Monday, February 11, 2013

দূর পাহাড়ের স্বপ্ননগর বিদ্যা নিকেতন

পটিয়ায় শিক্ষিত কয়েক তরুণ মিলে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যেখানে পৌঁছত না শিক্ষার আলো। যেখানে শিশুরা ছিল অবহেলিত। শিক্ষা একটি অধিকার বিষয়টিও যারা জানতো না।
এরকমই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা খরণাচেরী চা বাগান। স্বাধীনতা পরবর্তী চা বাগানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখানকার পরিত্যক্ত চা বাগানের পাহাড়ি এলাকায় অনেক শ্রমিক রয়ে যায়। তারা পাহাড়ে জুম সহ দিন মজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করলেও তাদের সন্তানদের শিক্ষার আলো দিতে পারেনি।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সরকারিভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি তারা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের কয়েক শিক্ষিত তরুণের চোখ পড়ে অবহেলিত সেই শিশুদের দিকে। গড়ে উঠে স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন। এতেই অবারিত হয় জ্ঞানের আলো।নিজেদের পাহাড়ি বাগান দেখতে এসে পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর এলাকার রফিক ও ওয়াসিম নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণ বন্ধুর দৃষ্টি নিবন্ধিত হয় ওই এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত শিশুগুলোর দিকে। দুই বন্ধু উদ্যোগী হয়ে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করে ‘‘রোড টু লাইফ’’ শ্লোগান নিয়ে নিজেদের খরচায় ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত করে ‘স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন’। একেকদিন একেক শিক্ষার্থীর ঘরের উঠোনে দেয়া হতো পাঠদান। ওই এলাকায় গিয়ে তাদের কর্মকান্ড দেখে স্কুলটিতে সম্পৃক্ত হন আরেক শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত যুবক  ধ্রুব জ্যোতি হোড়। এরপর চরম অর্থ সংকটের কারণে দুই তরুণ বন্ধু রফিক, ওয়াসিম ২০০৫ সালে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একটি প্রাইমারি স্কুল থেকে পুরোনো বই চুরি করে এনে বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছিল। নিজেদের টিউশন ফির টাকা স্কুলটিতে খরচ করে ফেলায় ২০০৭ সালে দুই বন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাভাবে ২০০৫ এবং ২০০৭ সালে দুইবার বন্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরে ২০০৮ সালে এর হাল ধরেন চন্দনাইশ সদরের আরেক শিক্ষিত তরুণ সুজা আল মামুন। ২০১০ সালের শেষ পর্যন্ত মহাসড়ক হতে প্রায় ৪ কি.মি. দূরের ওই স্কুলটিতে হেঁটে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিতেন সকলেই। এ সময়ের মধ্যে রফিক, ওয়াসিম, সুজা আল মামুনের পাশাপাশি স্কুল পরিচালনায় অংশীদার হন মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ আহমেদ রবি, বুয়েট পাশ করা ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার নিলয় দাশ গুপ্ত, জার্মানীতে পিএইচডি অধ্যয়নরত শান্তা ওয়াসিম। ইমতিয়াজ আহমেদ রবি প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে খরচ দেন। বর্তমানে দুটি কাঁচা ঘরের তিন কক্ষে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চলে পাঠদান। কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান ছাড়াই চলা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় ফ্রি উপকরণ ও ড্রেস। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭০ জন। শিক্ষকদের বেতন, যাতায়াত সহ বর্তমানে স্কুলের মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে অবকাঠামোগত অনুন্নয়নের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। ওই এলাকায় ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ৫ম শ্রেণী পাশ করা দুই জন হলেন রোমন রায় ও সুমন দাশ। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের ও বিদ্যালয়টির পরিচালকদের সাথে আলাপ করেই জানা গেছে এসব তথ্য। দেখা গেল, স্কুলটির আঙ্গিনায় উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান তরুণ উদ্যোক্তা সুজা আল মামুন বলেন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সহযোগিতার আবেদন করে কোন ফল পাওয়া যায়নি। সুজা আল মামুন জানান, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম মাস্টার এমপি, জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ এলাকাটি পরিদর্শনে এসে স্কুলকে পূর্ণাঙ্গ সহায়তার আশ্বাস দিলেও অদ্যবধি কোন ফল পাওয়া যায়নি। তিনি স্বপ্ন নগর বিদ্যানিকেতনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থানীয় এমপি সামশুল হক চৌধুরী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

No comments:

Post a Comment