Thursday, May 31, 2012

কক্সবাজারে নোংরা পানির রমরমা বাণিজ্য

পর্যটন শহর কক্সবাজারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।

শহরে বে, দারুচিনি ও হিমছড়ি নামের তিনটি পানীয় জলের (ড্রিংকিং ওয়াটার) কম্পানি অবৈধভাবে পানি বাজারজাতকরণে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব কম্পানি দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনে শত শত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে জারের নোংরা পানি সরবরাহ করে আসছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দুটি কারখানায় এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও কারখানা সিলগালা করা হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা শহর জুড়ে অবৈধভাবে জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারে হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার, বে ড্রিংকিং ওয়াটার ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার নামের তিনটি কম্পানি জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বে ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানির বিএসটিআই লাইসেন্স নেই। তারা অবৈধভাবে বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অপরদিকে, হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানিটির বিএসটিআই লাইসেন্স থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গার অভাব ও সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের মাধ্যমে জারে পানি ভর্তি করাসহ নানা অনিয়মের কারণে কম্পানিটি লাইসেন্সের শর্তও ভঙ্গ করেছে। শহরের কয়েকটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে জারের মধ্যে পানি ভর্তি করা হয়। জারে ভর্তি করার পর পিকআপ ভ্যান এ করে শহরের বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোঁরা, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে দুই দফা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে পানির এসব কারখানায়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ ও নায়েরুজ্জামান অবৈধ পন্থায় নোংরা পানি বাজারজাত করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে দুই দফা জরিমানা আদায় করে। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব-৭ এর সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে আসছে তারা।
এ বিষয়ে 'বে ড্রিংকিং ওয়াটার' এর ম্যানেজার সরওয়ার জানান, বিএসটিআই এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পানি বাজারজাত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে পানি বাজারজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি আমাদের অপরাধ নয়-আমরা যোগাযোগ করলেও বিএসটিআই কর্মকর্তারা লাইসেন্স দিচ্ছেন না।'
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় 'পাহাড়িকা' নামক একটি ভবনের নিচতলায় 'হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার' এর নামে জারভর্তি করে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। 'হিমছড়ি' ব্র্যান্ডের এ জারের পানি বাজারজাত করতে শহরের প্রধান সড়কের তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় আল-মোস্তফা কর্পোরেশন নামের একটি দোকানও রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির নামে সাধারণ পানি জারে ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। 'পাহাড়িকা' ভবনের নিচতলায় জারে পানিভর্তির কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্রপাতি ও মান যাচাইয়ের জন্য কেমিস্ট এবং প্রয়োজনীয় কোনো ল্যাবরেটরি নেই। এমনকি কারখানার পরিবেশও নোংরা। রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের সাহায্যে জারে পানি ভর্তি করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে এ কারখানার বিরুদ্ধে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ওই কম্পানির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের আলিরজাঁহাল এলাকায় সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন 'গ্রিন প্যালেস' নামের ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে কারখানা স্থাপন করে 'দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার' নামে পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন না নিয়েই বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে মেসার্স মাজেদ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মাজেদ বলেন, 'আমরা দু বন্ধু মিলে সেবামূলক একটি ব্যবসায় নেমেছি। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তার কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাদের নির্দেশনামতো কারখানা তৈরি করা হচ্ছে।' এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত তিনমাস আগে পানির কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তারা নোটিশের কোনো জবাব দেননি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, 'শিগ্গিরই এসব পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।'

No comments:

Post a Comment