Tuesday, August 16, 2011

বইপত্র- রোকেয়ার আলো by সুদীপ্ত শাহীন

প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদে বাংলাদেশের নারী ও রোকেয়ার দর্শন—সম্পাদনা করেছেন নাজমা চৌধুরী \ ২০১০ \
পাঠক সমাবেশ \ পৃষ্ঠা ৮৭ \ ২৯৫ টাকা
উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। পাশাপাশি মহীয়সী একজন নারী, একজন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবেও নন্দিত। সংগঠক, সাহিত্যিক, সমাজসংস্কারক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অনন্য। নারীমুক্তির পথিকৃৎ ও নারীবাদের প্রবক্তা হিসেবেও তাঁর অবদান চিহ্নিত।

এ রকম বহুবিধ অভিধায় তিনি সম্মানিত। তাঁর সকল কর্ম ও সৃষ্টির বহুধা হলেও সবকিছুর মূলে রয়েছে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমতা নিশ্চিত করা। এ কারণে তাঁর যাপিত জীবন, কর্ম ও সৃষ্টির আলোকে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ও প্রচেষ্টা বর্তমানের বিদ্যোৎসাহী, আলোকপিয়াসী, মুক্তমনা নারীরা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো দেশের প্রধানতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা। নতুন শতাব্দীতে নারীর জন্য এই প্রাপ্তি মহার্ঘ্য এক সম্পদতুল্য, যার শুরুটা হয়েছিল গত শতকের আশির দশকে। ২০০০ সালে উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৬-এ পরিবর্তিত নাম দাঁড়ায় উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, যারা প্রতিবছর আয়োজন করে রোকেয়া স্মারক বক্তৃতামালার। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালে উপস্থাপিত বক্তৃতার সংকলন বই প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদে বাংলাদেশের নারী ও রোকেয়ার দর্শন। সম্পাদনা করেছেন নাজমা চৌধুরী। লেখকেরা হলেন মাহমুদা ইসলাম, মালেকা বেগম, হাসনা বেগম ও সুলতানা কামাল। উপর্যুক্ত লেখকক্রম অনুযায়ী বিষয়গুলো হলো—রোল অব ওমেন ইন পলিটিক্স অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন, রোকেয়ার নারী ও ধর্মভাবনা: জাতীয় নারীনীতি, রোকেয়ার দৃষ্টিতে পারিবারিক আইন ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিত। এ ছাড়া রয়েছে লেখক পরিচিতি এবং সম্পাদকের লেখা ভূমিকা—রোকেয়ার দর্শন: রাজনীতিতে নারী, নারী আন্দোলনের স্বরূপ ও ধর্মের রাজনীতি।
বক্তৃতার শিরোনাম দেখে সহজেই অনুমিত হয় বিষয়বিন্যাসের স্বরূপ, যার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় উপমহাদেশের নারী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি। দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লড়াই-সংগ্রামের সারকথা। মানুষের সারস্বত জীবনের মৌল প্রসঙ্গগুলোই এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। রাজনীতি, নারী আন্দোলন, ধর্মভাবনা, নারীনীতি, পারিবারিক আইনের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে শিরোনামে রেখে তার ভেতরেও দৃষ্টি প্রোথিত করা হয়েছে, যাতে শুধু তথ্য সন্নিবেশন নয়, গভীর পর্যবেক্ষণ, তীক্ষ বিশ্লেষণ, নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে অতীতের প্রতি যেমন দৃষ্টিপাত করা হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যৎ রূপরেখা ও প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত হয়েছে। ভূমিকাংশেও এমনটিই বলা হয়েছে: রোকেয়ার অবদান এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে বর্তমানে নারীসমাজের অবস্থান বিশ্লেষণ রোকেয়া স্মারক বক্তৃতামালার পরিধির বিস্তার ঘটবে। বর্তমান সংকলনে অন্তর্ভুক্ত বক্তৃতামালা এভাবেই বাংলাদেশে নারীর সমস্যাসংকুল অবস্থানের কয়েকটি দিক তুলে ধরেছে। রোকেয়া স্মারক বক্তৃতামালা রোকেয়া স্মরণে নিবেদিত হলেও এর একটি বৃহৎ প্রায়োগিক পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে, যা বিভাগের রোকেয়াচর্চাকে গুরুত্ববহ ও সম্ভাবনাময় করেছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা সমুন্নত করার প্রশ্নে রোকেয়া চর্চার কোনো বিকল্প নেই। যে অবস্থায়, যে পরিধিতে এ রকম কর্ম সম্পাদন হোক না কেন, তার জন্য সাধুবাদ জানানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে যখন এ রকম কর্ম সম্পাদন হয়, তখন সেটি আমাদের সবাইকে আশান্বিত করে। নতুন সম্ভাবনায় বুক বাঁধতে শেখায়। এ রকম আয়োজন এবং শেষাবধি তার গ্রন্থভুক্তকরণ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। কেননা, রোকেয়াচর্চার মধ্য দিয়েই যাওয়া যাবে আলোকপানে, যার জন্য প্রয়োজনে আলোকের এই স্রোতধারাকে বেগবান করা। লেখক-সম্পাদকের যৌথ প্রয়াসে আলোচ্য বই শত ফুল ফোটার সুযোগ করেছে। এখন মঞ্জুরিত হওয়ার পালা। যা হলে রোকেয়ার ঋণ শোধরানোর কিঞ্চিৎ সুযোগ মিলবে আর শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো সম্ভব হবে সম্পাদক-লেখককে। সেই প্রত্যয় ও প্রতীতিতে জয়তু জানাই রোকেয়া স্মারক বক্তৃতামালাসংশ্লিষ্ট সবাইকে।

No comments:

Post a Comment