Wednesday, January 19, 2011

জাহাজ ভাঙা বন্ধ ১০ মাস-৩৮০টি স্টিল ও রি-রোলিং কারখানাও বন্ধ

নজিওর তৎপরতায় ১০ মাস ধরে ভাঙার জন্য পুরনো জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার ১০০টি ইয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে এখন জাহাজ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার লোহা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে রড ও স্টিল তৈরি করে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো।

কাঁচামাল না পাওয়ায় এ দুটি খাতের ৩৮০টি কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। বাকি কারখানাগুলোও কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে রায় বের করে নিয়েছে। এসব এনজিও জাহাজ ভাঙা শিল্প ও এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল রি-রোলিং মিল, স্টিল মিল, মোল্ডিং ওয়ার্কশপ, কেব্ল্ শিল্প, আবাসন শিল্পসহ প্রায় ৫০টি খাত ধ্বংস করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেলা নামের একটি এনজিও। এর সঙ্গে কিছু সরকারি আমলাও রয়েছে।’
কালের কণ্ঠকে জাফর আলম আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাহাজ ভাঙা শিল্প চালু রাখার পক্ষে, কিন্তু জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কারণ জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকলে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে রডের দাম বাড়লে প্রভাব পড়বে আবাসন ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের ওপর। লোহার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য খাতও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বিভিন্ন খাতের লাখ লাখ বেকার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসবেন।’
জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তুলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিরুদ্ধে বেলা হাইকোর্টে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বহনকারী জাহাজ আমদানি বন্ধ রাখার রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। সে নীতিমালা না হওয়ায় জাহাজ আমদানির জন্য কোনো ছাড়পত্র দিচ্ছে না অধিদপ্তর। এ কারণে গত বছরের মে মাস থেকে জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, পরিবেশসম্মতভাবেই জাহাজ ভাঙার কাজ করতে চান তারা। এরই মধ্যে এ খাতে মালিকরা ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শ্রমিকদের সংখ্যা ১০ লাখ। এ খাতের মালিকরা ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের জন্য ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী হোসাইন কালের কণ্ঠকে জানান, এনজিওর তৎপরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় রি-রোলিং মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। কাঁচামালের অভাবে এ খাতের ৩০০ কারখানার মধ্যে ১৮০টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। বছরে মাত্র দু-একটি বর্জ্যবাহী জাহাজ মধ্য সমুদ্রে বর্জ্য অপসারণের পর তা নিয়ে এনজিওগুলো হইচই শুরু করে। কিন্তু ইয়ার্ডে কখনো ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যবাহী জাহাজ আসেনি। তিনি বলেন, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে যে পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক নদীতে যাচ্ছে, জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে এর চারভাগের একভাগ দূষণও ঘটছে না।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার নামে হঠাৎ করে জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরাও চাই পরিবেশসম্মতভাবে এ শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে কয়েক বছর ধরে এ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’

No comments:

Post a Comment