Tuesday, December 07, 2010

ওয়াসার দূষিত উপহার

ত মৌসুমেও হয়নি, আগামী শুষ্ক মৌসুমেও হবে না। ঢাকাবাসীর ভাগ্যে এবারও অপেক্ষা করছে শোধনের অযোগ্য দূষিত-দুর্গন্ধযুক্ত পানি। নদীদূষণ বাড়ে, শোধনের ব্যবস্থা বাড়ে না। সমস্যা সংকটে গড়ায়, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের টনক নড়ে না। তাঁরা চলেন গদাই লশকরি চালে, আর সমস্যা বাড়ে রকেটগতিতে। নদীর দূষিত পানি শোধনের আগে প্রাক-শোধনযন্ত্র অনেক আগেই বসানোর কথা থাকলেও এখনো সেই কাজ শুরুই হয়নি। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।’ কিসের অপেক্ষায় তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার।
কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু অকাতরে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগসহ ঢাকার নদ-নদীগুলোতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। গত রোববারের প্রথম আলোর ছবি সাক্ষী, এই দূষণ বাধাহীনভাবে ঘটেই চলেছে। ২০০৩ সালে ঢাকার নদীদূষণের কারণ হিসেবে ৩৬টি শিল্প-কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১০ সালের শেষেও এসব দূষণের কারখানা না কমে বরং অনেক বেড়েছে। ঢাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগেরই দূষণ দূর করার প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। বহু আবেদন-নিবেদনের পরও হাজারীবাগের ট্যানারি-শিল্পকে সেখান থেকে সরানো যায়নি। যে কায়েমি মহল নদী দখল ও দূষণের জন্য দায়ী, তাদের দাপট গগনচুম্বী। একশ্রেণীর আমলা-রাজনীতিক-ভূমিদস্যুর ত্রিভুজ ক্ষমতার কাছে সরকারি তৎপরতা সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতোই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব ওয়াসার। নদীর পানি শোধন করা এবং এর দেখভাল করার দায়িত্বও তার। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও দায় কম নয়। অথচ এখনো তারা কথা বলছে ধারণার ভিত্তিতে, নিশ্চিত আশ্বাস ছাড়াই। ওয়াসার পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল, এবারের শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই প্রাক-পরিশোধনযন্ত্র বসানো যাবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে না।’ শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। প্রায় দেড় কোটি নগরবাসীর পানিপ্রাপ্তির প্রশ্ন যেখানে, সেখানে ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা কেমন দায়িত্বশীলতা? প্রাক-শোধনযন্ত্র তো গতবারই বসানোর কথা। কেন এবং কার গাফিলতির জন্য তা হয়নি, সেটাই জনগণের জানা প্রয়োজন।
দূষণ চলবে, প্রতিকার চলবে না এবং অস্বাস্থ্যকর দূষিত পানি মানুষের শরীরকেও দূষিত করে যাবে—এটা নিয়তি হতে পারে না। আশা করি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত করবে এবং নগরবাসীর ভোগান্তির নিয়তি বদলানোয় দৃশ্যমান কাজ করবে।

No comments:

Post a Comment