে লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন জানান, তার ইউনিয়নের মতিবাপেরপাড়া রোড, সেন্টার রোড, মিরাখালী রোড, গাইনা কাটা রোড ও দরবার ঘাট রোডের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
দ্বীপের কৈয়ারবিল ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। এ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় ৯৭৫টি পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে কয়েকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
দক্ষিণ ধুরং ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল-আযাদ জানান, তার ইউনিয়নে বাতিঘর রোড, শাহরুম সিকদারপাড়া রোড, ধুরুং কাঁচা রোড, ধুরুং বাজার রোড চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঊড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাকের উল্লাহ জানান, দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়েও অবহেলিত তার এলাকা। সরকারের কোনো বাজেট না থাকায় রাস্তাগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে তিনি জানান। তার এলাকায় ডিসি রোড, মুরালিয়া রোড, আজম কলোনি রোড, আজম সড়কের অবস্থা করুণ বলে জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মহসিন জানান, চলতি বছরে মিরাখালী রোড, আশ্রয়ণ প্রকল্প রোড সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

No comments:

Post a Comment