Thursday, December 09, 2010

নকল ওষুধ

বার পাওয়া গেল নকল ওষুধের কারখানা। নামিদামি ওষুধ কম্পানির জনপ্রিয় ওষুধগুলো নকল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র। মানুষের জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ, সেই ওষুধকেই মানুষের প্রাণঘাতী করে তোলা হচ্ছে। নকল ওষুধের কারখানা এর আগেও বহুবার আবিষ্কার হয়েছে। নকল প্যারাসিটামলসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে; কিন্তু বন্ধ হয়নি নকল ওষুধ তৈরির প্রবণতা। মানুষ হিসেবে কতটা নিচে নামলে মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে ব্যবসা করা যায়? নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবারিরা ধরা পড়ছে, আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন ভেজাল ওষুধের কারখানা, কিন্তু ভেজাল ওষুধ তৈরি তো বন্ধ হচ্ছে না।

বন্ধ হচ্ছে না এই প্রতারকচক্রের অবৈধ ব্যবসা। ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে। ওষুধ সেবন করে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরো বেশি করে অসুস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সম্ভবত নেই। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার কাজে অনেক ছোট কম্পানিও জড়িত আছে_এমন তথ্য পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি। এর আগে অনেক ট্যাবলেট-ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। ওষুধ কোনটা ভেজাল বা নকল, সেটা অনেক সময় খুচরা ওষুধ বিক্রেতারাও ধরতে পারেন না। ফলে সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে প্রতারিত হন ক্রেতা। যিনি সেই ওষুধ সেবন করেন, তাঁর শরীরে দেখা দেয় উল্টো প্রতিক্রিয়া। ১৯৯২ সালে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে তিন শতাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও আবার সেই ভেজালচক্র সক্রিয়। এবার ঢাকার ওষুধের বাজার হিসেবে খ্যাত মিটফোর্ড মার্কেটের পাশে বাবুবাজার এলাকায় ভেজাল ওষুধের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই কারখানায় অনেক নামি কম্পানির ওষুধ যেমন নকল করা হয়, তেমনি অনেক অখ্যাত কম্পানির ওষুধ নামি ওষুধ কম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। ভেজাল ওষুধের কাঁচামালও পাওয়া গেছে সেখানে। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
দেশে একসময় ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছিল। সরকারের সে অভিযান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভেজাল এখন সবখানেই ছড়িয়ে গেছে। এ থেকে যেন কোনোভাবেই মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তত জীবন রক্ষাকারী ওষুধে যেন ভেজাল না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেন জীবননাশের কারণ না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments:

Post a Comment