Sunday, September 25, 2011

চিনির দাম কমাচ্ছে না মিলগুলো by আবুল কাশেম

সন্ন দুর্গাপূজা ও ঈদুল আজহা পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই তেল-চিনির দাম বাড়তে দেবে না সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, ভোজ্য তেল ও চিনির মজুদ ও অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পর্যালোচনা করে মিলমালিকদের পরিষ্কারভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও গত বুধবারও বিভিন্ন কলমালিকরা ৬৪ টাকার নিচে মিলগেট থেকে চিনি বের করেননি।

এ অবস্থায় মিলমালিক ও পরিবেশকদের কারসাজি রুখতে চলমান মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারিভাবে টিসিবিও ৩০টি খোলা ট্রাকে ঈদ পর্যন্ত তেল ও চিনি বিক্রি করবে। এ ছাড়া পরিশোধিত চিনি আমদানিকারকরাও ইতিমধ্যে বিপুল চিনি আমদানি করেছেন। তাঁরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করেছেন, মিলমালিকদের চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রিতে আগ্রহী তাঁরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, চিনির দাম বাড়াতে মিলমালিকরা নানাভাবে তৎপরতা দেখালেও পরিশোধিত চিনি আমদানিকারকরা মিলমালিকদের চেয়ে অনেক কম দামে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আমাদের কাছে। ঢাকার মৌলভীবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মওলার নাম উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, মিলমালিকদের চেয়েও কম দামে সরকার যে পরিমাণ চাবে, সে পরিমাণ চিনি সরবরাহ করবেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ভোজ্য তেল ও চিনির দাম যে বাড়ানো হচ্ছে না, তা ব্যবসায়ীদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরও তাঁরা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে মনিটরিং টিম কঠোর ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে সরবরাহে সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে টিসিবিও তেল-চিনি নিয়ে মাঠে থাকবে।
মৌলভীবাজার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মুহূর্তে চিনির দাম বাড়ানো মানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই মিলমালিকরা ৬৪ টাকা আট পয়সা কেজি দরে মিলগেট থেকে চিনি বিক্রি করছেন। অথচ আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করেছেন। এসব চিনির বড় অংশ বন্দরের কাছাকাছি এসেছে। ৬৩ টাকা দরেই তাঁরা সব চিনি সরকারকে দিতে আগ্রহী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ওই তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হাবিব গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল মেঘনা, সিটি, আবদুল মোনেম গ্রুপের চিনির মিলগুলোয় চিনি আনতে যাওয়ার আগে ফোন করেছিলাম। তারা সবাই ৬৪ টাকা কেজি দরে দাম চেয়েছে। ফলে আমি কোনো চিনি আনিনি। টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্গাপূজা ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে টিসিবি অক্টোবর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় দিন থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০টি ট্রাকে ভোজ্য তেল ও চিনি বিক্রি করবে। টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনির মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপুল ভোজ্য তেলও আমাদের হাতে এসে পেঁৗছাচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনির সঙ্গে শুরুতে পাঁচ হাজার টন ভোজ্য তেল নিয়ে মাঠে নামবে টিসিবি। পরে সরকারের সিদ্ধান্ত ও বাজার চাহিদার নিরিখে ভোজ্য তেল ও চিনির পরিমাণ আরো বাড়ানো হতে পারে। টিসিবির ভোজ্য তেল ও চিনির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার মূল্যের চেয়ে বেশ কম দামেই এ দুটি পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ঈদ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি সরবরাহ করার ক্ষমতা টিসিবির রয়েছে। টিসিবির গুদামে তেলও আছে। তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া থেকে শিগগিরই ভোজ্য তেলের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছাচ্ছে। এর আগে অভ্যন্তরীণভাবে সিটি গ্রুপের কাছ থেকে চার হাজার টন, মেঘনা ও টিকে গ্রুপের কাছ থেকে তিন হাজার টন করে মোট ১০ হাজার টন ভোজ্য তেল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে মালয়েশিয়া থেকে দুই হাজার টন তেল আসায় এখন স্থানীয় মিলগুলো থেকে তিন হাজার টন তেল কিনছে টিসিবি।

No comments:

Post a Comment