Tuesday, June 26, 2012

পরিকল্পনার অভাবঃ বর্ষার শুরুতেই ভাঙছে মেরিন ড্রাইভ

ভাঙছেই মেরিন ড্রাইভ। বর্ষার শুরুতে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বেশ কিছুদিন ধরে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়।

বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এমনকি জিইও (বালুভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা) দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মেরিন ড্রাইভের অসংখ্য কালভার্ট দিয়ে পাহাড়ের পানি সাগরে ধাবিত হচেছ। অপর দিকে জোয়ারের তোড়ে প্রচন্ড ঢেউ এসে সরাসরি আঘাত করছে সড়কের এসব স্থানে। এতে সড়কের ভাঙন বাড়ছে। ফলে ভেঙে যাওয়া সড়ক রক্ষাণাবেক্ষণ করতে দিনরাত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।
জানা যায়, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং সামুদ্রিক জ্বলোচ্ছাস থেকে রক্ষার জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যেমন গুরুত্ববহন করে তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চলতি বর্ষা শুরু হতেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি নামক স্থান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় অসংখ্য ভাঙন । যার ফলে সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কটির অস্থিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছরও বর্ষার সময় এ সড়কটি বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়কটি সাগরের ঢেউ হতে রক্ষা করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে জিইও পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙন ঠেকানোর জন্য সেনাসদস্যরা রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত বছর মেরিন ড্রাইভ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু গত অর্থ বছর ও চলতি অর্থ বছরে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এরপরও সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভাঙন রোধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তা না পেলে মেরিন ড্রাইভ রক্ষা করা কঠিন হতো। এদিকে সময়মতো টাকা না পেলে মেরিন ড্রাইভের কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ করাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণে নকশা ভুল ছিল বলে প্রতিবছর সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেষ্টিং এন্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই-বাচাই যথাযথ ছিল না বলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটির কাজ শুরু করে। ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে এটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রকল্পটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করে প্রকল্পটি ফের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন পর্বে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয় তখন জিনিসপত্রের দাম ছিল কম। এখন নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্প এবং এর আশপাশে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা ধারণা করেন, দ্রুত ও নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিলে দ্বিতীয় পর্বের কাজও এত দিনে অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে যেত। তাঁরা আরো মনে করেন, সরকার চাইলেই প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে।

এছাড়াও কক্সবাজার হতে ইনানীর মোহাম্মদ শফির বিল পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ভাঙনের কবল থেকে এটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিবছর বর্ষায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

No comments:

Post a Comment