Wednesday, May 23, 2012

৫০ হাজার লবণ চাষি শঙ্কায়

টেকনাফে বৈরী আবহাওয়ায় লবণ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক এ বাধা উপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে রয়েছেন। তবে আশানুরূপ উৎপাদন করতে পারবে না এমন শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

গত ১৫ দিন থেকে অবস্থার পরির্বতন ঘটছে না আকাশের। লবণ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫০ হাজার চাষি-শ্রমিকসহ লবণ চাষের ওপর নির্ভরশীল দেশের লক্ষাধিক মানুষ শঙ্কায় রয়েছে। প্রাকৃতির বৈরী অবস্থা যদি লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বিরাজ থাকে তবে লবণ শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনদের দু'বেলা খাবার জুটবে কি-না এ দুশ্চিন্তা থেকেই গেল।
খবর পাওয়া গেছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, কতুবদিয়া, মহেশখালী, পুকখালী, মাদারবাড়ি, ধলঘাটা, চকরিয়া ও চট্টগ্রাম বাঁশখালীর লবণ মাঠে বৃষ্টির পানি জমেছিল। বৃষ্টির পানিতে লবণ ভেসে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লবণ চাষি ও শ্রমিকদের। যেহেতু লবণ চাষের নিয়ম অনুযায়ী জমিতে যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হবে তার অর্ধেক লবণ পাবে জমির মালিক বা চাষি আর অর্ধেক পাবে শ্রমিক। টেকনাফ আলীখালীর লবণ শ্রমিক জাফর আলম জানান, আকাশে অবস্থা ভালো না হলে লবণ উৎপাদন সম্ভব নয়, এতে জমিদারের কি আসে যায়; ভাতে মরব তো আমরা শ্রমিকরা।
কক্সবাজার বিসিক অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় লবণনীতি ২০১১ অনুযায়ী ২০১২ সালে দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৪ দশমিক ৩৬ লাখ টন। এ লবণ মনুষ্য খাদ্যে ৯ দশমিক ২৫ লাখ টন, মৎস্য ও প্রাণী খাতে ২ দশমিক ২৭ লাখ টন ও শিল্পখাতে ২ দশমিক ৮৪ লাখ টন প্রয়োজন হবে।
চলতি মৌসুমে কর্তৃপক্ষ লবণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৪ দশমিক ৫০ টন। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৭০ হাজার একর জমিকে লবণ মাঠে পরিণত করেছেন ৪৫ হাজার লবণ শ্রমিক। তারা মাঠে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে চাহিদা পূরণ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।
২০১১ সালে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৩ দশমিক ৬৮ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯০ লাখ টন। সেখানে ৩৮ হাজার ৫৮২ লবণ শ্রমিক ৫৫ হাজার ৬৩৭ একর লবণ মাঠে সারা মৌসুম লবণ উৎপাদন করেছিল ৯ দশমিক ৫৬ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ৪ লাখ ১২ টন কম। ফলে গত ২০১১ সালে লবণের চাহিদা পূরণে সরকারকে বিদেশ থেকে কিনতে হয়েছে।
চলতি মৌসুমে প্রারম্ভিক মজুদ (মার্চ পর্যন্ত) ৬ দশমিক ৯ লাখ টন ধরা হলেও বৈরী আবহাওয়া ও অসময়ে বৃষ্টি তা সম্ভব হয়নি। সেখানে চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ১ দশমিক ৫৭ লাখ টনসহ এ পর্যন্ত মজুদ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৭৪ লাখ টন।
মনুষ্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, শিল্প-কারখানায়, মৎস্য ও পশুখাদ্যসহ দেশে মাসিক লবণের গড় চাহিদা ১ দশমিক ২০ লাখ টন।
লবণ উপাদন ও মজুদদার মোঃ শফিক মিয়া জানান, লবণ উৎপাদনের দিক থেকে দেশে সবচেয়ে অধিক লবণ উৎপাদন হয় টেকনাফে। তবে টেকনাফের পূর্বপাশের বেড়িবাঁধ দুই বছর থেকে বিধ্বস্ত হওয়ায় বিশাল আবাদি জমিতে লবণ চাষ সম্ভব হয়নি। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। ফলে বহু চাষি মাঠে নামতে পারেননি।
অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সমকালকে বলেন, টেকনাফের পূর্ব পাশের পাউবো বেড়িবাঁধটি বিধ্বস্ত হয়েছে দু'বছর আগে। গত বছর ভরা বর্ষাকালে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর সেই বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রথমবারে ৪২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ওই কাজের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শফিক মিয়া। চলতি লবণ মৌসুমে কেন চাষিরা লবণ উৎপাদন করতে পারছে না। এ প্রশ্ন তার কাছে করা উচিত।
বর্তমানে লবণের বাজার দরের ওপর শ্রমিক খুশি নন। অতি কষ্টে উৎপাদিত প্রতি টন কালো লবণে দর ২ হাজার টাকা, সাদা লবণের দর ৩ হাজার টাকা ও পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত লবণের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
লবণ উৎপাদনকারীরা সরকারের প্রতি দেশে উৎপাদিত লবণের দর স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment