Saturday, March 24, 2012

ডিসেম্বরে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু হবে

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন,
ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতগতিতে এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পর্যটনমন্ত্রী একথা বলেন।

মন্ত্রী জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য  ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য ৮০০ একর ভূমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৭০০ একর খাস জমি এবং প্রায় ১০০ একর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি। এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।

বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন একটি বড় শর্ত। এ উপলব্ধি থেকে সরকার কুয়াকাটা যাওয়ার সড়কে ইতোমধ্যে নতুন ৩টি সেতু নির্মাণ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজারের পর্যটন সুবিধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পরিকল্পিত এলাকার উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন নির্মিত হলে বিদেশি পর্যটকরা আরো নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবে।

মন্ত্রী জানান, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ‘অন এরাইভাল ভিসা’ প্রদান করা দেশের তালিকায় আরো নতুন দেশ অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফারুক খান বলেন, সরকার ‘ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটন সচিব মো. আতাহারুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিল অব ট্যুরিজম-এর চেয়ারম্যান এ কে এম বারী ও আইএলও বাংলাদেশের পরিচালক আন্দ্রে বুগি।

বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও অংশগ্রহণকারীদের চিন্তাধারা ও মতামতের মাধ্যমে এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সমন্বয়ে বাংলাদেশে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে একটি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কার্যকরি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে সম্মেলনটি আহ্বান করা হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সার্ক অঞ্চলে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা মোকাবিলা, এ খাতে সরকারি, বেসরকারি ও দাতা সংস্থাদের ভূমিকা এবং বাংলাদেশে পর্যটন ব্রান্ডিং -এর উপর ৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বিদেশি পর্যটক থেকে গড়পড়তা মাত্র ১৪৭ মার্কিন ডলার আয় করছে যা অন্যান্য দেশের তুলানায় খুবই অপ্রতুল। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ দেশের মধ্যে ১২৯তম। এটাকে তারা হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিশ্বমন্দার কারণে দূরবর্তী দেশের পর্যটকের সংখ্যা কমে আসছে। তার পরিবর্তে আঞ্চলিক পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের পর্যটকদের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তারা গুরুত্বারোপ করেন। এ ক্ষেত্রে ইকো ট্যুরিজম ও রুরাল ট্যুরিজমের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণের কথা বক্তারা তুলে ধরেন।

আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপ

আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সোনাদিয়া দ্বীপ।
সামুদ্রিক পাখির বিচরণ, নতুন করে সৃষ্ট প্যারাবনে সবুজের সমারোহ আর সেখানে বসবাসকারী ৩ শতাধিক পরিবারের মানুষের সচেতন কার্যক্রমে দ্বীপটিতে ফিরে আসছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এতে অনেকেই আশাবাদী এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সোনাদিয়া ফিরে পাবে তার সেই পূর্বের রূপ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে তৈরি করা হয় চিংড়ি ঘের। যার প্রভাবে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।

পরে সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে নেকম, আইইউসিএন, এসবিএফ ও হেল্প নামের ৪ টি সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলছে এসব কার্যক্রম।

ধ্বংস হওয়া প্যারাবন নতুন করে সৃষ্টি, সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষা এবং ওই সব প্রাণীর অবাসস্থল উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই এ কার্যক্রমের লক্ষ্য।

সরেজমিন সোনাদিয়া দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, এক সময় লাকড়ি ব্যবহার, চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য যারা দ্বীপের প্যারাবনের উদ্ভিদ নিধন করেছেন, তারাই এখন তা রক্ষায় সচেতনভাবে কাজ করছেন। যার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে নতুন করে তৈরি হয়েছে প্যারাবনের কেউড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতের উদ্ভিদ।

সোনাদিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় নতুন করে তৈরি করা এসব প্যারাবনে গহীন অরণ্যের মতো পরিবেশ দেখা যায়। আর প্যারাবনের ভেতরে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি বসতি গড়েছে। ঝাঁক-ঝাঁক সামুদ্রিক গাঙচিল, মাছরাঙা, ঈগলের বিচরণ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার উপকুলীয় এলাকায় ১ হাজার ২১৫ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিত রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ ৫৬৭, শামুক ১৬২, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার ২, মাছ ২০৭, উভচর প্রাণী ১২, সরীসৃপ ১৯,  পাখি ২০৬ প্রজাতের দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে এ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের অধীনের ইতোমধ্যে সোনাদিয়ায় ১৮৮ হেক্টর ও কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকায় ১০০ একর নতুন প্যারাবন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তা রক্ষা করা হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সুমন বাংলানিউজকে জানান, দ্বীপের বাসিন্দাদের উন্নত চুলা ব্যবহারে উৎসাহী করা, চুলা সরবরাহ, গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রামভিত্তিক কর্মশালা, স্থানীয়দের জীবন উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানা কর্মকান্ডের কারণে জীববৈচিত্র্য রক্ষার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এ প্রকল্পের অধীনে প্যারাবন পাহারায় কাজ করছেন দ্বীপের ৪ ব্যক্তি। তাদেরই একজন আজিজুর রহমান।

তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যারাবন পাহারা দেন তিনি। প্যারাবন নিধন, পশুদের কবল থেকে প্যারাবন রক্ষার জন্য তিনি সচেতন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ধারাবাহিকভাবে দ্বীপের পুরো অংশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আরও নানান কার্যক্রম চলছে।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারের সোনাদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকায় রয়েছে জীববৈচিত্র্যের সমাহার।

তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বে ৪৭৫ প্রজাতের মাছ রয়েছে। এক গবেষণায় কক্সবাজারে ২০৭ ধরনের মাছ দেখা গেছে। তার মধ্যে কোমলাস্থি ১৯ ও কঠিনাস্থি রয়েছে ১৮৮ প্রজাতির।

২০৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে দেশি ১৪৯টি এবং ৫৭ ধরনের অতিথি পাখি দেখা যায়। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় পাখিদের অনেক প্রজাতি কক্সবাজারে রয়েছে। এসব রক্ষায় চলছে তাদের কার্যক্রম।

ডিসেম্বরে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু হবে

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতগতিতে এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।