Sunday, January 02, 2011

‘ক্রসফায়ার’ বন্ধ হয়নি, নতুন প্রবণতা ‘গুপ্তহত্যা’

দেশে ‘ক্রসফায়ার’ বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়নি। গত বছর এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘গুপ্তহত্যা’ এবং মানুষকে ‘নিখোঁজ’ করে দেওয়ার ঘটনা।

২০১০ সালের দেশের মানবাধিকারের চিত্র তুলে ধরে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১০ সালে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘এনকাউন্টারের’ নামে দেশে ১৩৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ক্রসফায়ারের’ পাশাপাশি দেশে নতুন প্রবণতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘নিখোঁজ’ বা ‘গুপ্তহত্যা’র ঘটনা। এটা আরও উদ্বেগজনক। অনেক ঘটনায়ই নিখোঁজ বা গুপ্তহত্যার পর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে তাদের স্বজনদের সাদা পোশাকে র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কার্যকর কোনো তদন্তের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ‘সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। এটা অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে নীতিগতভাবে স্পষ্ট অবস্থান পাচ্ছি না। র্যাব বলছে, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করছে এবং এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না।’
আসকের মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি শাখার সমন্বয়ক সাঈদ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আরও বক্তব্য দেন আসকের পরিচালক মোহাম্মদ নূর খান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর জুড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা, বেশ কজন মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু, ছিনতাইকারীদের হাতে গণমাধ্যমকর্মীসহ আরও কিছু হত্যাকাণ্ড, মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা ও এর ফলে গণপিটুনির (গণপিটুনিতে ১২৭ জন নিহত) ঘটনা ঘটেছে।
নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বেড়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন ২০ জন। গত বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৯৮ জন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এ ছাড়া বিরোধী দলের হরতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং বিরোধী দল কর্তৃক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা, দুর্নীতি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের অনেক মামলাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ হিসেবে প্রত্যাহার করার সমালোচনা করে আসক।
অধিকারের প্রতিবেদন: মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে গত বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ নজির হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা গত বছর অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে ১২৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে র্যাব ও পুলিশ অথবা র্যাব পুলিশের যৌথ বাহিনী কর্তৃক। অধিকার-এর তথ্যানুযায়ী, গত বছর গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
সীমান্তে ৭৪ বাংলাদেশিকে হত্যা: অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন এবং ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে ৭২ জন বিএসএফের হাতে আহত হয়েছে। একই সময়ে ৪৩ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে অপহূত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment