Thursday, May 31, 2012

মহেশখালীর সংরক্ষিত বনে ১০ হাজার অবৈধ বসতি

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এসব বসতিতে প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করছে।

সংরক্ষিত বনে এভাবে বসতি গড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব বসতি উচ্ছেদের ব্যাপারে বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে সংরক্ষিত বনে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে উপকূলীয় মাতারবাড়ি, ধলঘাট, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার লোকজন এসব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালামারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় লোকজন সংরক্ষিত বনে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। আর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলি এলাকায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
চালিয়াতলি এলাকার বাসিন্দারা জানান, বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন রাতে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। এ নিয়ে বনকর্মীদের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না। শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক যুগ ধরে এলাকার লোকজন সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করে আসছে। তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলা হলেও তারা সরছে না। তবে বনের ভেতরে নতুন করে বসতি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনকর্মীদের বাধার মুখে স্থানীয় লোকজন নতুন করে বসতি স্থাপন করতে পারছে না।
কালারমারছড়ার আঁধারঘোনা পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল ইসলাম, মনির হোসেন ও রহিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি বনভূমিতে কোনো রকম বসতঘর নির্মাণ করে তাঁরা বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। একই কথা বললেন শাপলাপুর ইউনিয়নের জেএম ঘাট পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল কাদের, ইকবাল হোসেন ও জয়নাল আবেদিন।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ১০ হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমিতে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করে লোকজন বসবাস করছে। ইতিমধ্যে শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী এলাকায় সংরক্ষিত পাহাড়ের বনভূমিতে বসবাসরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। তবে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য বনকর্মীরা চেষ্টা করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে লোকজন অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment