Thursday, January 20, 2011

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন, সব ধরনের সুবিধা দেবে সরকার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণের মতো সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলনে আবুধাবির সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন।

আমিরাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আসুন এবং বিনিয়োগ করুন। সরকার আপনাদের সব ধরনের সুবিধা দেবে।’ গতকাল মঙ্গলবার আবুধাবির হোটেল বিচ রোটানায় বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ফেডারেশন অব ইউএই চেম্বার অব কমারস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএইএফসিসিআই) এই যৌথ বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে দুদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ এবং ইউএইএফসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল্লাহ সুলতান সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এরই মধ্যে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুবিধা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এখানে রয়েছে বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার। বিনিয়োগের মুনাফার পুরো অর্থ দেশে ফেরত নিতে পারা, কর অবকাশ, আমদানি খাতে কম শুল্ক, সস্তা শ্রম প্রভৃতি সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওষুধ, সিরামিক, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল, গার্মেন্ট প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, তেল-গ্যাস খাতে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তুলে
ধরেন তিনি।
বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ই দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা হয়। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দরকার এর অবকাঠামো উন্নয়ন। এখানে বিশ্বমানের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা এ ধরনের একটি সর্বাধুনিক বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।’
এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ আবুধাবির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্রমোন্নতি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাভাজন হওয়ায় বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি রয়েছে নানামুখী প্রণোদনা, যা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আরব আমিরাতের উইমেন চেম্বার সভাপতি ফাতেমা ওবায়েদ আল জাবের।
তেল-গ্যাস উত্তোলনে সহায়তার আশ্বাস : আবুধাবি সরকারের তেল-গ্যাস উত্তোলন সংস্থা বাংলাদেশে তেল-গ্যাস উত্তোলনে সহায়তা দেবে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশান্বিত করেছেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আশ্বাস দেন।
তেল-গ্যাস উত্তোলনে আমিরাতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে আবুধাবি সরকার। এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী নেওয়ার বিষয়েও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সে দেশের শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানান, অভিবাসী কর্মীর বিষয়ে আবুধাবি সরকার নীতিমালা শিথিল করেছে। আইনেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা অভিবাসী কর্মী ভাইদের জন্য সহায়ক হবে।
বান কি মুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ : বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আরো সৈন্য নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে হোটেল কক্ষে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। বান কি মুন সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষার কাজে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে বান কি মুন তা সমর্থন জানান।
দুপুরে শেখ জায়েদ আল নাহিয়ানের সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

No comments:

Post a Comment