Saturday, December 25, 2010

কারখানায় আগুনে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু

রাজধানীর খিলক্ষেতে একটি কারখানায় আগুনে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মারাত্মক দগ্ধ আরো ছয় শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে গুডনাইট কয়েল কারখানায় এ আগুনের ঘটনা ঘটে। কারখানার ভেতরে মশা তাড়ানোর স্প্রের কনটেইনারের স্তূপ থেকে বিস্ফোরণের পর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, কারখানার ভেতর থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ আরো ছয়জনকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতদের মধ্যে চারজনের শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে তাঁদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করার উপায় নেই। আমীরুল (২৮) নামের একজনের লাশ শনাক্ত করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ফায়ার সার্ভিসের কুর্মিটোলা, টঙ্গী, বারিধারা ও সদর দপ্তর স্টেশন থেকে ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পেঁৗছে রাত পৌনে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চললেও আর কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।
রাত ১২টায় দুর্ঘটনাস্থলে যান ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কারখানাটি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঁচজনের লাশ হাসপাতালের মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর সেখানে বাড়ির মালিক অথবা কারখানার কর্মকর্তাদের কাউকে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও দগ্ধ শ্রমিকরা জানান, রাতে কারখানাটিতে ১২ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছেন। তবে একজন ছাড়া কারো পরিচয় জানা যায়নি।
আগুনে দগ্ধ ছাইদুর রহমান (২৮), এনামুল হক (২৫), হামিদুল হক (২২), আনোয়ারুল ইসলাম (২৩), জুয়েল (২৫) ও ইকবালকে (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের শরীরের প্রায় পুরো অংশ দগ্ধ বলে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন।
দগ্ধ শ্রমিক ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, রাতে কারখানাটিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ মশা তাড়ানোর স্প্রের বোতল নষ্ট করার কাজ চলছিল। এ সময় একটি বোতলে বিস্ফোরণ ঘটলে আগুনের সূত্রপাত হয়। আর কিছু তাঁর মনে নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নামাপাড়ায় লেক সিটি কনকর্ড টাওয়ারের পাশের গুডনাইট কয়েল কারখানায় আগুন লাগার আগ মুহূর্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ হয়। পাশেই করুণা গার্মেন্টসের অবস্থান হওয়ায় অনেকে ধারণা করেছিল, সেখানেই আগুন ধরেছে। পরে এলাকাবাসী গিয়ে দেখে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে খ/১০০/২/ডি পূর্ব নামাপাড়া হোল্ডিংয়ের টিনশেড কারখানাটিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও জোবায়ের হোসেন জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে যান তাঁরা। তখন টিনশেড কারখানা থেকে আগুনের শিখা ২০-২৫ ফুট ওপরে দেখা যায়। এরপর শোনা যায় বেশ কিছু ছোট বিস্ফোরণের শব্দ। বিস্ফোরণে টিনের চালা পুরোটাই উড়ে গেছে। আনুমানিক ছয় মাস আগে টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কারখানাটি চালু করা হয়েছিল।
খিলক্ষেত থানার এএসআই শহীদ জানান, কারখানাটিতে মশা তাড়ানোর ম্যাট তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ রাখা ছিল। আগুন লাগার পর তাতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা গেছে।
খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। প্রতি রাতে সেখানে অল্প বয়সের শ্রমিকরা স্প্রের বোতল বদলের কাজ করে বলে শোনা গেছে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
দুর্ঘটনাস্থলে স্বজনের খোঁজে আহাজারি করছিল অনেকে। তাদেরই একজন হাজেরা বেগম জানান, তাঁর ছেলে রাসেল ও ভাই ইউসুফ কারখানাটিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁরা হতাহত হয়েছেন বলেই তাঁর ধারণা। তবে রাত ১২টা পর্যন্ত তিনি খোঁজ পাননি তাঁদের। রহিমা বেগম নামের আরেক মহিলাও খুঁজছিলেন এনামুল ও হামিদ নামের দুই আত্মীয়কে।

No comments:

Post a Comment