Monday, December 13, 2010

ছাত্রদের উদ্বাস্তু দশাঃ দূরদর্শিতার অভাবই বড় সমস্যা

প্রথম আলো পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে গতকাল শনিবার, যা দেখে উদ্বাস্তু শিবির মনে হওয়াই স্বাভাবিক। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হলের। এর সঙ্গে ছাপা খবরটিতে ভুল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাই শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘উদ্বাস্তু নন, তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র’। খবরের শুরু হয়েছে এভাবে, ‘প্রত্যেকের হাতে খাবারের থালা। খোলা আকাশের নিচে রাখা কয়েকটি বড় হাঁড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। থালায় খাবার নিয়ে মাঠে বসেই চলছে তাঁদের খাওয়া।’ এক মাস ধরে এমন দুর্দশার মধ্যে ছাত্রদের খাওয়াদাওয়া করতে হচ্ছে। কারণ, একই সঙ্গে হলের মেস ও ক্যানটিনে সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজ নিশ্চয়ই করতে হবে, কিন্তু এমন কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া যেত না, যাতে ছাত্রদের দুর্ভোগ এড়ানো যেত? নিশ্চয় যেত। এ জন্য যা প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে দূরদর্শিতা। ঘাটতি সেখানেই।
প্রথমত, হলের মেস ও ক্যানটিন দুটি একসঙ্গে সংস্কারে হাত না দিয়ে পর্যায়ক্রমে করা যেত। তাতে ছাত্রদের আর যা-ই হোক খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খেতে হতো না। দ্বিতীয়ত, কখন সংস্কারকাজটি করতে হবে, সেটিও বড় বিবেচনা। সংস্কারকাজে এত দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, মাঝে ঈদের বন্ধের কারণে যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, কাজটি এ সময়ে শুরু না করলেই হতো। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে। তখন কাজ শুরু করলে বর্তমান পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই হলের ক্যানটিন খুলে দেওয়া হবে। যখন হলের ক্যানটিন খুলে দেওয়া হবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি শুরু হয়ে যাবে। ছাত্রদের এই উদ্বাস্তু পরিস্থিতি শিগগিরই কেটে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা যে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিতে চাই তা হলো, যেকোনো কাজ শুরুর আগে এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ভেবে দেখা উচিত। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার আগে যদি পূর্বাপর বিবেচনা করা হয়, তাহলে এ ধরনের সমস্যা খুব সহজেই এড়ানো যাবে। হলের প্রাধ্যক্ষ ভবিষ্যতে এ ধরনের সংস্কারকাজের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এই বোধোদয়কে আমরা স্বাগত জানাই।

No comments:

Post a Comment