Tuesday, December 07, 2010

নিজেকে রক্ষা করতে মেয়েটি আর কী করতে পারতেন? বখাটের দায়ের কোপ

কোনোভাবেই নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না মেয়েটি। কলেজে যাওয়া বন্ধ করেও না, থানা-পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েও না। বখাটের দায়ের কোপে ক্ষতবিক্ষত মেয়েটির আপাতত আশ্রয় হয়েছে হাসপাতালে। সে কোপ এতই ভয়াবহ যে বাকি জীবন পঙ্গু হয়ে কাটাতে হতে পারে বরগুনার এই মেয়েটিকে। হামলায় ১৮ বছর বয়সী এই মেয়েটির যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা একজন চিকিৎসকের পক্ষেও সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ‘পেশাগত জীবনে এমন বর্বরতা আর দেখিনি’—এ মন্তব্য মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকের।
মেয়েটিকে বাকি জীবন যদি পঙ্গু হয়ে কাটাতে হয়, তবে আমাদের কি ধরে নিতে হবে, এটাই তাঁর নিয়তি ছিল! এলাকার বখাটে মহসিন উৎপাত শুরু করায় ছয় মাস ধরে তাঁর কলেজে যাওয়া বন্ধ। এভাবে চলবে না ভেবে গত নভেম্বরে বরগুনা থানায় গিয়ে নিজের ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে এসেছেন মেয়েটি। থানার আশ্বাসও মিলেছে। নির্বাচনী পরীক্ষা বাদ দিলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। মেয়েটি একা বের হওয়ার সাহস পাননি, বাবাকে নিয়েই রওনা হয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে। ভয়ংকর এ ঘটনা ঘটে পথের মধ্যেই। বখাটে মহসিনের দায়ের কোপে মেয়ে-বাবা দুজনই ক্ষতবিক্ষত। বরগুনা থানার পুলিশ যাকে ‘খুঁজে’ পায় না, মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হওয়ামাত্রই যখন সেই ‘নিখোঁজ’ বখাটের হামলার শিকার হন, তখন ঘটনাটিকে মেয়েটির নিয়তি বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী বলা যায়! নিজেকে রক্ষার জন্য মেয়েটি আর কী করতে পারতেন?
বাকি জীবন এই দিনমজুরের মেয়ের পঙ্গু অবস্থায় কাটাতে হবে কি না, এই যখন আশঙ্কা—তখন পুলিশ ও প্রশাসনে আমরা কিছু নড়াচড়া লক্ষ করছি। পুলিশের তিনটি আর র‌্যাবের একটি দল এখন বখাটে মহসিনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। মেয়েটি জিডি করার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এক এসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে। সমাজও জেগে উঠেছে, ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক কিছুই হয়তো হবে। কিন্তু কোনো কিছুই মেয়েটি ও তাঁর পরিবারকে আর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে না। তবে এই মেয়েটিকে কেন নিরাপত্তা দেওয়া গেল না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা গেলে, ঘটনাটি থেকে শিক্ষা নিলে ও বখাটে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা কমানো সম্ভব।

No comments:

Post a Comment