Thursday, December 09, 2010

পুরাকীর্তি ধ্বংসের আশ্চর্য কীর্তিঃ মহাস্থানগড় বাঁচান, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

বানরের গলায় মুক্তার হার যেমন, বাংলাদেশের প্রত্নস্থানগুলোও যেন তেমন। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের সঙ্গে ‘অসভ্য’ আচরণ করছে বগুড়ার জেলা প্রশাসন। মহাস্থান মাজার নামে পরিচিত হজরত শাহ সুলতান মাহী সওয়ারের (রা.) মাজারসংলগ্ন স্থানে বড় একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে ভূমির ওপর এটি করা হচ্ছে, তা ‘প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক ভান্ডারটিকেও জেনেশুনে নষ্ট করা হচ্ছে। কীভাবে সুস্থ মস্তিষ্কে এ রকম একটি স্থানে ভবন নির্মাণের অভিলাষ কারও জাগতে পারে, তা সবার জন্য বিস্ময়ের হলেও এ ধরনের কাজ অহরহই করা হচ্ছে। কাজটি আইনত দণ্ডনীয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সেই দণ্ডই উপযুক্ত প্রাপ্য হওয়া উচিত।

ইতিহাসের পুন্ড্রনগরই আজকের মহাস্থানগড়। বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার কেন্দ্র ছিল এখানেই। পুন্ড্রনগরকে উপমহাদেশই কেবল নয়, বিশ্বের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান হিসেবে মান্য করা হয়। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য হলেও বগুড়ার জেলা প্রশাসন, স্থানীয় ক্ষমতাবান চক্র ও মহাস্থান মাজার কমিটি সময়ে সময়ে এর যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে। ১৯৯৫ সালে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে সরাসরি প্রত্নকীর্তিকে চাপা দিয়ে, নষ্ট করে মাজার সম্প্রসারণ করা হয়। অনেক প্রতিবাদ সত্ত্বেও বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসন অপকর্মটি চালিয়ে যায়। এই ক্ষতি এতই অপূরণীয় যে, যা গেল তা চিরকালের জন্যই গেল। এখন আবার সেই একই জায়গায় শুরু হয়েছে নতুন ভবনের আগ্রাসন। মাজারের পাশের উঁচু টিলাটি সম্পূর্ণভাবে ভবনের নিচে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হচ্ছে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই অপকর্মে সরাসরি জড়িত বলে গত সোমবারের প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের নেতৃত্বেই মাজার উন্নয়ন প্রকল্প কমিটি কাজটি চালাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকারি দলের নেতার এ রকম ভূমিকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার চিঠি দেওয়ার পরও তাঁরা বিরত হননি। অভিযোগ রয়েছে, ভবন নির্মাণের এ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আর্থিক সুবিধার জন্যই এমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আশার কথা যে, উচ্চ আদালত স্থানটির ক্ষতিসাধন অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকার লালবাগ কেল্লার জন্য ক্ষতিকর নির্মাণকাজের বিষয়ে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী কারণে ঘটনার কয়েক দিন পরও পুরাকীর্তির ধ্বংস বন্ধ করেনি, তার ব্যাখ্যাও প্রয়োজন।
পুরো পুন্ড্রনগর এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি মাটির নিচেই প্রাচীন নিদর্শন লুকিয়ে আছে। অথচ সেসব মাটির ওপর ঘরবাড়ি উঠছে, চাষাবাদ হচ্ছে। এমনকি প্রাচীন স্থাপনা থেকে ইট-পাথর খুলে নিয়ে ওই এলাকার অজস্র বাড়িঘরও বানানো হয়েছে। সহস্র বছর পুরোনো শিলা ব্যবহূত হয়েছে পুকুরে কাপড় ধোয়ার কাজে। কেবল মহাস্থানগড়ই নয়, সারা দেশের প্রত্নকীর্তিগুলো এ রকমভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বগুড়ার বিষয়েও সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ রকম অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে একদিকে আইনের বরখেলাপ হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ রকম অপকর্ম করতে তারা আরও উৎসাহিত হবে।

No comments:

Post a Comment