Wednesday, June 06, 2012

মিয়ানমারে যাচ্ছে তেল আসছে ইয়াবা

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।

বিনিময়ে আসছে মরণ নেশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন বোতলজাত মাদকদ্রব্য। পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যসামগ্রী উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে পাচার হয়ে আসা বিশাল অঙ্কের চোরাই পণ্যের চালান অনায়াসে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যাচ্ছে।
ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মিয়ানমারে অপ্রতুল, পাশাপাশি দামও আকাশচুম্বি। তাই সীমান্তের একশ্রেণীর চোরাকারবারিসহ এলাকার চিহ্নিত কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মিয়ানমারে তেল পাচারের জোর দিয়েছে। এসব ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের নাম ভাঙিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিপত্র নিয়ে প্রতি সপ্তাহের শত শত ব্যারেল জ্বালানি ও ভোজ্যতেল গুদামজাত করে সুযোগ বুঝে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচার সংক্রান্ত তথ্যবহুল সংবাদ স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকাগুলোয় প্রচার হওয়ার সুবাদে সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠে। এ উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর প্রায় ৫০ ব্যারেল জ্বালানি তেল আটক করে। এ ছাড়া মরিচ্যা বিজিবির সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ২৫০ ব্যারেল জ্বালানি ও ভোজ্যতেল আটক করলেও এসব ব্যবসায়ী ইউএনও প্রদত্ত অনুমতির দোহাই দিয়ে ওই তেল ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি হ্নীলা বিজিবি সদস্যরা কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে হোয়াইক্যং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫৭০ লিটার ভোজ্য ও ৪৪০ লিটার জ্বালানি তেলসহ ২ জনকে আটক করে।
উপজেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মরিচ্যা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাজি নুরুল ইসলাম জ্বালানি তেল পাচারের ওপর গুরুত্বারোপের একপর্যায়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে চাহিদার সমপরিমাণ জ্বালানি তেলের অনুমতি শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে বলে ব্যক্ত করেন। উপস্থিত বালুখালী ও পালংখালী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার ইউএনওর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের নাম ভাঙিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি ও ভোজ্যতেল মিয়ানমারে পাচার করছে।
অপর দিকে মিয়ানমার সীমান্তের ৩টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত সব ইয়াবা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সড়কপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ উপজেলার কুতুপালংয়ে অবস্থিত রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার ইয়াবাসহ মিয়ানমার থেকে আসা বোতলজাত মাদকদ্রব্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ১২শ' ইয়াবাসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। ইয়াবা পাচার হয়ে আসার ঘটনা নিয়ে অভিভাবক মহল শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ূয়া ছাত্রসহ স্থানীয় যুব সমাজ অধিক লাভের আশায় ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। এ সময় উখিয়া পুলিশ যাত্রীবাহী গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রুবি বালা নামের এক মহিলার কাছ থেকে ৩৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। মরিচ্যা বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার নুরুল ইসলাম জানান, ঘন ঘন আটকের পর চোরাকারবারিরা পাচারের ধরন পাল্টে এবার বোরকা পরিহিত যুবতীদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করছে। সহকারী পুলিশ সুপার চত্রধর ত্রিপুরা জানান, বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ ইয়াবা উদ্ধারের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। এমনকি উপকূলের মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাতে ইয়াবা পাচার হতে না পারে সে ব্যাপারে ইনানি পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment