Wednesday, June 20, 2012

সংরক্ষিত বনে তিন মাসে ১৩০০ ঘর!

বন আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে দেদারসে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

গত তিন মাসে এই বনের জমি দখল করে এক হাজার ৩০০টির বেশি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।
কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন আইন ১৯২৭ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে ঘরবাড়িসহ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১২ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে, বারবাকিয়া বনবিটের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লাইনের শিরা এলাকায় ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে সৃজিত বনের ভেতরে বাঁশের বেড়া ও শণের ছাউনি দিয়ে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই এলাকার বনভূমি দখল করে স্থানীয় মোহামঞ্চদ নূর, জামাল হোসেন, শামসুল আলম, রমিজ উদ্দিন ও আবুল হোছন দুটি করে; নেজাম উদ্দিন ও বদি আলম একটি করে; নূর মোহামঞ্চদ ও আশকর আলী তিনটি করে এবং দুলা মিয়া চারটি বসতঘর নির্মাণ করেছেন।
দখলদার নূর মোহামঞ্চদ, বদি আলম ও জামাল হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট বনবিটের কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে বনভূমি দখলে নিয়ে বসতঘর নির্মাণ করছেন। গত তিন মাসে তাঁদের কেউ বাধা দেয়নি।
পাশের আরগিলার দাঁরা, লম্বা শিরা, ছনখোলার জুম, সংগ্রামের জুম, আবাদিঘোনা, হঁউতুইল্লাহ, পুটিবিন্না, ঢালার মুখ, টৈটং বিটের বটতলী, খুইন্যাভিটা, ডাইনের ছড়া, মধুখালী, বনকানন, পুঁইছড়ির টিলা, বড় জিরিসহ বেশ কিছু এলাকায় এক হাজার ৩০০টির বেশি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দখলদার জানান, গত তিন মাসে সংরক্ষিত বনের জমিতে এক হাজার ৩১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে আরও কমপক্ষে এক হাজার ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বনের গাছ কেটেই বেশির ভাগ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বারবাকিয়া বনবিটের মালী সোহাগের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তা কাউসার হোসেন পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে বনভূমি দখলের সুযোগ দিচ্ছেন। গত ২৩ মে বেলা ১১টায় বড়ছড়া এলাকার অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা তুলতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন এক বনকর্মী।
উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাউসার হোসেন জানান, সংঘবদ্ধভাবে কিছু লোক সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বসতঘর নির্মাণ করছে। লোকবলসংকটের কারণে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাকসুদুর রহমান জানান, পুলিশ ও বন বিভাগ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করবে। আর অবৈধভাবে বসতি স্থাপনে সহায়তার সঙ্গে কোনো বন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment