Saturday, January 22, 2011

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে নাব্যতা সংকট

মুনা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দর হইতে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ও সারের স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হইতেছে। এই খবর প্রকাশিত হইয়াছে গত সোমবার একটি সহযোগী দৈনিকে। রিপোর্টে বলা হয়, যমুনা নদীতে বিভিন্নস্থানে ডুবোচর ও চর জাগিয়া উঠায় গত চার-পাঁচ দিন ধরিয়া বাঘাবাড়ি নৌ বন্দরে কোনো কার্গো জাহাজ ভিড়িতে পারিতেছে না। এখানে আটকা পড়িয়া রহিয়াছে কম করিয়া হইলেও তেত্রিশটি কার্গো জাহাজ।

জানা যায়, তেল ও সারবাহী বার্জ এবং কার্গোগুলি নৌবন্দরে ভিড়িতে না পারায় সমগ্র উত্তরাঞ্চল জ্বালানি তেলশূন্য হইয়া পড়িবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। যমুনা নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকায় দুই মাস ধরিয়া ড্রেজিং কাজ চলিতেছে। এখানে ৪ লক্ষ ঘনফুট বালি অপসারণও করা হইয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুই/তিন দিন পরেই খনন করা নদী আবার বালিতে ভরিয়া গিয়াছে। এই ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় করা হইয়াছে ১৮ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে জানা যায়, নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে বাঘাবাড়ি বন্দরের বিশ কিলোমিটার ভাটিতে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ, পেঁচাখোলা, নাকালিয়া ও কৈটোলায় প্রায় ৬১ লক্ষ লিটার জ্বালানির তেলবাহী ১৭টি কার্গোসহ ৩৩টি জাহাজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরিয়া আটকা পড়িয়া রহিয়াছে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব হইতেছে না। এমতাবস্থায় ঐ ড্রেজার দিয়া যেভাবে মাটি বা বালি কাটা হইতেছে তাহাতে সরকারের কেবল টাকাই গচ্চা যাইতেছে। আশানুরূপ ফল পাওয়া যাইতেছে না মোটেও। একই সূত্রমতে, গত রবিবার পর্যন্ত বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপোর তিনটি কোম্পানির বিপণন কেন্দ্রে ২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ডিজেল মজুদ ছিলো। এইরূপ মজুদ থাকা সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সংকট ঘনীভূত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে।

এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য যে, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে প্রতি বৎসরই এই নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বাঘাবাড়ি উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর এবং এই বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর হইতেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জ্বালানি ও সার সরবরাহ করা হইয়া থাকে। বর্তমানে যদিও সড়ক ও রেলপথেও তেল-সার সরবরাহ সম্ভব, তাহা হইলেও বাঘাবাড়ির গুরুত্ব হ্রাস পায় নাই। কিন্তু এই নৌ অঞ্চলের নাব্যতা ধরিয়া রাখিতে না পারায় সমস্যা দেখা দিয়াছে। প্রসঙ্গত বলা বাঞ্ছনীয় যে, ইরি-বোরো চাষের মৌসুম শুরু হইয়াছে। সেচযন্ত্রের বেশিরভাগই চলিয়া থাকে ডিজেলে। ডিজেলের সরবরাহ বিঘি্নত হইলে বোরোচাষে তার বিরূপ প্রভাব যে পড়িবে তাহাতে আর সন্দেহ কী! নাব্যতা সংকটের কারণে সারের সমস্যাও প্রকট হইবে। এমতাবস্থায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দর সচল রাখার জন্য প্রয়োজন কার্যকর ড্রেজিং-এর মাধ্যমে নাব্যতা বজায় রাখিবার বাস্তবোচিত এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্মত উপায় খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। নচেত পুনরায় বালু আসিয়া সংকট তৈরি করিবে ইহা জানা কথা। একই সাথে ড্রেজিং-এর ধারাবাহিকতাও রক্ষা করিতে হইবে। আমরা আশা করি সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন।

No comments:

Post a Comment