Tuesday, June 26, 2012

মহেশখালী কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ন অঞ্চল পানির নিচে

গত তিন দিনে আষাঢ়ের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রে অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়ার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

অব্যাহত বৃষ্টি ও বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গনের কারণে মহেশখালীর ধলঘাটায় অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়াম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু। কুতুবদিয়াতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মহেশখালীর কালারমার ছড়ার বাসিন্দা সৈয়দুল কাদের বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মহেশখালী  ধলঘাটায় অমাবশ্যার জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা।

গত ২৪ জুন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ঝড়ো বৃষ্টি ও অমাবশ্যার জোয়ারে মহেশখালীর ধলঘাটায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। পাশাপাশি প্রায় ২০ টি চিংড়ি ঘের জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ো হাওয়ার কারণে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সরাইতলা ও নয়াঘোনা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরাইতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি এখন পানির নিচে।

ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক বাসিন্দা এখন সাইক্লোন শেল্টার সেল্টারে অবস্থান নিয়েছে। সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধে দেওয়া ব্লকগুলো উপড়ে গেছে। মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে ধলঘাট ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে।

সুতরিয়া ইউপি সদস্য  আনসার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এই ওয়ার্ডের সাইক্লোন সেল্টারগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না।

চিংড়ি মৌসুমের শুরুতে ঘের গুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় চাষীরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি ও ঝড়ো হাওয়ায় এই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া মহেশখালীর পৌরসভা, কুতুবজোম, তেলীপাড়াসহ দুটি প্রধান সড়কে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিদুৎ বিতরণেও সমস্যা হয় বলে স্থানীয় বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন ও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় দ্বীপের নিম্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ৬টি ইউনিয়নের ১৭টি জায়গায় বেড়িবাধ ভাঙ্গা থাকায় সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।

কুতুবদিয়ার কৈয়াবিল এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতব্বর সাংবাদিকদের জানান, এমন অবস্থায় তার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে পরাণ সিকদার পাড়া, মহাজন পাড়া, ঘিলাছড়ি, বিন্দাপাড়া, মফজল ডিলার পাড়ায় বাসিন্দা ৫শ’ পরিবারের ৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসব এলাকার তিন হাজারের মত লোক বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাছাড়া আলীআকবর ডেইল তবলার চর, কুমিরার ছড়ি, জাইল্যা পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় ফসলি জমিতে লোনা পনি ঢুকে পড়েছে। তাছাড়া আনিছের ডেইল, পূর্ব তবলার চরের ব্যাপক এলাকা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে লেমশিখালী, পেয়ারাকাটা, বড়ঘোপের আজম কলোনি, দক্ষিণ আজমখালী, উত্তর দ্রুং, ফয়জনের বাপের পাড়াসহ দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকায় ব্যাপক ভাবে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ায় এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কাউছার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ তথ্য বিস্তারিতভাবে  জানতে না পারায় সাহায্যের কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

No comments:

Post a Comment