Saturday, May 12, 2012

আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলবাসীর

কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ার সমুদ্রতীরবর্তী বেড়িবাঁধগুলো এখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশেষ করে এ উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এখন মারাত্মক হুমকির মুখে।

নদীভাঙন ও সামুদ্রিক জোয়ারের প্রভাবে চিহ্নহীন হয়ে পড়েছে এ বেড়িবাঁধটি। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে উপকূলীয় বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে আর কোনো সরকারই ফিরে তাকায়নি এ উপকূলের মানুষের দিকে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জোয়ারে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন অংশ। ফলে যে কোন মুহূর্তে জোয়ারের পানিতে ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে মগনামা ইউনিয়ন। এছাড়া এ উপজেলার পেকুয়া, রাজাখালী, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে চরম উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন। উপকূল তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পেকুয়ার উপকূলীয় এলাকার মানুষ সারা বছরের ৬/৭ মাস বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করে। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় বিগত ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল পেকুয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, গৃহহারা হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল অসংখ্য ঘরবাড়ি, চিংড়িঘের, কৃষিজমি ও মানুষের বিভিন্ন সম্পদ। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিম কূল এলাকার মত্স্য ব্যবসায়ী ছিদ্দিক আহমদ জানান, এ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, আকাশে মেঘ দেখলেই অতিরিক্ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ভয়ে চরম উত্কণ্ঠার মধ্যেই দিন কাটাতে হয় তাদের। মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা চৌধুরী জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমেই কাকপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে পুরো মগনামা বিরানভূমিতে পরিণত হয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মগনামা উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবেই মগনামার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। এ ইউনিয়নের কাকপাড়া পয়েন্টে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, শরেঘানা পয়েন্টে ১ কিলোমিটার, পশ্চিমকূল এলাকার ৫ চেইন বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে পুরো মগনামা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৯৯১ সালের চেয়েও বর্তমানে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উজানটিয়া ইউনিয়নের মানুষ। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের ফলে সামান্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে লবণ ব্যবসায়ী ও মত্স্য ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া, গোদারপাড় এলাকার দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাড়াও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
রাজাখালী ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনছুর আলম জানান, এ ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল জানান, রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনারটেক থেকে নতুন ঘোনা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে এ ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, পেকুয়া উপজেলাবাসীর একমাত্র দুঃখ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। বর্তমানে এ উপজেলা পরিবেষ্টিত বেড়িবাঁধগুলো এখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ফলে মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক ভর করে আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের নাম করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে। তিনি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পেকুয়া উপজেলার ভঙ্গুর বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরই খাজা আলামীন জানান, এখন পেকুয়ার প্রধান ইস্যু হচ্ছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধে সংস্কার কাজ। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি এ উপজেলার ভঙ্গুর বেড়িবাঁধগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও স্বল্প সময়ের মধ্যেই যেন ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করা হয় তার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

No comments:

Post a Comment