Wednesday, June 06, 2012

টেকনাফে বালু ও পাথর তোলার হিড়িক

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কক্সবাজারের টেকনাফে আবাদি জমি ও সংরক্ষিত পাহাড়ি বন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এগুলো দিয়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এখান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অপসারণ, শামুক-ঝিনুক, প্রবাল-শৈবাল আহরণ ও বিক্রি। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে অবাধে পাথর ও বালু উত্তোলন করে চলেছেন।
জেলা বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, এভাবে বালু ও পাথর ওঠানোর ফলে ফসলি জমি ও পাহাড়ি বনাঞ্চল বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেন্ট মার্টিন, টেকনাফের শীলবনিয়াপাড়া, খানকারপাড়া, ডেইলপাড়া, কলেজপাড়া, লম্বরী, লেঁঙ্গুরবিল, রাজারছড়া, মিঠাপানিরছড়া, বাহারছড়ার শীলখালী, চৌকিদারপাড়া, জাহাজপুরা, বানিয়াপাড়া, মাঠপাড়া, উত্তর শীলখালী, শামলাপুর, মনখালী, মারিষবনিয়া, হ্নীলার লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, পানখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওঠানো হচ্ছে বালু ও বোল্ডার পাথর। প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে প্রকাশ্যে পরিবেশ ধ্বংসাত্মক এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ওই সব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমিতে ২০-২৫ জন পুরুষ মাটির নিচ থেকে পাথর আহরণের কাজ করছেন। প্রথমে তাঁরা মাটি সরিয়ে গর্ত খোঁড়েন। পাথর বের হলে লোহার রড দিয়ে তাতে সাত-আট ইঞ্চি দীর্ঘ সরু ছিদ্র করেন। ছিদ্র দিয়ে বারুদ ফেলে কেরোসিন ভেজানো সুতার একটা মাথা বারুদের সঙ্গে এবং অন্য মাথায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন বারুদ স্পর্শ করামাত্র বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে বিশাল বিশাল পাথর টুকরা হয়ে ছিটকে পড়ে। বিস্ফোরণের সময় ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা।
সৈয়দ হোসেন (৩৮), নবী হোসেন (৩২), খলিলুর রহমান (৩৫) ও আমির আহমদ (৩৫) নামের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরিতে পাথর উত্তোলন করছি। এই কাজ বৈধ, না অবৈধ—তা আমরা জানি না।’
টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আবাদি জমি থেকে পাথর ওঠানোর ফলে মাটির ওপরের অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
বাহারছড়ার শীলখালী বন বিভাগ রেঞ্জের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বালু ও পাথর উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এগুলো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিছুদিন আগেও বেশ কিছু পাথর জব্দ করা হয়েছে।
হোয়াইক্যং রেঞ্জের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে ২৫টির বেশি মামলা এবং প্রায় এক হাজার ৪০০ ঘনফুট বোল্ডার পাথর ও এ কাজে ব্যবহূত ২৮টি যান জব্দ করা হয়েছে।
জেলার (দক্ষিণ) সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে যেতে যেতেই উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুরো জেলায় লোকবল-সংকটের কারণে সঠিকভাবে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম নাজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment