Tuesday, August 16, 2011

ঝুঁকিতে আরও দুই মহাসড়ক

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পাঁচ দিন ধরে যাত্রীবাহী বেসরকারি বাস চলছে না। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাস বন্ধ তিন দিন। ফরিদপুর-আলফাডাঙ্গা সড়কেও একই অবস্থা। এখন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের হাটিকুমরুল-বনপাড়া এবং বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথেও যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে সাময়িক মেরামতের চেষ্টা করছে। বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন চালানো যাবে বলে মনে করছে সওজ। তবে অন্য সড়কগুলোর কী হবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
সওজের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আল্লাহ আল্লাহ করছি, যাতে আর বৃষ্টি না হয়। বৃষ্টি হলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
এরই মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী প্রায় ১২টি জেলার বাস চলাচল বন্ধ আছে। গতকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) কয়েকটি বাস চালু করা হয়েছে। তবে সরকারি ছুটি থাকায় এর কোনো প্রভাব বোঝা যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিআরটিসির বাসে ময়মনসিংহ থেকে সরাসরি ঢাকার যাত্রী ছাড়া অন্য কোনো গন্তব্যে যাত্রী তোলা হয়নি। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান এম এম ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে ৩০টি বাস চলেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। অক্ষত ফিরে এসেছে বাসগুলো।’ বাড়তি ভাড়া ও মাঝপথে যাত্রী তোলার অভিযোগ নাকচ করে দেন তিনি।
মহাসড়ক মেরামত সম্পর্কে জানতে চাইলে গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রব্বে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অধিকাংশ স্থানে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা দোকান-কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি আছে। এর ওপর বালু ফেলা হচ্ছে। এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। সাময়িক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এটা করা হচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি গতকাল রাত আটটায় প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অনেক স্থান এখনো বাস চলাচলের অনুপযোগী। তিনি জানান, আজ যোগাযোগমন্ত্রী মহাসড়ক পরিদর্শনে যাবেন। সীমিত আকারে হলেও বাস চালানো যায় কি না, আজ সিদ্ধান্ত হবে। তবে এক দিন বৃষ্টি হলেই সব শেষ হয়ে যাবে।
পথে পথে দুঃখ: ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশে বড় গর্তে পড়ে গত রোববার একটি ট্রাক উল্টে যায়। এতে দিনভর ওই পথে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। জানা গেছে, মহাসড়কের এই অংশটুকু ৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত নয় কিলোমিটার এলাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে যেকোনো সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ওই পথে কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ—এ পাঁচটি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। বাসমালিক, চালক এবং সওজ সূত্র জানায়, ঈদে এই পথে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে এবং এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। মহাসড়কটি অচল হয়ে যেতে পারে।
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কটির বেহাল দশা আট বছরেও কাটেনি। তৈরির কয়েক দিন পরই ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটির বিভিন্ন অংশ দেবে যায়। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর কয়েক দফা সড়কটি মেরামত করা হয়। কিন্তু এখনো বড় বড় গর্তে ভরা এবং অনেক স্থান দেবে আছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
২০০৪ সালে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
গত রোববার সরেজমিনে সড়কের মান্নাননগর এলাকায় তিনটি ট্রাক, ৯ ও ১০ নম্বর সেতুর পাশে দুটি ট্রাক এবং খালকুলায় একটি ট্যাংকলরি নষ্ট হয়ে সড়কের গর্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি ট্রাক উল্টে পড়ে আছে।
এই মহাসড়কের খালকুলা বাজার, ৬ ও ৭ নম্বর ব্রিজের মধ্যখানের দুটি স্থানে, মহিষলুটি ও মান্নাননগর এলাকার পাঁচটি স্থানে ৫০ মিটার এলাকাজুড়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৯ ও ১০ নম্বর সেতুর দুই পাশে ২০০ মিটার এলাকা চলাচলের অনুপযোগী।
সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল খালেক বলেন, ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করার কাজ চলছে। বৃষ্টির জন্য কাজ এগোচ্ছে না।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুন নবী বলেন, গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। দ্রুত মেরামতের জন্য ১০ আগস্ট সওজকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
সওজের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর-ই-আলম বলেন, স্থায়ী মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বরাদ্দ ঠিকমতো না পাওয়ায় ঠিকাদার কাজে উ ৎ সাহী হননি।
ফরিদপুর থেকে আলফাডাঙ্গা: এই ৩৪ কিলোমিটার সড়কেও বড় বড় গর্ত। এই সড়কে শনিবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সওজ সূত্র জানায়, পুরো সড়কে পিচের চিহ্ন নেই। হাঁটুসমান গর্তে প্রতিদিনই যানবাহন বিকল হয়ে যাচ্ছিল। এই পথে প্রতিদিন ১০০ বাস চলত।
বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের সাড়ে আট কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রোববার ভোরে পূর্ব ইলিশার গুপ্তমুন্সী এলাকায় সড়কের বড় গর্তে মালবাহী ট্রাক আটকে গেলে আট ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এই পথে এক হাজারের বেশি যান চলে। এ সড়কটি দিয়ে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যানবাহন চলে।
গাজীপুর থেকেও বাস চলাচল বন্ধ: গাজীপুর থেকে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন উপজেলায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে গতকাল থেকে। ফলে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া হিউম্যান হলার, টেম্পো, লেগুনা, অটোরিকশায় করে স্বল্প দূরত্বে লোকজন চলাচল করছে। বাস বন্ধ হওয়ার সুযোগে এসব যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুরের শ্রমিক নেতা দেওয়ান ফিরোজ জানান, গাজীপুর থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা পরিবহন, গাজীপুর পরিবহন, কালিয়াকৈর পরিবহন, পলাশ পরিবহন, বলাকা পরিবহন ও নিরাপদ পরিবহন সোমবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। চালক বাবুল মিয়া জানান, ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা সড়কে গাড়ি চালালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পানি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে যাওয়া-আসায় যেখানে আগে তিন ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেখানে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। আগে তেল লাগত সাড়ে চার হাজার টাকার। এখন লাগে ছয় হাজার টাকার। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।

No comments:

Post a Comment