Thursday, December 09, 2010

জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশের জাহাজঃ নাবিকদের মুক্ত করার উদ্যোগ নিন

সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের জাহাজটি উদ্ধার ও জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। জলদস্যুরা জাহাজটিকে ইতিমধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুরে এমভি জাহান মণি নামের জাহাজটি যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ে, তখন সেটি ছিল ভারতের জলসীমায়। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে জাহাজটিকে জলদস্যুরা সহজে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে পারত না। বলা যায়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বাংলাদেশের এই জাহাজের ২৬ জন নাবিককে জলদস্যুরা জিম্মি করেছে। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। জাহাজ উদ্ধার এবং এই নাবিকদের নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনায় যত তৎপর ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল, সরকার দুঃখজনকভাবে তা দেখাতে পারেনি। জাহাজটি যখন ভারতীয় জলসীমায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে, তখন জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান ও জলদস্যুতা তদারকির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভারতীয় উপকূলরক্ষীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে কেন সহায়তা চাওয়া হলো না? বাংলাদেশ সরকার যদি তাৎক্ষণিকভাবে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাত, তাহলে নিশ্চয়ই তারা উপেক্ষা করতে পারত না। একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তার সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনে সাড়া দিয়ে অভিযানে নেমে পড়বে, এ প্রত্যাশা করা কঠিন। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, জলদস্যুরা জাহাজটিকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
এ ধরনের জলদস্যুতা নতুন ঘটনা নয় এবং বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশের জাহাজটি যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ল, তখনই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের তৎপর হওয়া প্রয়োজন ছিল। সেটা করা গেলে পরিস্থিতি হয়তো এতটা জটিল হয়ে পড়ত না। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদে বাংলাদেশের ২৬ জন নাবিক ও জাহাজটিকে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে যে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রক্ষা করছে বলেও সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সব ধরনের পথ খোলা রেখেই সরকারের অগ্রসর হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চাওয়া এবং তাদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের চেষ্টার পাশাপাশি জলদস্যু মোকাবিলা নিয়ে কাজ করে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করে যেতে হবে। কারণ মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২৬ জন জিম্মি নাবিককে নিরাপদে মুক্ত করা। আমরা আশা করব, সরকার আর বিলম্ব না করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।

No comments:

Post a Comment