Tuesday, December 07, 2010

অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্থাপনার তালিকা ফাঁস

ইকিলিকস যেসব নথি ফাঁস করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থাপনা ও অবকাঠামোর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। তেলের পাইপলাইন থেকে বসন্তের টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে এই নথিটি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) জব্দ করা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন কূটনীতিকদের গোয়েন্দাগিরির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুমোদনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। গত রোববার স্প্যানিশ পত্রিকা এল প্যারিস-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইন।
উইকিলিকসের নথির তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশে সব মার্কিন মিশনকে ওই সব দেশের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এই তালিকায় তেলের পাইপলাইন, যোগাযোগ ও পরিবহনবিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে ব্রিটেনের কিছু কেব্ল লোকেশন ও স্যাটেলাইট সাইট এবং টিকা তৈরি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমসের নাম। এই প্রতিষ্ঠানটি ল্যাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত। তালিকায় জিবুতির জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সব লেন এবং মিসরের সুয়েজ খালের জাহাজ টার্মিনাল ও ইরাকের বসরার তেলের টার্মিনালের নাম রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম। এই তালিকা প্রকাশের ঘটনায় গতকাল সোমবার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেন।
গতকাল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ডাউনিং স্ট্রিট কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বিনা অনুমতিতে এসব গোপন তথ্য প্রকাশ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি বলেন, এসব তথ্য ফাঁস ও প্রকাশ করার ঘটনায় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্প্যানিশ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আইন মেনে চলে—যদি এ কথা বিশ্বাস করা হয়, তাহলে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন কূটনীতিকদের গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ ও অনুমোদনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সব কর্মকর্তারই পদত্যাগ করা উচিত। এই নির্দেশের বিষয়টি এতই গুরুতর যে, এতে হয়তো বা প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়েছিল।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, এই অবৈধ নির্দেশ সম্পর্কে ওবামা কখন কী জানতেন, এ ব্যাপারে তাঁকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তিনি যদি জবাব না দেন বা এই নির্দেশে তাঁর অনুমোদন দেওয়ার প্রমাণ মেলে, তাহলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আড়াই লাখেরও বেশি গোপন নথি প্রকাশ শুরু করার পর থেকে সে দেশের কূটনীতিকদের জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে উইকিলিকস। এসব নথির তথ্য থেকে বিদেশি নেতা ও রাজনীতিকদের নিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের বিভিন্ন মন্তব্য ও ধারণা বের হয়ে এসেছে। এর মধ্যে একটি নথির তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের টেলিফোন ও ই-মেইল নম্বর এবং ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন।
অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ: সুইজারল্যান্ডের পোস্ট অফিস ব্যাংক ও পোস্ট ফিন্যান্স গতকাল অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এর ফলে তাঁর ৩১ হাজার ইউরোর সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ হয়েছে।
আল-জাজিরা দরকষাকষির হাতিয়ার: কাতার আরব টিভি চ্যানেল আল-জাজিরাকে তার বৈদেশিক নীতিতে দরকষাকষির মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বৈদেশিক নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা নিজেদের মর্জিমাফিক প্রতিবেদন প্রচার করে থাকে। কিছু প্রতিবেদন আছে, যা অন্য দেশ বা নেতার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সে ক্ষেত্রে তারা ওই প্রতিবেদন প্রচার না করার বিনিময়ে বড় ধরনের ছাড় পাওয়ারও প্রস্তাব করে। উইকিলিকসের প্রকাশিত গোপন মার্কিন নথিতে এই তথ্য রয়েছে। মার্কিন কূটনীতিকদের বার্তায় এসব বলা হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, চ্যানেলটি সম্পাদকীয়ভাবে নিরপেক্ষ বলে সম্প্রচারকারীদের জোর দাবি সত্ত্বেও এটি ‘কাতারের সবচেয়ে মূল্যবান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্ত্রের একটি।’ এতে বলা হয়, উপসাগরীয় এই দেশটি বিদেশি অন্য নেতাদের নিজেদের পছন্দমতো কাজে লাগাতে আল-জাজিরার কাভারেজকে ব্যবহার করে।

No comments:

Post a Comment