Saturday, January 22, 2011

যানজটের আরেক নাম মন্থরতা by এমজি মহিউদ্দিন আহম্মদ

দেশের রাজধানী বিধায় ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ কাজটি ইতিমধ্যে বিলম্বিত হয়ে গেছে। চার দশক আগে এ নগরীতে দশ-বার লাখ মানুষের বসবাস থাকলেও বর্তমান সময়ে তা প্রায় দেড় কোটিতে উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে লাখ লাখ মানুষ।

এ বিপুল জনসংখ্যার কবলে সৃষ্ট যানজট নিরসনে আমাদের যথার্থ উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। দেশের সব এলাকায় বিভিন্নমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা কার্যকর করতে সময় লাগবে এবং এসময়ে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত চলতেই থাকবে। আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে কত মানুষের জায়গা করা যেতে পারে। ধরা যাক কম-বেশি তিন কোটি মানুষ ঢাকায় বসবাস করবে। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকার রাস্তার উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একই সাথে সারাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে হবে। যাতে দেশের মানুষ নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে। ঢাকার চারপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা শুনা যায়। যা বাস্তবায়নে ঢাকার যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা না থাকাই স্বাভাবিক।

ঢাকার যানজট নিরসনে দেশের সার্বিক উন্নয়ন তৎপরতার সাথে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানজট নিরসনে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত সমন্বিত তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমতঃ ঢাকায় বসবাসকারী ও চলাচলকারী মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য (১) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা (২) মধ্য মেয়াদী ব্যবস্থা এবং (৩) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাসহ এগোতে হবে। দ্বিতীয়তঃ দেশের সকল এলাকায় শিল্পায়নসহ বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা নিশ্চিত করতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে এবং ঢাকামুখী তৎপরতার অবসান হতে পারে। স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। তাছাড়া দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও অপরিহার্য। এসব উদ্যোগই কেবল ঢাকার যানজট নিরসনে মৌলিক ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকার যানজট নিরসনে তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার আওতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে ঢাকার বড় বড় রাস্তাসহ প্রায় সব রাস্তায়ই গাড়ি পার্কিং করতে দেখা যায়। যানজট সৃষ্টিতে এ ধরনের পার্কিং ভূমিকা রাখছে। রাস্তার পাশের ফুটপাত ও বহুমুখী ব্যবহারে থাকায় পথচারী রাস্তায় চলতে দেখা যায়। ছিনতাই ও অব্যবস্থাপনায় ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসেও মানুষের চলাচল কম। তাছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারেও ঘাটতি বিদ্যমান। এ অবস্থার অবসানে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। যানজট নিরসনে মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ঢাকায় বিদ্যমান রাস্তাগুলোর সংস্কার করা দরকার। বিদ্যমান রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেগুলো সরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে সুপরিকল্পিতভাবে নতুন রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, প্রাদেশিক রাজধানী হবার পরই মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড নির্মিত হলেও স্বাধীনতা উত্তরকালে এ ধরনের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় দূরদৃষ্টিসহ এ শূন্যতার অবসান ঘটানো অপরিহার্য।

ঢাকায় যানজট একদিনে নয় বরং দীর্ঘদিনের অবহেলায় সৃষ্ট। তাই এর হাত থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণের সুযোগ নেই। বিদ্যমান রাস্তায় দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ার জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যমান রাস্তাগুলোর সংস্কার করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পরিকল্পিতভাবে নতুন রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ঢাকায় জীবিকার সন্ধানে আসা মানুষের স্রোত বন্ধ করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর মানুষের ঢাকামুখী স্রোত বন্ধ করতে হলে দেশের সব এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অব্যাহত তৎপরতা চালাতে হবে। আর এ কাজটিও অপরিহার্য।

No comments:

Post a Comment