Thursday, January 13, 2011

বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা দেবে ভুটান

বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভুটান। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ইউসেফ থিনলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ভৌগোলিক সাদৃশ্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ট্যুরিজমের প্রস্তাব সমর্থন করেন। শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ অংশীদার বা বিদ্যুতের সরাসরি ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, 'এই মুহূর্তে ভুটানের পক্ষে নতুন শরিকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হলেও আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা সক্ষম হবে।' প্যাকেজ ট্যুরিজম সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটানের পাহাড় ও উপত্যকা এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের সোনালি সৈকতসহ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতেও সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় ভুটানের সহায়তা প্রত্যাশা করে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটান একে অপরের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে দুই দেশ নতুন করে গতিশীলতা আনতে পারে। ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। আইটি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিক্ষা ও নির্মাণের মতো সম্ভাবনাময় খাতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি খাতেও এ ধরনের সহযোগিতা সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডের মধ্যে সবার জন্য লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যাপকভাবে ব্যবহার এবং অন্যান্য সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পারস্পরিক স্বার্থে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ট্রানজিট ও যোগাযোগ সম্পর্কিত সব বিষয় একটি একক কাঠামোর আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।' বৈঠককালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প-২০২১-এর লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাটলার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম এ করিম, পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস ও প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি সই
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময়ের একটি চুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক গতকাল মঙ্গলবার সই হয়েছে। ভুটানের পররাষ্ট্রসচিব দাশো দাউ পেনজো এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরাইয়া বেগম সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তিতে এবং স্বাস্থ্যসচিব হুমায়ুন কবির স্বাস্থ্য খাতের সমঝোতা স্মারকে সই করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ভুটানে চাকরি করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. এ এফ এম রুহুল হক, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ আবদুল আজিজ, মুখ্যসচিব এম এ করিম, পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মাদ মিজারুল কায়েস, প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment