Tuesday, December 07, 2010

তেল নিয়ে...

তেল নিয়ে তেলেসমাতি আপাতত বন্ধ হচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে। গত রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্য তেলের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের নতুন মূল্য ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। তেলের দাম নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছিল বেশ কয়েক দিন থেকেই। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তেল ব্যবসায়ীদের বেশ কড়া স্বরেই ধমক দিয়েছিলেন। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পর ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকায় খোলা সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ টাকা। নতুন দর অনুযায়ী ঢাকার মিলগেটে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন পাইকারি ৮৩ টাকা ও চট্টগ্রামে ৮১ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রে খোলা সয়াবিনের চেয়ে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ ঢাকায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯৮ টাকা ৯০ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ৯৬ টাকা ৬০ পয়সা হবে। আজ থেকে এ দর কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তেল নিয়ে তেলেসমাতি এটাই প্রথমবারের মতো নয়। এটা লক্ষ করা গেছে, আমাদের বাজারে একবার তেলের দাম বেড়ে গেলে সেটা আর কমে না! তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সব সময়ই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হয়ে থাকে। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে আমাদের এখানেও বাড়ে; কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে তার প্রভাব আমাদের বাজারে খুব কমই পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে আমাদের দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায় না। বাংলাদেশের বাজারে একবার কোনো জিনিসের দাম বাড়লে তার দাম কমে না_এটাই যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে অবস্থা থেকেও এবার মুক্তি মিলবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম বাজার তদারকি করবে। কাজেই আশা করা যায়, এবার ভোক্তারা বাজারে গিয়ে অন্তত দামের ক্ষেত্রে প্রতারিত হবেন না। সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত হয়ে যায় মিল গেটেই। মিলগেট থেকে যে দামে পাইকারি বিক্রেতারা তেল কেনেন, তার ওপর নির্ধারিত হয় খুচরা বাজারের দাম। খুচরা বিক্রেতারা সাধারণত কেনার ওপরই লাভ করে থাকেন। তাঁরা পাইকারি বাজার থেকে কেজিদরে সয়াবিন তেল কিনে সেটা বাজারে বিক্রি করেন লিটার হিসাবে! এখান থেকেই খুচরা বিক্রেতাদের ৭ শতাংশ লাভ হয়ে যায় বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নেওয়া এবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে সয়াবিন তেল মিলগেট থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজার_সবখানেই বিক্রি হবে লিটার হিসাবে।
বাজারে সব জিনিসের দামই বাড়তির দিকে। তেলের দাম চলে গিয়েছিল আয়ত্তের বাইরে। কোনোভাবেই তেলের বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভোক্তাসাধারণ এতে একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্ধারিত মূল্যে সয়াবিন তেল খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের। সে দায়িত্ব তারা ঠিকমতো পালন করে কি না_সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments:

Post a Comment